Tuesday, July 26, 2011

********তাবিজ********* - রহস্য রোমাঞ্চ গল্প কিনবা সত্য কাহিনী //// পর্ব ১

তাবিজের নাম শুনেন নাই এমন ব্লগার হয়ত খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সবাই জানেন এই বিজ্ঞানের যুগে এই সব তাবিজ কবচের কোন মুল্য নাই। অনেক এ তো বিশ্বাস ই করেন না- বিশেষ করে যারা পরম ধার্মিক এবং নাস্তিক- আমার এই কথা গুলোকে সোজা উড়িয়ে দেবেন- বলবেন আমি একটা................

যাই হোক কথা না বাড়িয়ে শুরু করি। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো সেটাই বুঝতে পারছিনা। ঠিক আছে আমার দেখা প্রথম ঘটনা দিয়েই শুরু করি।
আমি তখন অনেক ছাত্র -মাত্র ক্লাস ২তে পড়ি। আমি জন্ম থেকে দেখে এসেছি আমার দাদু গ্রামে ডাক্তারি করেন। উনি ডাক্তার হিসেবে খুব জনপ্রিয়। এতই জনপ্রিয় যে উনার নামে আমাদের গ্রামের রাস্তা র নাম করন করা হবে হবে এমন একটা ভাব। উনি বেশী জনপ্রিয় ছিলেন উনার বিনা পয়সায় চিকিৎসার জন্য। আমার বাবা রা সাত বোন চার ভাই এর সংসার চলেনা- না খেয়ে থেকেছেন নিজেও তবুও যে গরীব তার থেকে একটা টাকা ও উনি নিতেন না। অনেক অনেক দূরে দূরে গিয়ে তিনি বিনে পয়সায় রুগি দেখে আসতেন। এমন ভাল মানুষের ও যে শত্রু থাকে সেটা সেই ছোট বেলায় জানতাম না।
আমার দাদুর ছোট ভাইয়ের বৌ- আমার দাদি সম্পর্কে হন- উনি দাদুকে একদম দেখতে পারতেন না। অবশ্য সবসময় তা মনে মনে- উপরে উপরে উনি সব সময় ভাল ব্যাবহার দেখাতেন।দাদুকে নিয়ে যখন রাস্তা নামকরন করার চিন্তা ভাবনা করছিলেন এলাকার লোকজন- তখন আমার সেই দাদি আমার দাদুকে তাবিজ করেন।

আমরা ব্যাপারটা জানতাম না।দাদুকে হটাত করে দেশ থেকে শহরে আনা হল- বাবা- কাকারা উনাকে নিয়ে অনেক দৌড়া দৌড়ি করলেন- কন ফল হলনা- উনার অসুখ ভাল হয়না। অসুখ টা ছিল উনার সারা শরীর জ্বালা করতে আর পিপড়া কামড়াতো। আমরা পিপড়া তাড়াবার জন্য সারা ঘরে কর্পূর দিয়ে রাখতাম। ঘরে কোন পিপড়া নাই - তবুও উনি সারাদিন চিৎকার করে যেতেন যে উনাকে পিপড়া কামড়াচ্ছে। শেষে নিরুপায় হয়ে এক স্বনাম ধন্য ডাক্তার উনাকে বিদেশে নিয়ে যেতে বললেন।

বিদেশ নেবার ক্ষমতা তো বাবাদের ছিলনা- উনাকে নিয়ে যাওয়া হল ইন্ডিয়া। সেখানে দিল্লি আর মাড্রাজ এর অনেক অনেক ডাক্তার দেখানো হল- কেঊ ঊনার রোগটাই ধরতে পারছিলেন না। এদিকে ঊনাকে দেখাশুনা করতে করতে আর মাদ্রাজি খাবার খেয়ে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষে উনাকে দেশে নিয়ে আসা হয়।

উনার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কোন ভাবেই কিছু করা যাচ্ছেনা। এর মাঝে উনার একটা স্ট্রোকের মত হয়- আর ঊনার বাম হাত অবশ হয়ে যায়। বিছানা থেকে ঊঠতেই পারতেন না। এমন সময় এক আত্মীয় বলে এক ওঝার কথা- শুনে বাবা- কাকা সবাই না করে দেয়।

