Friday, February 1, 2013

একটি নতুন কবিতার জন্য

একটি নতুন কবিতার জন্য


একটি নতুন কবিতার জন্য
শিশিরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি শিরিষ যন্ত্রনা
বাতাসে ভর করে চোখের নিবিড় করেছি
মুক্ত দুটি হাত
মুছে নিয়েছি শয্যা যন্ত্রনা।
শুধু মাত্র একটি নতুন কবিতার জন্য
আমি হারিয়ে যেতে চেয়েছি সমতট ভুমি থেকে
বঙ্গের প্রান্তর চিড়ে বেরিয়ে আসা চিরনিখিল
এই আমি
আজ হারাতে চলেছি তোমাদের হরিকেল শহরে।।

Tuesday, January 29, 2013

নীল বিষ ও আয়না

নীল বিষ ও আয়না


বিষ নাকি নীল ছিলো এক কালে
দিগম্বর ঈশ্বরের কন্ঠে নীলাকার হয়ে জমে ছিল
অনেক দিন পর- শুনেছিলাম
ঈশ্বরের ও নাকি কষ্ট হয় বিষ পানে
আমি রীতিমত পান করে চলেছি তোমার কান্না
কই আমার তো কিছু হলোনা!
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে পান করে নিয়েছিলাম
আজ ও আমি বয়ে চলেছি বিষ বেদনা
কই- আমার কন্ঠতো বিষে নীল হলোনা
বিষ নাকি নীল ছিল এক কালে
এখনকার রং কি সেটা নিজের মাঝে দেখা যায়না
আয়না ছাড়া।
আচ্ছা ঈশ্বরের সামনে কি আয়না ছিলো?

Wednesday, January 23, 2013

ক্যানভাস ও ঈশ্বর

ক্যানভাস থেকে ডাস্টার
সবখানে ঈশ্বরের লীলাখেলা
মেয়ে তোমার আঁচল নিয়ে খেলা করতে থাকা পাখি হবো  
তরুন হবো- সংগম সংক্রান্তিতে
চোখ দিয়ে আঁকবো জড়ায়ুর ক্লান্তি
ডাস্টার দিয়ে মুছে নেবো ভালোবাসা
ঈশ্বরের মত দেখিয়ে দেব
প্রতিবার মৈথুনে আমি আঠারো লক্ষ দুঃখ জন্ম দিতে পারি।।

Tuesday, July 3, 2012

ব্যাক্তিগত

আমার কান্না তোমার কাছে ব্যাক্তিগত হয়ে গিয়েছিল পরশু দিনের ছুটিতে
এখন কাটঠোকরা ও জানে ব্যাক্তিগত সময়ে ঠুক ঠুক করা ভুল হতে পারে
শুধু জানালার ফাঁকে থেকে ব্যাক্তিগত ডাকে ডেকে চলে চড়ুই ছানা
শুধুই বিকেল বেলার আঁচ টুকু ব্যাক্তিগত থাকেনা কোন ভাবেই।

রোদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বালিকার হাতের মুঠো দিয়ে চুইয়ে পড়ে খনিকের প্রেম
ব্যাক্তিগত সময় ব্যাক্তি অতিক্রম করে সময় শেষের আগেই
শুধু তোমার কাছে আমার কান্না নিতান্তই ব্যাক্তিগত হয়ে থেকে যায় চায়ের কাপে
টিস্যু প্যাপারের ভাঁজ থেকে দুটো টিস্যু ও ব্যাক্তিগত হয়ে যায় নিতান্ত অনিচ্ছায়।।

Sunday, June 24, 2012

যিশুর কষ্ট

বুকের ভেতর ক্রুশ একে চলা পাথুরে মাথাল কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে দিতে বলতে ইচ্ছে করে
 
হে যিশু- 
তোমার কষ্ট কি আমার চাইতে বিশেষ কিছু বেশি ছিল? নাকি মাথায় কাটার পাগড়ি পড়িনি বলে আমাকে এখনো কষ্ট দিয়ে চলেছ?
এই নাও হাতুড়ি-পেরেক- এই নাও- আমাকে ঠুকে দাও দাঁড় কাকের কষ্ট-বিন্ধ্যা পাহাড়ের পাহাড়ী ঝড়নার রক্তপাত বয়ে যেতে দাও। আমি তোমার মত উদাও হবোনা মরন গুহা থেকে। কষ্ট চেপে বসে থাকব যতক্ষন মৃত্যু না আসে আপন করে।।

Tuesday, May 29, 2012

আমি স্বেচ্ছাচারী

আমি স্বেচ্ছাচারী
সকালের সূর্যের মত ফালাফালা করে দিয়ে প্রবেশ করি সকল মনের অন্তর গহীনে
যেখান থেকে নিভে যায় শেষ সাঁঝের প্রদীপ- এবং জ্বলে ওঠে অপবিত্র কালচে রং
আমার জটায় নেই কোন আগুন-তবুও জানি এই আগুনে পুড়িয়ে দিতে পারি
দিতে পারি সকল বুনোহাসের পায়ের ছাপকে অঙ্গার করে দিতে-
শুকনো পাতার নুপুরের ধ্বনি মুছে দিয়ে নেভাতে পারি একরাশ বটশাখার দুঃখ
কারন-আমি স্বেচ্ছাচারী
চুরমার করে দিতে পারি তোমার সকল অহংকার-চুরমার অন্ধকার ভেঙ্গে ঢেলে দিতে
পারি আমার সকল অশ্রু ক্ষোভ-
লুকিয়ে থাকা আরশোলাদের যেভাবে বের করে আনে ঠিক সেভাবে আমি তোমাকে-তোমাদের
শুধু বের করে আনব প্রখর সত্যের মুখোমুখি-
কারন আমি স্বেচ্ছাচারী।।

Wednesday, May 23, 2012

যৌন কান্না

সঙ্গম সংক্রান্তিতে যে নারী পুরুষের চিবুক গিলেছিল
আজ তার হাতে অন্য পুরুষের আস্তিন
প্রচন্ড ক্ষুব্ধতায় আসীন যে জীবন বালুচর হয়েছিল যৌনতায়
তাকে ভুলে থাকার অস্থিরতা এনে দেয় অন্য কোন দেহ

দেহ নাকি মাংসের স্তুপ? স্তন নাকি চামড়ার ফরাসী আস্তিন?
যে দেহে চুমু খাওয়া যায় যৌনতা ভুলে থাকার জন্য
সেই দেহ প্লাস্টিক নাকি সিলিকনের তা কোন বাঁধ মানেনা মনে।

চারিদিকে এখন শুধুই সঙ্গম সংক্রান্তি
নারী পুরুষের অদ্ভুত আদীম আদুরে লীলাকীর্তন।

Wednesday, May 2, 2012

চোখ ও ঘেন্না কাহিনী

তোমার চোখের কাজলে এখন লুকিয়ে থাকে শয্যা যন্ত্রণা
কালো কালো চোখের কাজলের ওজন কান্না থেকে ভারী হয় যখন
তখন তুমি লজ্জা পেয়ে মুখ লুকাও সেই চাদরে
যাকে তুমি আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিলে সহবাস কালে খড়কুটোর মত

মুঠো মুঠো বৃষ্টি ঝড়েছিল বলে টের পায়নি কেউ চোখের জলকে
শুধু ফুলকে ফুল ভেবে উঠিয়ে দিয়েছিলে ট্রেন স্টেশনে
ফুল চলে যাবে- বৃষ্টি চলে যাবে- চলে যাবে যৌবন তোমার
শুধু থেকে যাবে ক্লান্ত দেহের এপিটাফ-যেখানে একদিন আবার চুমু খেলা করতো।
 রান্না ঘরে পড়ে থাকা খাবারের খোসা দেখে কি মনে পড়ে একদিন
তুমি বাড়িয়ে দিয়েছিলে প্রেম পত্র
আমি সেই প্রেমের জানু থেকে জঙ্ঘা অতিক্রম করেছি কাম যন্ত্রনায়
এতকাল জেনেছিলে ভালবাসি- আজ জেনে নাও প্রচন্ড ঘেন্না করি তোমায়।
পাশাপাশি দুটো ডিম যদি সমান দূরত্বে না থাকে
তবে যেভাবে ভেঙ্গে যায় ডিমের খোসা
সেভাবে ভেঙ্গে গেছে মনের সকল ইচ্ছে দেয়াল
এখন এখানে শুধু ঘেন্না খেলা করে- খেলা করে রোদ বৃষ্টী-সাথে শিলা ঝড় তোমার জন্য

Saturday, March 31, 2012

নর্তকী //





উর্বশী তোমার হলদে নাভীতে আজ কাম লুটেছে
নর্তকীর ঝুমুরের ছন্দ
নাচো নাচো তুমি - নাচো আমার সাথে
আমি নটরাজ হয়ে তিন চোখ মেলে তোমাকে ই শুধু দেখব
আর জ্বলবে একের পর এক পুরুষ্ট চিবুক তোমার
উন্মত্ত পশুর মত যেভাবে মেনকা আমাকে বরন করেছিল
উর্বশী আমাকে তেত্রিশ কোটি আলোকবর্ষ দূর থেকে কাছে এসে
আপন করে নাও।
একি ? একোন পাশা নিয়ে এলে তুমি ?
নাচো তুমি - আমি তোমার ভগাঙ্কুর থেকে এনে দেব
কোটি কোটি স্বর্ণ মুদ্রা
উর্বশী তুমি আমার সামনে মেনকার মত নাচো
সেই নাচ যেই নাচ নেচেছিল উলঙ্গ ঈশ্বর
সেই নাচ নাচো তুমি
আমাকে অসাড় করে আমার বুকের উপর নাচো তুমি
হে উর্বশী ।
নাহ- আমি কোন পাশা খেলাতে নেই
আমি নেই কোন রংমহলে
আমি শুধুই মৃত্যুতে হোলি খেলব তোমার সাথে
হে কিন্নরী
রুয়ে দেয়া বুননে তুমি আমাকে করে তোল শীতল ধানের ক্ষেত
সেখানে বুনে দাও গান ও মাতাহীন কবিতাদের
শুধু এই বুকে- শুধু এই বুকে নেচে যাও তুমি
আমাকে আপন করে নাও
তোমার পদতলে
শুদুই নাচো তুমি হে অপ্সরা
অনেক সাধনা করে তোমার নীল নাভি দেখেছি
সেখানে দেখেছি কামনার গাঢ় তামাটে রং
আমাকে আপন করে সেই রং মাখিয়ে দাও তুমি।।

Friday, March 30, 2012

আমাকে কেন জোছনা দেখালি

খুব ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে তোমার হাতে হাত রেখে
দূর আকাশে চলে যাই
দিগন্তের ওপারে- অনেক দূরে
যেখানে পাখিদের ডাক শোনাযাবে সূক্ষ্ম পাতার ধুয়োতোলা স্পন্দনের মত
কিন্তু আমি পারিনা- পারিনা- কারন তুমি আমার নও
... তুমি আমার নও- ভুলে যাই বারেবার
ভুলে যাই বৃষ্টির ফোটার মত তুমি আমার নও
ভুলে যাই জল থৈ থৈ বর্ষা বেলায় তুমি আমার পাশে নেই
ভুলে যাই বসন্তের বাসন্তী আবেগে তুমি নেই - তুমি নেই - তুমি নেই

কেন যেন খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে সন্ধ্যে বেলা
কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করেনা
ধুয়ো তোলা চায়ের কাপে কেউ আমাকে
এনে দেয়না এক পেয়ালা নিখাদ প্রেম
কেউ আমাকে একবার কানে কানে বলে দেয়না -"ভালবাসি"
মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে নিজেকেই শেষ করে দেই
ক্ষনিক পরেই মনে পড়ে তোমার মুখের ছবি
তখন প্রচন্ড কষ্টে আমি মরে যাবার কথা ও ভুলে যাই
ভুলে যাই আমি আমাতে নেই
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে
"আমাকে কেন জোছনা দেখালি?"
"আমাকে কেন জোছনা দেখালি?"
"আমাকে কেন জোছনা দেখালি?"

courtesy: "আমাকে কেন জোছনা দেখালি?" ব্যান্ড চাইম
"তুমি আমার নও"- ব্যান্ড সোলস

Monday, March 12, 2012

শব্দ পদ্য

বাদ গেল সব শব্দ
শুধু তোমায় নিয়ে আমার ছন্দবদ্ধতা
ছিড়ে গেল সব কাব্য
এক শঙ্খচিলের বুকের নিস্তব্ধতা

এই স্তব্ধতার কারন তুমি ছিলে
শুধু পাতার ঝড়ার মাঝের নিরবতা

এই কান্নার কারন তুমি ছিলে
শুধু জলের অভাবে কান্নার অক্ষমতা
...
থেমে যাওয়া কান্নার বুকে আমি ক্যানভাস আঁকি
শব্দের গ্রন্থি খুঁজে শব্দ বাজ দের দেয়া ফাঁকি
সময়ের শৃংখল ছিড়ে চলে যেতে চাই
ভাসাব ভেবে এই কান্নায় কষ্ট মাখাই

থেমে গেল সব কান্না
শুধু তোমায় ভেবে কবিতা লেখা আর না
মুছে ফেলা সব ক্লান্তি
মনে পড়ে যাওয়া নরম মুখের হাসি কান্না

বাদ গেল শব শব্দ।।

Saturday, March 10, 2012

শত্রু

সবাই কবিতা লিখছে নিজের মত করে
আর আমি আমার ভেতর ছয়জন শত্রু নিয়ে যুদ্ধ করি
আমার হাতে অস্ত্র থাকেনা পড়ে যায় বার বার
আমি সেই পরাজয়ে হেসে হেসে উঠি
তারপর নিজের ভেতরের কামনা জেগে ওঠে
আমাকে টুকরো করে ভেতর থেকে বের করে অন্ধ ক্রোধ
লোভ আর মোহ ছিড়ে ছিড়ে খেতে থাকে আমার হৃদয়
মদের নেশায় মাৎসর্য আমার কাছে স্বর্গীয় মনে হয়
কালো থেকে খয়েরী রং এ মেতে ওঠে আমার আত্মা
দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য আমি বার বার এই খেলায় মেতে থাকি
বার বার আমি নিজেকে শুদ্ধ করি
এবং পরাজিত হই।।

চিঠি

আমাকে কেউ চিঠি দেয়না
সেই কবে থেকে আমি চিঠি পাবার জন্য অপেক্ষা করছি গাছ তলায় বসে বসে
একদিন পিয়ন এসে দিয়েছিল সাদা খামের স্বচ্ছ চিঠি
আমি আকুল আগ্রহে সেই চিঠি থেকে বের করে আনলাম অন্য কারো পত্র
সেটা আমার জন্য ছিলনা- ভুল করে চলে এসেছিল আমার কাছে
একদিন এসেছিল আমার বাড়ি ছাড়ার নোটিশ
ভেবেছিলেম ভালবেসে তুমি আমাকে চিঠি দিয়েছ
হয়ত মনে পড়েছে আমাকে তোমার
আমাকে দিয়েছিল একরাশ দুঃখ
আমাকে এই ঠিকানা ছেড়ে যেতে হবে
তোমার চিঠি হয়ত আর আসবেনা আমার কাছে
হয়ত আসবে- কিন্তু আমাকে পাবেনা খুঁজে।।