কিন্তু আরও এক সপ্তাহ পর দাদুর অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়- শরীরে কোন দাগ নাই- তবুও দাদু চিৎকার করছেন-দেখে আর না পেরে বাবা সেই ওঝাকে ডাকেন।

উনি আসলেন- খুব সাধারন বেশ ভুষা উনার- কাছ থেকে দেখিনি আমি লুকিয়ে ছিলাম ভয়ে। উনি দাদুকে দেখলেন। তারপর আমার মাকে বললেন বাথরুমের একটা বদনা তে পানি নিয়ে আসতে- মা ও নিয়ে এলেন- উনি সবাইকে কি এক মন্ত্র পড়ে পানিতে ফু দিয়ে দেখালেন- আর বললেন- খুব পরিচিত কেউ একজন দাদুর চুল বেধে একটা পুতুলে মন্ত্র পড়ে সেটার গায়ে অনেক গুলো সূচ ফুটিয়ে দিয়ে আমাদের পাশের আম গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে। গাছে বাতাসে সেই পুতুল দোলে- আর আমার দাদু চিল্লান। এর মাঝে একটা কাক সেই পুতুলের একটা হাতে ঠোকর মেরেছে- বলে দাদুর এক হাত প্রায় অচল হয়ে গেছে। এটা আর ভাল হবেনা। তবে পুতুলটা খুলে আনতে হবে- না হলে দাদু মারা যাবেন এভাবেই। তারপর যে এই কাজ করেছে তাঁর নামএর প্রথম অক্ষর দেখালেন।আমরা ও দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে নিলাম। কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না। আমাদের পরিবারের সবাই শিক্ষিত- আমরা এই কথা গ্রামে বললে আমাদের দুর্নাম হবে ভেবে বাবা কাঊকে জানালেন না। পরদিন সেই পুতুলটা খুলে নিয়ে এলেন আমাদের গ্রাম থেকে।

তারপর দিন দাদু র অবস্থা খুব খারাপ। উনাকে অক্সিজেন দেয়া হয়েছে। সেন্স ছিলনা। এমন অবস্থায় সেই ওঝা একটা একটা করে পুতুলের গা থেকে সূচ খুলেছে। তারপর সেটার শরীরে পেঁচানো চুল্টা খুলে সেটাকে ছিড়ে ফেলেছে- সব আমাদের চোখের সামনে। যদি ও আমি তখন অনেক ছোট- বাবা আমাকে দেখতে দিতে চাননি- কিন্তু আমি তো দেখবোই- এই গো ধরে বসে ছিলাম।পড়ে দেখেছিলাম। অনেক ভয় পেয়েছিলাম যখন সেই পুতুলের ভেতর থেকে রক্ত পড়তে দেখেছিলাম।

পরদিন থেকে দাদু সুস্থ হয়ে ওঠেন। আমি দাদুকে ১২ দিনের মাথায় আবার ডাক্তারি করতে যেতে দেখেছি। যদিও দাঙ্গার কারনে উনি গ্রামে যেতে পারেন নি- এবং উনার নামে রাস্তা হওয়া টা দাঙ্গার কারনে প্রায় ঢাকা পড়ে যায়- এবং উনার এক হাত অবশ হয়ে গিয়েছিল- কিন্তু দাদুকে রোগী দেখা থেকে কেঊ দমাতে পারেনি।

এরপর কেটে গেছে অনেক দিন। দাদু মারা গেছেন- কিন্তু সেই স্মৃতি আমি ভুলিনি। কখনো ভুলব না। এটাকে কি বলবেন আপনারা?

তাবিজ??
নাকি অপবিজ্ঞান??
নাকি শয়তানি ক্ষমতা??

জানিনা কি- এটা দেখেও কিন্তু আমার বিশ্বাসে তাবিজ জিনিসটা গেথে যায়নি- গেথেছে অনেক অনেক পড়ে- সেটা আরেকটা কাহিনী......

No comments:

Post a Comment