প্রেম ও কাব্য

দাঁড়াও - এইখানে দাঁড়াও - এইখানে
আমার ঠিক সমান চিবুকে তাকিয়ে থাকা ইচ্ছেদের মাঝে খেলা করা পোকামাকড়ের মত
আমাকে লালন করে দাও ইচ্ছে সংগীতে- কিংবা সত্য আদুরে দাপটে -শুধু এই খানে
ঠোঁটে ভালবাসার লিপ্সা নিয়ে তাকিয়ে থাকা ভাদ্র মাসের চিলের মত চুষে খাও নিদারুন ইচ্ছেদের
যেমন করে খেতে চেয়েছিলে সেই অজানা বিষফল- ঠিক সেই ভাবে
সেখানে চিল উড়ে যায়- ভ্রান্ত দাওয়ায়- কিংবা অতিন্দ্রিয় ইচ্ছে মুকুলে উড়ে উড়ে যায় ইচ্ছে পোকা
সেখানে ছিলনা কোন বসন্তের একঘেয়ে কোকিল- ডেকে চলা ঝি ঝি পোকা
শুধু ছিল একমাসের মাসিক বেদনা- তুমি ছিড়ে ফেলো- ছিড়ে ফেলো তাদের- রাঙ্গিয়ে দাও
টেনে টেনে ছিড়ো- শুধু ছুড়ে ফেলার আগে একবার জানিও- কোথায় যাচ্ছে ইচ্ছে পোকারা
কিভাবে থাকছে কামনা বিলাস- শুধু আমাকে শুদ্ধ করো- শুদ্ধ তম চুমু ভঙ্গিতে- সংগীতে
যেভাবে শুদ্ধ হয়েছিল যিশু এক কালে- ঠিক সেভাবে আমাকে পান করো- ঠিক সেভাবে আমাকে
ছেদন করো-নিরলিপ্ত ভাবে- নিকৃষ্ট লোভেদের সত্ত্বাকে জাগাও- ফেলে দাও ঠিক যেভাবে
একদিন আমাকে বিছানা থেকে টেনে তুলেছিলে আটার চাকতি বানাবে বলে।
একদিন বুকের জমিনে ছিল মেঘ- সেখানে বৃষ্টি হয়েছিল কাম বাসনা বিস্তৃত করতে
তুমি হাত বুলিয়ে দিয়ে আমাকে আপন করে নিয়ে যাবে বলে সেখানে আমি আঙ্গুর বুনেছি
দেখো- এইখানে- এইখানে দেখো
ইচ্ছেগুলো তোমার চোখের চারপাশে খেলা করে- অপেক্ষা করে কখন তুমি নিজ থেকে এসে দাঁড়াবে
খুলে দেবে দুই হাত- আমার চারপাশে- নাগ পাশ হয়ে বেঁধে দেবে বিমূর্ত ইচ্ছায়
দেখো- এইখানে আমার ঠোঁটে জমেছে মৃত কোষের জন্মচিহ্ন- সেখানে নেই কোন কনক্রিট কাম
শুধু একবার ছুঁয়ে দেখো- কিভাবে আমি তোমার মাঝে বুনন করে দেব অতৃপ্ত ভালবাসা-
শুধু একবার ছুলেই আমি তোমার জন্য এনে দেব এক ফাগুনের আগুন জ্বালা ভালবাসা
এইখানে -শুধু এইখানে আমার ঠোঁটে।।

জোছনার গান

আজ জোছনায় ডুবেছে শহর
চারিদিকে জমাট আলোক
চেয়েছলাম পালিয়ে যাব
ফিরবোনা নিষ্টুর শহরে
পালাতে গিয়ে দেখি
আজ জোছনায় ডুবেছে শহর

চাঁদের আলো নিষ্টুর লাগে আজ

পুড়ে পুড়ে যায় নীলচে মোহনা আমার
আকাশের বুকে ঝুলে থাকে অন্ধ কালো চাঁদ
চাইনি আমি চেয়েছিলাম এক মিষ্টি অমাবস্যা
সে অমানিশা আসেনি আজ
যেই আমি পালাব ভেবেছি
সেই দেখি জোছনা অপার

এ শহরে ঠাই হয় না ঘড় হারা বালকের আজ
শুধু খুঁজে পাই কামনার ছাই
এই জোছনা চাইনিকো আমি
আমি শুধু নিরেট অন্ধকার চাই

এই ঘন আলোকে পুড়ে যায় মন
এই পোড়া মন চলে যেতে চায়
পালাতে পারিনা এ শহরের পলাতক চাঁদ থেকে
পালাতে গিয়ে দেখি
জোছনায় ডুবেছে শহর।।

রাস্তা/

রাস্তা/

রাস্তাগুলো সব গিয়ে মিশছে রাস্তার পেটে
হাত মাথা বুক কিছু ছিলোনা তাতে
হারিয়ে যাওয়া সব মুখ মানুষের কথা বলে

সেই কথা গুলো কাগজের পরতে মিশে হয়ে যায় গান
সময় গেলেই সব কাগজ হয়ে যায় ম্লান
তবু একদিন ইতিহাস সব গিলে ফেলে
সে ইতিহাস পড়ে কেমন করে ভাবে
অস্থির মানুষের দল ।

সেই রাস্তায় দেখো কতযে মানুষ হেটে চলে
নিয়নের আলোতে রাস্তার কালো কিছুটা বাড়ে
সে কালোতে হেটে হেটে শরীর বিকায় যে মেয়ে
মুখোশ পড়া মানুষেরা শুধু থাকে তার দিকে চেয়ে
কেউ তাকে নিয়ে যায় এক রাতের জন্য
এক রাতে সব ভীত কাপুরুষ হয় বন্য
সেই রক্তের ধারাপাত ফ্লাস হয় কমোডে
চোখের জলে ধুয়ে যায় রাতের সকল পাপ

তারপর সবাই পথ ভুলে নেমে আসে রাস্তায়
রাস্তায় হেটে হেটে সবাই রাস্তা খুঁজে যায় ।

সেই রাস্তায় একদিন কেউ মরে পড়ে থাকে
জীবিত মানুষেরা সেই মানুষকে মৃত বলে
মরা মানুষের চোখ খোলা দেখেনা কিছু
কনক্রিট শহরে কেউ ফেরেনা পিছু
একদিন সেখানে বয়ে চলে মানুষের নদী
থেমে থাকেনা থামলেই মৃত্যু হয় যদি
তবু ও মানুষ গুলো মরে যায় হটাত করে
পড়ে থাকে কোন এক ব্যাস্ত রাস্তার মোড়ে

সবাই ক্ষনিকের জন্য চুক চুক করে
তারপর ভুলে যায় সেই দুঃখের গান
তারপর সবাই রাস্তায় নেমে আসে
সেই থেকে রাস্তাকে সবাই ভালবাসে
তবু রাস্তা কাউকে মনে রাখেনাকো
ভুলে যায় সবাই চলে গেলে রাস্তার মোড়।

রাস্তায় তারপর এসে মিশে যায় রাস্তা
রাস্তার পেটে এসে মিশে যায় সব রাস্তা।।

Thursday, March 8, 2012

অস্তিত্ব

তোমার অস্তিত্ব ডুবে যাচ্ছে বুকের ভেতর
যে জীবনে তুমি ছিলে সেখানে শুধু ধুধু প্রান্তর
আমি সেখান থেকে বার বার হারিয়ে
এখন বিসর্জন দিলাম তোমার চিঠি
কেউ কি আছে জেগে- আমাকে জাগিয়ে দেবে
সকাল হবার পর
আমি ভোর থেকে খুঁজে বেড়াব
তোমার ফেলে যাওয়া মধ্যমা
ফুটপাতে থাকবেনা শুধু লাল নীল গাড়ি
সাদাকালো আর নীল নীল সাদা
এই সময়ে কষ্টের আড়ি
দেবেকি আমাকে আবার ?
কেউ কি আছো - আমাকে ঢেলে দেবে
লাল নীল তরলে ডোবা কষ্ট ভুলে যাওয়া গ্লাসে
যেখানে গেলে ভুলে থাকা যায় কষ্টের সময়
তোমার চুলের খোপা
লাল টিপের আদর .

শেষ কাব্য

নষ্ট হবার জন্য আমি উড়ে গেলাম নীল জোছনার বুকে
আমাকে কেউ পাবেনা খুঁজে তোমাদের এই হরিকেল শহরে

পেছনে চাঁদ কে রেখে হেটে চলি নীলচে বঙ্গ মেঠো পথে
সেখানে চেনা মানুষ ছিলনা কোন- ছিল শুধু এক পথের কাব্য
আমি সেই কাব্য বুকে চেপে চিনতে চেয়েছি মগধের নারী
সে নারীর কপিল আঁচলে গিট বাঁধা ছিল সমতট ভালবাসা

শুধু সেই ভালবাসা পেতে- আমি ছুটে চলি এই হরিকেল শহর ছেড়ে
আমাকে খুঁজে পাবেনা কোন হস্তগত রাতের নিবিষের মাঝে

আমি উড়ে গেলাম এই তটহীন পাংশু রাতে
কে জানে কোন আঁধারের ভালবাসায় আমি নষ্ট হব
কে জানে কোন পাহাড়ের বুকে আমার বসত হবে

শুধু হাত নেড়ে ভালবাসা পেতে-শুধু রাত গেলে ভোরের আবেগ পেতে আমি
চলে গেলাম তোমাদের এই কামরূপ ছেড়ে- রুপের মসলা যেখানে ছিল অবগত।

Tuesday, March 6, 2012

///ইচ্ছে পোকা////

দাঁড়াও - এইখানে দাঁড়াও - এইখানে
আমার ঠিক সমান চিবুকে তাকিয়ে থাকা ইচ্ছেদের মাঝে খেলা করা পোকামাকড়ের মত
আমাকে লালন করে দাও ইচ্ছে সংগীতে- কিংবা সত্য আদুরে দাপটে -শুধু এই খানে
ঠোঁটে ভালবাসার লিপ্সা নিয়ে তাকিয়ে থাকা ভাদ্র মাসের চিলের মত চুষে খাও নিদারুন ইচ্ছেদের
যেমন করে খেতে চেয়েছিলে সেই অজানা বিষফল- ঠিক সেই ভাবে
সেখানে চিল উড়ে যায়- ভ্রান্ত দাওয়ায়- কিংবা অতিন্দ্রিয় ইচ্ছে মুকুলে উড়ে উড়ে যায় ইচ্ছে পোকা
সেখানে ছিলনা কোন বসন্তের একঘেয়ে কোকিল- ডেকে চলা ঝি ঝি পোকা
শুধু ছিল একমাসের মাসিক বেদনা- তুমি ছিড়ে ফেলো- ছিড়ে ফেলো তাদের- রাঙ্গিয়ে দাও
টেনে টেনে ছিড়ো- শুধু ছুড়ে ফেলার আগে একবার জানিও- কোথায় যাচ্ছে ইচ্ছে পোকারা
কিভাবে থাকছে কামনা বিলাস- শুধু আমাকে শুদ্ধ করো- শুদ্ধ তম চুমু ভঙ্গিতে- সংগীতে
যেভাবে শুদ্ধ হয়েছিল যিশু এক কালে- ঠিক সেভাবে আমাকে পান করো- ঠিক সেভাবে আমাকে
ছেদন করো-নিরলিপ্ত ভাবে- নিকৃষ্ট লোভেদের সত্ত্বাকে জাগাও- ফেলে দাও ঠিক যেভাবে
একদিন আমাকে বিছানা থেকে টেনে তুলেছিলে আটার চাকতি বানাবে বলে।
একদিন বুকের জমিনে ছিল মেঘ- সেখানে বৃষ্টি হয়েছিল কাম বাসনা বিস্তৃত করতে
তুমি হাত বুলিয়ে দিয়ে আমাকে আপন করে নিয়ে যাবে বলে সেখানে আমি আঙ্গুর বুনেছি
দেখো- এইখানে- এইখানে দেখো
ইচ্ছেগুলো তোমার চোখের চারপাশে খেলা করে- অপেক্ষা করে কখন তুমি নিজ থেকে এসে দাঁড়াবে
খুলে দেবে দুই হাত- আমার চারপাশে- নাগ পাশ হয়ে বেঁধে দেবে বিমূর্ত ইচ্ছায়
দেখো- এইখানে আমার ঠোঁটে জমেছে মৃত কোষের জন্মচিহ্ন- সেখানে নেই কোন কনক্রিট কাম
শুধু একবার ছুঁয়ে দেখো- কিভাবে আমি তোমার মাঝে বুনন করে দেব অতৃপ্ত ভালবাসা-
শুধু একবার ছুলেই আমি তোমার জন্য এনে দেব এক ফাগুনের আগুন জ্বালা ভালবাসা
এইখানে -শুধু এইখানে আমার ঠোঁটে।।

Sunday, February 26, 2012

*****বাক্সবন্দী ******

বাক্সবন্দী ১০/০১/২০১২


বাক্সের মাঝে বন্দী থেকে থেকে আকুল প্রান আমার শুধুই কেঁদে ওঠে। আকাশে চাঁদ আছে- কিন্তু চাঁদের কাছাকাছি যাবার উপায় নেই। ছায়ার পেছনে ঘুরে ঘুরে মরার মাঝে স্থিতিস্থাপকতা নেই। টেনে টেনে গান গাওয়ার মাঝে বিশৃংখলা সৃষ্টি হচ্ছে বলেই অমানুষিক শোনাচ্ছে কষ্টস্বর।তখন শুনি অনেক দূর থেকে শোনা যায় শ্রাব্য সঙ্গীত-

“ কে তুমি?”

“আমি কে? কি আমার পরিচয়। মা বাবার দেয়া নাম বহন করে এসেছি আমি এতদিন। কে জানে আমার অস্তিত্বের সংজ্ঞা কি?”

মাথার ভেতর পাক খেয়ে খেয়ে ঘুরতে থাকে নিস্তব্ধতা। কান ঝালাপালা করে দেয় এপিটাফের উপর ঝড়া পাতার গান।চিৎকার করে কাঁদতে পারিনা কোনভাবেই। চিন্তার ফসল ফলেনা কোন দরিদ্র জমিনে। আছড়ে পড়ে প্রশ্নের বালুকনা। আমি তাতে কোন সংজ্ঞা খুঁজে পাইনা। শুধু বিচ্ছুরিত হয় অজানা জোছনা। আমি জোছনার দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে আকাশ নেই। কালচে ব্যাকগ্রাউন্ডে শুধুই হতাশার অন্ধকার।

“ কে তুমি?”

নিজের ভেতর থেকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে প্রশ্নাভ রশ্মি। আমি কোন কালেই কোন মানুষ ছিলাম নাকি? কে জানে। সংজ্ঞার পেছনের সংজ্ঞা জড়ো হয়। সামনে গড়ে ওঠে রেললাইন। আমি সেখান থেকে খুঁজে খুঁজে নিতে শুরু করি সংজ্ঞা পত্র ।বুঝতে পারিনা কেন সংজ্ঞা পরবর্তী উত্তর সঙ্গীত খুঁজে পায়না মনের অলিগলি।


আবার বেজে ওঠে-

“কে তুমি? কেন তুমি? কি তুমি?”

হটাত সামনে জড়ো হয় একটা সাদাটে আয়না। খুব সাধারন একটা আয়না। সেই আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের ভেতরে নিজেকে খুঁজে পেতে চেয়েই দেখি- সেখানে অন্য কেউ- একদম অপরিচিত কেউ। একদম অচেনা কেউ। একদম অপরিচিত সে মুখের ভ্রু আছে- চোখ আছে- চুল আছে- নাক আছে। চোখের মনি আছে- শুধু পরিচয় নেই। নাম নেই। পদবি নেই। দুঃখ নেই। যন্ত্রনা নেই। কালো কালো লোভ নেই। হিংসা নেই। বিদ্বেষ নেই। আয়নার ভেতরের আমি তে কোন আমিত্ব ও খুঁজে পাইনা আমি।

“ জানো? তুমি কে? জানো জীবন কি?” বিবমিষা চিৎকার ওঠে।

সামনে পড়ে থাকা পান পাত্র নিয়ে আমি ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলি কিছু জলকণা। জলের ভেতর নিজের অস্তিত্ব খুঁজে আমি নিনাদ করি- এই নিনাদে ভাঙতে শুরু করে আমার ভেতরে। ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে নিজের ভেতরের সংজ্ঞা সমূহ। জীবনের মানে জানার জন্য আমি হাতড়ে মরি পূর্বপুরুষের অমলিন চেতনা। খুঁজে পাইনা কোন জান্তব উত্তর। জীবনের মানে খুঁজতে গিয়ে খুঁজে পাই ভুলে যাওয়া গল্পের ছাই। হারিয়ে যাওয়া ধর্মীয় গান। আমি সেই গানের কলি ভেঁজে ভেঁজে গাইতে গিয়েই নিজের অপরিচিত কণ্ঠস্বর খুঁজে পাই। এই কন্ঠ আমার ছিলনা কোনকালেই। এই আমি আমি নই। এই জিহবা থেকে জানু- কন্ঠ থেকে জঙ্ঘা- কিছুই আমার ছিলনা কোন কালেই।

আমি ভ্রুন থেকে শৈশব হাতড়াই জিজ্ঞাসা খুঁজে ফেরার জন্য। আমি জীবন থেকে মরন খুঁজে বেড়াই নিজেকে খোঁজার জন্য। দেখি রক্তের ধারা আমার আংগুলে। কেটে গেছে আমার অগোচরে।আমি কেটে যাওয়া আংগুলের ভাঁজে রক্তের ভেতরে লালচে লোহিত কণিকাকে জিজ্ঞেস করে উত্তর না পেয়ে চলে যাই শরীরের গহীনে। ফুসফুসের কাছে খুঁজে না পেয়ে হাতড়াতে থাকি ডায়াফ্রাম। খুঁজে পাইনা কিছুই। শেষে এসে হৃদপিন্ডে থেমে দেখি- সেখানে জমাট ছিল একদলা ভালবাসা।

সেখানে জমাট ছিল কালচে রং। আমি সেই কালোর ভেতর আলো খুঁজে পাব ভেবে ফালি ফালি করে ফেলি অন্ধকারের গান। হৃত সঙ্গীত। আমার হৃদয়ের ভেতর লুকিয়ে ছিল এক রাশ ধুলোবালি। সেখানে আমার সংজ্ঞা ছিলনা কোনকালেই। শেষে আমি আবার ফেরত আসি আবার নিজের স্থির অবয়বে।সেখানে আমার ভেতর আমি ছিলাম না বলেই- দেহের ভেতর খুঁজে পাইনি আপন সত্ত্বা। অনেক দুর থেকে ভেসে ভেসে আসে কান্নার গান। অন্ধকারের সুষম শব্দার্থ। আমি সেখানে ব্যাবচ্ছেদ করেছিলাম নিজের নামের অক্ষর গুলো। পেয়েছিলাম একাকী কঠিন এক স্বর।

“পদ্ম”

“পদ্ম” চিরকার একা ছিল । চিরকাল ভেসে এসেছে নিলয় বিড়ালাক্ষী জলস্রোতে। আমি সেই স্রোত কল্পনা করে ভেসে যাই জলজ সঙ্গীতে। সেই সঙ্গীত আমার কানে বাজায় কোন এক আদুরে বালিকা। আমি সেই বালিকার হাত ধরে প্রশ্নালু কন্ঠে তাকাতেই তার চোখে নিজেকে দেখি। তারপর নিজের ভেতর হারিয়ে গিয়ে অন্ধকারের গান শুনতে শুনতে আবার ফিরে আসি সেই বাক্সের ভেতর। সেখানে আমি ছাড়া কিছুই ছিলনা কোন কালে।।

ছবি এবং আঁকাআঁকি- নষ্ট কবি


লেখাটি সৃজন এ প্রকাশিত

সৃজনি ডাউনলোড করতে http://www.mediafire.com/?0p063aibz8lh23x ক্লিক করুন

ভোরে কালো রাত- জলে ডুবে যাক ।।

ভোরে কালো রাত- জলে ডুবে যাক
সুসময় দিন- সাদা মৃদু পাক
সে পাকে থাকে সুন্দর সব রাত্রি
কালো আবছায় থাকে দিনগুলো
থাকে কালো কালো চিল সব ধুলো
আর আমি সেই পথে পথযাত্রি।
পথে পড়ে থাকে সব জঞ্জাল
আমি সেই পথে রাখি মৃত্যু
কোল বালিশের পাশে টিমটিম
ল্যাম্পের আলো ভৃত্য
চিঠি পড়তেই চোখে ভীড় করে সব কান্না
আমি বলছি বারে বার -এই ভালবাসা আর না।

এই রাত্রির কালো কালসাপ
আমি ভোর থেকে সেই দেখছি
শুধু রাত্রির বুকে গেঁথে থাকা
সব নিজের বুকেই রাখছি
সেই কন্ঠক ফুটে বার বার ফেটে যায় সব ইচ্ছে
আমি জানতাম সব জাগবে শুধু অপেক্ষার সব কিচ্ছে।

গানে গান সব সুরে সুরে যায়
আমি সেই সুর খুঁজে নির্ঘুম
তুমি কি গান গেয়েছিলে
উড়ো স্বপ্নের বুকে দেয় চুম
শুধু বার বার শুনে খুলে দেই
এই রাত্রির নাম কল্প
ভিজে তোয়ালে নিয়ে পেঁচিয়ে
শুনি তোমার কোলে গল্প।
ভোরে কালো রাত- জলে ডুবে যাক ।।

Wednesday, February 22, 2012

জিঘাংসা

আমাকে খাদ্য দাও নতুবা আগুনে ঝলসে খাব তোমার আত্মা
জমিনে ঘাস বিছিয়ে আকাশে তাকানো আমার কাজ নয়
যে নারীকে কামার্ত করে লুটে যাও পবিত্র রক্ত-
আমি সেই নারীকে মা ডেকেছি - অমিত শ্রদ্ধায়
জিহবার মাঝে আটকে যায় লালসা-
তাই আমি লোভের সাথে ডাল পাকুড়া খেয়েছিলাম ক্ষুধার্ত ইচ্ছায়
অতঃপর বলিদান ইচ্ছাকে- অতৃপ্তিকে
তোমার সেলোফেন জামার গভীরে চোখ দেবার ইচ্ছে জাগেনি আমার কাম পোকাদের
কারন আমি ও হত্যা করেছি আমার ব্যাথা ও... জিঘাংসা কে-
গলা টিপে মেরে ফেলা ইচ্ছেরা কুত কুত চোখে চায়
রিপুর তাড়নায় নিজেকে ছিড়ে ফেলে যখন ভেসে আসে পবিত্র আত্মারা
তখন শুধু ভাসি শুধু নিকোটিন নিস্তব্ধতায়
তখন ই আবার বলে উঠি
আমাকে খাদ্য দাও
আমাকে শান্তি দাও
আমাকে শক্তি দাও
নাহলে গুড়িয়ে দেব উলংগ আবেগ- আদিম পশুত্ব

নিজেকে এখন পিতা বলতে ইচ্ছা করে
পারিনা- কারন অনেক আগেই ফ্লাস টিপে ফেলে এসেছি জন্মচিহ্ন
এখন আমি অনেক শুদ্ধ-
এখন আমি অদৃশ্য অগোচর পিপিলিকা।।

Tuesday, January 24, 2012

বিস্মরণ কিনবা ভুলে যাবার চেষ্টা



বিষ্মৃত ড্রাফটঃ

এই আমি চলে যাব
সেই আমি
সত্যিকারের মত চলে যাব
মনে রেখো এ কোন লুকোচুরি খেলা নয়
এ কোন ছেলে খেলা নয়
-যে হারালেই আবার খুঁজে পাবে
আমি এবার সত্যিকারের মত চলে যাচ্ছি
আর ফিরে আসবোনা
জেনো
সত্যি সত্যি হারিয়ে যাব তোমার আমি।

কত মানুষ ই তো মরে যায়
কত মানুষ চলে যায় হটাত হটাত
আমি না হয় ওদের মতই হারিয়ে যাব
আমাকে ও না হয় ওদের মতই ভুলে যেও ।
কি পারবেনা?

আমার হাতে থাকবেনা তোমার হাত
আমি কোনদিন পথের কাটা হবোনা তোমার
শুধু মাঝে মাঝে আকাশের মাঝে আমাকে দেখতে এসো
কি পারবেনা?

তোমার সুন্দর কোন স্বপ্নের মাঝে আমি আসবোনা দুঃস্বপ্ন হয়ে
চন্দ্রালুতায় তুমি নেঁচে বেড়াবে সেই আগের মত
আমি কোনদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখবোনা তোমার নাচ
শুধু আমাকে মনে কোর কোন এক বিশেষ দিনে
কি পারবেনা?
......................................................

Friday, January 20, 2012

কেটে দিলাম হাজার খানেক লাইন
কেটে দিলাম আরো কিছু শব্দ
তোমার জন্য লেখা হবেনা জানি
কষ্টগুলো থাকবে শুধুই বদ্ধ।

আকাশ পানে আমার চেয়ে থাকা
তুমি থাকো সেই তোমার ই মত
আমার বুকে থামে একটা ঢেঊ
সাগর সেচে দেখোনা দুঃখ কত

চাঁদোয়ার মাঝে আমি হাটি
তুমি থাকো একা একা ঘরে
আমার চাঁদের নেইকো অবহেলা
থাকছিনা শুধু তোমারা বাহুডোরে।

Saturday, January 14, 2012

আত্মহত্যা কিনবা চিরমুক্তি

নিজেকে আর দেখতে ইচ্ছে করছেনা রঙ্গ মঞ্চে
বেমানান আমি সকল প্রক্ষেলিত দিক থেকে
পায়ের নিচের মাটি ও আমাকে দেখতে দেয়নি
কোন সূর্যের বিস্মৃত রশ্মি
তাই আমি আজ সঁপেছি নিজেকে মৃত্যুর কাছে।
হতাশা আমার আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে আজ
সেখানে প্রবেশাধিকার হারিয়েছে সকল আশার আলো
নিজেকে হারিয়ে ফেলছি চাঁদের কালচে আলোর মাঝে।
পায়ে পায়ে ছায়ার দল এসে ভীড় করে
আমি সেই ছায়ার মাঝে হারাব বলেই
আবার হাটা শুরু করি মেঘের পানে
সেই মেঘ আমাকে আপন করে নেয়নি কোন কালেই।
আমার মৃত্যু কিনবা আত্মহত্যার ইচ্ছা জেঁকে বসেছে মাথায়
ফ্যানে ঝোলানো রশির মাঝে খুঁজে পেতে চেষ্টা করি নিজেকে
নিনাদ শোনেনি আমার আত্মা
নিজেকে মারতে পারিনি আমি দড়ির কাছে মৃত্যুর ভাড় দিয়ে।
আমার হাতের কাছে ছিল ধারালো ছোড়া
পুরুষ ছিলাম আমি - কিন্তু নিজেকে কাপুরুষ
মনে করতে শুরু করেছি যখন থেকে-
তখন থেকেই ছুড়ির ফলার ধার বাড়তে শুরু করেছে
বলেই আমি মরে যেতে পারিনি জুগুলার ভেইন কেটে ফেলে।
বিষের পেয়ালা আমার কাছে অনেক ভারী মনে হয়েছিল
তখন থেকে আমি শুধু তাকিয়ে আমি বিষের দিকে
কালচে বিষের প্রাণ হরন কারী শক্তি দেখে আমি
নিরুপায় হয়ে বসে ছিলাম অনেক ক্ষন।
সেই ক্ষন আমার কাছে ফেরত আসেনি কোন কালেই।

নিজেকে মেরে ফেলার ইচ্ছেরা পালাতে শুরু করেছে একে একে। মাটির ভেতর প্রবেশের ইচ্ছা আমার। সেখানে দেখার ইচ্ছা কিভাবে আমাকে ছিঁড়ে খুঁড়ে খাবে মৃত্যু পোকা। আমার দেহের ভেতর কাম গুলোকে ছিড়ে ছিড়ে খাবে বলেই আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।ইচ্ছে করছে মিশে যাই বৃষ্টির জলে।

তার পর কাপুরুষতা ভর করেছে আমার উপর
পুরুষ ছিলাম এক কালে- এখন সুপুরুষ হবার চিন্তা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।
জীবনের কাছে জানার ইচ্ছে শেষ হয়েছে শেষ হিংসার পর।
জীবন কিনবা মৃত্যুর সমীকরণ জান্তে ইচ্ছে করছে শুধুই।
এই শেষ কবিতা লিখে আমি পান করতে চলেছি শেষ জন্মসুধা
এই কবিতা লিখে আমি নাশ করতে চলেছি ধারালো ব্লেড এর খোঁচায়
এই কবিতা লিখে আমি ঝুলে পড়তে চলেছি দেয়ালের ক্যালেন্ডারের মত।
জানি এর পর আমি কারো চোখের বালি হবোনা
কেউ আমাকে মনে রেখে দেবেনা চিরকালের মত।
আমি এই রঙ্গমঞ্চে আর কোন অভিনয়ের পাট নিয়ে আসব না।
বাতাসে মিশে গিয়ে শুধু তোমাদের আমোদ দেখব
আকাশ থেকে তোমাদের আনন্দ দেখব
দেয়ালের ওপার থেকে তোমাদের বিদ্রোহ দেখব বলেই

এই আমি সপে দিলাম নিজেকে মৃত্যুর কাছে। জানি মৃত্যুর ছায়া ও আমাকে আর বাঁচাতে পারবেনা।।

Wednesday, January 11, 2012

প্রবেশাধিকারঃ

প্রবেশাধিকারঃ

 

নিখিল সমীকরণ- ড্রাফট নং –অজানা .....


নিজেকে খুঁজে ফেরা পাখির দল জানেনা কোথায় ছিল অজানা
নির্বোধ স্থর,
আমি সেখান থেকে নিজেকে খুঁজে ফিরেছি।
একদিন শুধু তোমার দেখা পাবো ভেবে আমি একাকী হেটেছি
নির্জলা জলাকার পথে প্রান্তরে।
আমার শিরা গুলো অস্থির ছিল বলে খুঁজে পাইনি কোন
বালুকনা- কিনবা আঠালো আস্তরণ,
এবং তারপর তুমি এলে জীবনে
আমি আন্দোলিত হলাম শুধু তোমার তোতলা উচ্চারনে
আমার শরীরের বিবমিষা শৃঙ্গার
আমার নিরামিষ চিহ্ন চেতনাকে ঘীরে গড়ে তুলে মহলা অট্টালিকা
আমি সেখানে লুকিয়ে রেখে নিশ্চিন্ত হতে পারিনি কোনভাবে
তাকিয়ে দেখি হৃদয়ের গহীনে তুমি- শুধু তুমি।
তোমাকে হারাব ভেবে আমি কেঁদেছিলাম রাত্রি দ্বিপ্রহরে
তোমাকে হারাব ভেবে আমি লুকোতে চেয়েছিলাম অলিন্দের প্রকোষ্টে
সেখানে শুধু রক্তের শ্রাব ধারা ছিল- এবং

রক্তের লাল বড় লালচে ছিল বলে
আমার বুকের বাম পাশে বয়ে যাওয়া শিরা গুলোকে সরিয়ে
আমি তোমাকে রেখেছিলাম সেখানে
তুমি তার চেয়েও অধিক রঙ্গিন হয়েছিলে সেকারনে
তোমাকে রাঙ্গাতে গিয়ে আমার হৃদপিন্ড বামপাশে সরে গিয়েছিল
এবং আমি হয়েছিলাম তোমার আরো বেশি আপন
সেই থেকে আমি এখন তোমাকে বহন করে চলেছি
জানি মৃত্যুও কেড়ে নিতে পারবেনা আমাকে
বুকের পাঁজর ভেদ করে হৃদপিণ্ড চিড়ে ফেল্লেও পাবেন কেউ
কারন আমি এখন তোমাকে লুকিয়েছি আরো গোপনে-
সেখানে আমার নিজের ও প্রবেশাধিকার নেই।।

নিখিল আমি ও ভালবাসা


নিখিল আমি ও ভালবাসা


আমি তারপর খুঁজে ফিরে ছিলাম নিজেকে
নিখিল ড্রাফট এর কলমের খোঁচার মাঝে
আমার নিখিল সত্ত্বা
কেউ জানেনা সেখানে কি ছিল?
কে ছিল-
শুধু দেখেছিলাম আমার মাথার চারপাশে ছিল
একরাশ কামনার আগুন

দেহের মাঝে ছিল
লোভ- ঘৃণা- হতাশা
আমি সেখান থেকে পালাতে গিয়ে
নিজেকেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।

তারপর ছিলনা আমার কোন অন্ধকার অস্তিত্ব
শুধু আমি গুমড়ে কাঁদার সময় জেনেছিলাম
অন্ধকারের বেগে নিজেকে হারিয়েছিলাম আমি
আলোর কাছে পৌছানো আমার আদৌ সম্ভব ছিলনা কোন কালে

নিজের হাতের ভেতর রেখেছিলাম তোমার নরম হাতের ছোয়

এখন সেই হাতের ছোয়া খুঁজে ফিরি
পাইনা কিছুই
শুধু আমার কোলে লেগে থাকে তোমার সোনালী চুলের ছোয়া
আমি সেই ছোয়া তে আঁচল পাতি
আবার তুমি আসবে ভেবে নিজেকে সাজাতে শুরু করি
নতুন সাজে।

তারপর দেখি আমার জলছাপে তোমার চিহ্ন

ততদিনে বুড়িয়ে গিয়েছিলাম বলে
ভাল করে দেখিনি চোখে - ঠাহর করতে পারিনি তোমাকে
তুমি তো আগের মতই ছিলে
আমি শুধু তোমার কথা ভেবে ভেবে একাকী
শুধু একাকী আনমনে গুনেছিলাম আমার বয়স
তারপর আমি তোমাকে আবার কোলে নিয়ে আদরে আদরে
ভরিয়ে দিলাম আবার সেই তোমাকে।।

Wednesday, January 4, 2012

মেঘবালিকা

মেঘবালিকা ও মেঘবালিকা
তোমার সাথে আজ হল যে দেখা

তোমার চুলে করে যে খেলা
মেঘবালকের স্বপ্ন ডানা
সেই স্বপনে মেঘবালকের
ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় সব হবে রাঙ্গা

মেঘবালিকা ও মেঘবালিকা

মেঘবালকের স্বপ্ন নিয়ে
গেথেছিলে গল্প সেই বিকেলে
ইচ্ছেগুলো গোপন করে
কেঁদেছিলে তুমি কষ্ট ঘোরে

... সেই ছেলেটি আজকে এসে
ধরেছে হাতটি তোমার ভালবেসে

মেঘবালিকা ও মেঘবালিকা
কাঁদবে কর আর একা একা

Tuesday, January 3, 2012

ড্রাফট কবিতা

প্রতিদিন হোক শুভ দিন
কামনা করে মানুষ গুলো
ভাবে সময় তাদের মতই মূর্খ
ভাবে তাদের চাওয়া মতই ভাল যাবে প্রতিটি দিন
কিন্তু যায় না
কোনদিন ভাল হয় খারাপ হয় কোনদিন
চিরদিন সমান যায়না কারো
তবুও মানুষ নির্বোধের মত কামনা করে
ঠিক যেমন আমি ও কামনা করি।
..............................................


ভাল থাকবেন নিরন্তর
জানি মহাকাল আমার এই কথার কোণ পাত্তা না দিয়েই
আপনার জন্য বয়ে আনবে ভাল মন্দের মিশেল একটি বছর
তবুও শুভকামনা আপনার জন্য

......................................................


এই নতুন দিনে একদিন কোন এক সময়ে কেউ একজন উচ্চারন করেছিল
শুভ নববর্ষ
সেই থেকে আমরা সবাই সবার ভাল চেয়ে আসছি
জানি এই চাওয়া কোণ কাজে লাগেনা
তবুও মন থেকে চাই- যদি আমার চাওয়া আলাদিনের চেরাগের মত কাজে লাগে এই আশায়.। :)



............................................................

আমাদের সকল চাওয়া পাওয়া যদি নিমিষের মাঝেই সত্য হয়ে যেত
তবেঁ কেউ কারো জন্য এত সুন্দর ভাবে কিছু চাইতো না
অনেক ধন্যবাদ ঈশ্বর কে যে আমাদের অনেক প্রাথনাই
তিনি কবুল করেন না-
করলে উনার কাছে কেউ এত প্রান ভরে প্রাথনা করতো না
সবাই নিজের জন্যই করত । ।

.........................................................

একদিন শুধু একদিন বেঁচে থাকবো বলে
শুধু একদিন সুন্দর করে বেঁচে থাকবো বলে
আমরা সবাই মেতে উঠি আনন্দের করতালে

তাই করতালি দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠি
শুভ নববর্ষ
্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌,

শুভ হোক প্রতিটি দিন
এই চেয়ে আমি ও শুভকামনা বার্তা দিতে চাই প্রতিটী প্রাণে
কিন্তু অসহায় আমি
পারিনা কিছুতেই প্রতিটী দিন সুন্দর করে গড়ে তুলতে

সময়ের কাছে নিয়তির কাছে আমি বড় অসহায়
......................................................

যদি একদিন ঘুম ভেঙ্গে দেখি
এই পৃথিবীর সকল কিছু শুধু আমার জন্য পরিবর্তিত হয়ে গেছে
যদি একদিন ঘুম ভেঙ্গে দেখি
এই মহাকালের সব সময় নিখিল হয়ে গেছে -ধবংস হয়ে গেছে
সবকিছুর জন্য আমি দায়ী করব তোমাকে
কারন তুমি ই আমাকে বলেছিলে ভালবাসি
এবং তারপর থেকে শুধু সবকিছু পরিবর্তিত হয়ে চলেছে
আমি এই পরিবর্তনের সাক্ষি হয়ে থাকব চিরকাল
এবং আমার সাথে আমার বুড়ো বটগাছটি ও

...................................................


ভেজাল এর ভেতর থেজে উদ্গীরন চাই বলেই কামনা করি ভেজাল হবেনা আমার একটি ভোর
খারাপ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে গিয়ে দেখি আমি আবার পড়ে আছি সেই কামনার গহ্বরে
তাই এখন কিছু চাই না আমি
এখন শুধু মহাকাল দেখাবে আমাকে
আমি শুধু দেখে যাব
আমি শুধু গেয়ে যাব জীবনের গান

...................................................

নষ্ট হয়েছিল সে নষ্ট সময়ের ভিড়ে
কবি হতে চেয়েছিল কবিতাকে ঘীরে

একদিন শুধু একটি চাঁদের আড়ালে নিজেকে দেখে
ছায়া হয়ে গিয়েছিল সব আলো মেখে

তাই তারপর থেকে
শুধু তার পর থেকে

নষ্ট হয়েছিল ছেলেটি নষ্টের ভিড়ে
কবি হতে পারেনি কবিতাকে ঘিরে
...........................................

আলো ভেসে আসে নতুন দিনে
কে জানে এই আলো ভালো নাকি মন্দের আলো
কে জানে এই আলো কি বয়ে নিয়ে আসবে
শুধু মনে মনে কামনা করি
এই আলো হয়ে উঠবে আমাদের চিত্রশ্লোগান
এই আলো হয়ে উঠবে আমাদের জীবন পংক্তি
এই আলো নিয়ে আসবে জীবন সুধা
যা পান করে বেঁচে থাকব আমরা অনন্ত কাল

......................................................


একদিন আমি গাছ থেকে নামিয়ে এনেছিলাম একরাশ ভালবাসা
এই একমুঠো ভালবাসা আমি ছড়িয়ে দিয়েছিলাম অনন্ত আকাশে
তুমি কুড়িয়ে নিও তোমার ফুলের বাগান থেকে
হয়ত তোমার বাগানের ফুলের কাছে পৌছে যাবে ভালবাসা আমার
আমি সেই জন্য আশা করে বসে থাকি
সেই জন্য আমি মাথায় হাত রেখে বসে থাকি
বসে থাকি কিনবা অপেক্ষায় থাকি
কবে আসবে বসন্ত
কবে ফুল ফুটে ভালবাসা ছড়িয়ে পড়বে তোমার আঁচলে ।।
.................................................


সময় চলে যায়
চলে যাচ্ছে
চলে যাবেই
তবুও কিছু মানুষ থেকে যাবে
সময়ের অন্তরালে
কিছু মানুষ থেকে যাবে
মনের গহীনে
যতই মন থেকে পাতা ঝড়ে যাক
মনের ভেতর থেকে ঝড়ে যাবেনা কিছুতেই
,............................................................

নতুন বছরের ঠিক আগে
মনে হয় প্রতিদিন যদি এভাবেই শেষ হয়ে যায়
তাহলে একদিন
শেষ হয়ে যাব আমি ও
সেদিন কেউ পাশে থাকবেনা
কেউ বুঝবেনা আমার মনের ইচ্ছেগুলো

আমি একাকী হয়ে ভেসে বেড়াব লক্ষ কোটি প্রানের মত

.....................................................

একদিন এক ছেলে তার দুহাত ভরে ফুল দিয়েছিল আমাকে
আমি সেই দিন থেকে ভালবাসি ছেলেটাকে
সেদিন এর পর আর আসেনি ছেলেটি
এর পর কেটে গেছে কত বসন্ত- আসেনি ছেলেটি
আমি সেই থেকে ছেলেটার হাত থেকে ফুল নিয়ে
মাথায় গুজবো বলে খুলে রেখেছি আমার চুল গুলো
সেই থেকে আমার শরীরে থাকেনা কোন সুগন্ধি
তার ফুলের সুগন্ধ মেখে নেব বলে আমি
অপেক্ষায় থাকি- দুই চোখ খুঁজে বেড়ায়
অনেক গুলো বছর পরের একজন যুবক কে দেখবে বলে
জানিনা এখন সে কেমন হয়েছে দেখতে
আমি কিন্তু চোখ বুজলেই এখন ও সেই
ছোট্ট ছেলেটাকেই দেখি আনমনে।।
...............................................

অতঃপর সুন্দর একটি কবিতা লিখবো বলে
আমি চেয়ে থাকি তোমার চোখে
তোমার চোখের ভেতর নিজের ছায়া নেচে চলেছে
দেখে আমি মাতাল হলাম সেই আগের মত
সেই প্রথম দিনের মত।।

নষ্ট কবি

আমি নষ্ট ছিলাম সেই নষ্ট কালের আগে
আমি নষ্ট ছিলাম সেই নষ্ট দিনের শেষে
এই নষ্ট সমাজে - আমি একটি শিশুর মুখে হাসি দেখব বলে
আমি নষ্ট হয়েছিলাম
একজন বৃদ্ধ মানুষ একদিন -শুধু একদিন সুখে থাকবে বলে
আমি নষ্ট হয়েছিলাম
এই সমাজে সকল অনাচার অবিচার থেমে যাবে বলে
আমি নষ্ট হয়েছিলাম

আমি নষ্ট সময়ের প্রানী
আমি নষ্ট সময়ের মাঝে বন্দী প্রানী
এই খাচার ভেতর থেকে গুমড়ে না মরে
আমি চিৎকার করি বলেই
নিজেকে নষ্ট ঘোষনা করেছিলাম জন্মকালে
এবং সেই থেকে
আমি নষ্ট
সেই থেকে আমি এই নষ্ট সময়ের কবি

████হে মহাকাল ████

চলে যেওনা আমাকে ছেড়ে- এই দেখ আমি একাকী তোমার পথের বালি আঁকড়ে ধরে বার বার কেঁদে কেঁদে আক্ষেপ করে তোমাকে না যাবার জন্য অনুরোধ করছি।।

কিন্তু তুমি চলে যাবে জানি
কারন তোমাকে কেউ কোনদিন আটকাতে পারেনি
কেউ কোনদিন তোমাক রাখতে পারেনি
নিজের খাঁচায় আটকে
তুমি জানো- সবাই শুধুই ভুল করে
এবং সবাই ভুল করে তোমাকে ধরে রাখতে চায়
কিনবা ধরে রাখতে চায় নিজেকে
নিজের স্থায়িত্বকে
আহ - সময়!

সবাই তোমাকে আটকে রাখতে চায়
কিন্তু তুমি একাই এই অখিল পরমের জন্মসময় থেকে
সেই যে পথ চলা শুরু করেছিলে
আর থেমে থাকোনি একপলের জন্যও
কত মানুষ কেঁদেছে তোমাকে ধরে রাখার জন্য
কত মানুষ তোমাকে আপন করে নিতে
বলি দিয়েছে মহামূল্যবান সময়
কিন্তু পারেনি তোমাকে ধরে রাখতে
কারন তুমি জন্ম নিয়েছ চলে যাবে বলে
তুমি জন্ম নিয়েছ অস্থায়ী সুখ হয়ে পরশ হয়ে জড়াবে বলে
তুমি জন্ম নিয়েছ আমাদের সবার মৃত্যু দেখে যাবে বলে
হে সময়- হে মহাকাল
আমার আকুতি তুমি শুনবেনা
তবুও আকুতি আমাকে মৃত্যুর দিকে আরেকবার ঠেলে দিও না
আমি মরতে চাইনা
কেউ আমাদের মাঝে মরে যেতে চাইনা
যতই আমরা নিজেকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত বলিনা কেন-
আমাদের যৌবন কে আমরা ভালবাসি
কিন্তু আমরা বুঝতে চেষ্টা করিনা
যে অবস্থা আমাদের আছে সেটা নিত্য অব্যয় কোনদিন ছিলনা
আমাদের প্রতি মুহূর্তে খানিকটা বুড়িয়ে যাওয়া
আমাদের ঠেলে দেয় মৃত্যুর দিকে
শুধু তাই
কেউ কেউ ভুলে যেতে চায়
কেউ হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠে
কেউ নেশার পেয়ালা হাতে নিয়ে ভুলে যায়
কিন্তু একদিন ঠিক তোমার কাছে নিজেকে সঁপে দেয়
দিতে হয়
কারন তুমি - তুমি হে মহাকাল
তুমি আমাদের সবার বিলীনস্থল
তুমি আমাদের সবার শেষ গন্তব্যের পথ প্রদর্শন কারী
তুমি জানো - তুমি আমাদের কারো নও
তবুও আমাদের সবাই তোমাকে গুনে চলি
তোমাকে হিসেব করে নিজের বয়স হিসেব করি
তোমাকে হিসেব করে নিজের স্থায়িত্ব মাপি

এবং একে একে সবাই একসাথে বড় হতে থাকি
সবাই একসাথে এগিয়ে যেতে থাকি হে মহাকাল
নিষ্টুর মহাকাল
একটু ক্ষন কি দাঁড়াবে?
একটু?
আমি নিজের কাছে জিজ্ঞাসা করতে চেয়ে সময় নেব তোমার কাছে
শুধু একটি বার
শুধু একটি বার আমি জিজ্ঞাসা করব হে মহাকাল
"আমাকে কি একটু সময় দেবে?"
জানি এই সময় টুকু তোমার কোনদিন হবেনা।।

কোনদিন থামোনি তুমি - কেউ তোমাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি- তাই বাধ্য হয়ে নিজের জীবন থেকে একটি বছর চলে যাওয়া বাধ্য হয়ে বরণ করে নেই আমি- এবং সবাই কে বলি-
শুভ হোক- সুখী হোক -মঙ্গল হোক সকল প্রাণীর।।
◕▄███▄◕──◕▄██▄◕──◕▄███◕──◕▄███▄◕ ◕▀──██◕─◕██──██◕───◕██◕──◕▀──██◕ ◕──██◕──◕██──██◕───◕██◕────◕██◕ ◕─██◕───◕██──██◕───◕██◕───◕██◕ ◕█████◕──◕▀██▀◕───◕▄██▄◕─◕█████◕
████████শুভ হোক সবার জন্য ██████████

<="" p=""> ✖✖✖প্রেম নাকি কামনা ✖✖✖ কামনার ভেতর প্রেম খুঁজে ফেরা কবিতার পংক্তিমালা

নিখিল ড্রাফটঃ


বিষন্নতার যন্ত্রনায় মরে যাচ্ছে শকুন গুলো
আগুনের হলকার মাঝে খুঁজে পেতে চাইছে জীবনের খেরোগান
কান্নার জলের কাছে মিছে মনে হচ্ছে উদ্ভিন্ন জীবনপ্রনালী
কিশোরী স্বপ্নের মাঝে বেঁচে থাকা শুদ্ধস্নান
মরে যাওয়া পাখিগুলোর মরা চোখ স্থির
হারিয়ে যাওয়া অপভ্রংশের মত ভেসে যায় শুদ্ধতম প্রাণ।

আমি তারি মাঝে খুঁজে পেতে চেয়েছিলাম প্রেমের অনল
তার চেয়ে মৃত্যু ও ছিল ঢের ভাল
মরন এলেই মরে যেতে হয় ভুলে নাই কাকড়ার দল
আমি সেই কথাটা ও ভুলে গিয়েছিলাম।

স্বপ্নের মাঝে খুঁজে ফেরা জীবনানন্দের বালিকার কেশ
মুক্তকেশ তিতিরের জলের মাঝে বয়ে যাওয়া হাওয়ার রেশ
পৃথিবীর কামনাগুলো জেঁকে বসেছে আমার চুলে
চোখের মাঝেই পড়েছিল সন্ধ্যা তারার মৃদুলেশ।

আমার এই কামনার নামই কি ছিল প্রেম
নাকি আমার দেহের চুল গুলো কামনার বাসনার মত কোনকিছু?
কেজানে এর কোণ কারন নেই জানি
এই সকাল সন্ধ্যা প্রশ্ন ছিল আমার মনে।।




Wednesday, December 28, 2011

◆◆◆যেভাবে হয়েছিল ভালবাসা ◆◆◆


মনের ভেতরে বেজে উঠেছিল বিনম্র চিৎকার বিষাদের সুর
ভেজে ভেজে চলেছিল শেষ বিকেলের চারুতার পিঠ
ঘামে ভিজে যাওয়া তপ্ত নিশান কিনবা শেষ বিকেলের আলো
কবিতার পংতির মত ভেঙ্গেছিল একাকার হয়ে

কবি কিনবা কবিতার প্রাপ্য ছিলনা কিছুই
কলমের খোঁচায় তৈরি হয় নতুন বুদ্ধিজীবী
নিঃশেষ হয়ে যেতে যেতে আবার নতুন করে শুরু হয় সালোকসংশ্লেষণ
পাতার ভেতরে জেগে জেগে বেঁচে থাকতে চায় আমরন বায়ু প্রাণ

আনারীর মুখে লেগেছিল কলংকের লিপ্সটিক
চুষে খাওয়া শেষ রোদে ভিজে ওঠা বুকে লেপ্টে ছিল শেষ জন্মের ছোয়া
লেহনে লেহনে পিষ্ট হয় জন্মাবতার দাগ কিন্তু বয়েছিল শিরায়
দেখেছিলাম শেষ স্নান শেষে সেমিজের আড়ালে ফুলে ওঠা মাংসপিন্ড

আকাশের বুকে মাথা নত করে থাকে শেষ বিকেলের প্রেমিক প্রেমিকা
চুম্বন শুধু ছিলনা আকাশে- ঠোটের উপর ঠোট উল্টে পাল্টে গিয়েছিল বলে
প্রেমিকা প্রেমিক কে বলেছিল শেষ বার - ভালবাসি ।যেন
কাঠপেন্সিলের কালচে গুড়োর মত ভেসে থাকা বালুকার মাঝে নতুন শিশির

বাধুয়া কিনবা নতুন বালিকার মনের রঙ্গে রাঙ্গানো ঠোট
ঝিলিক হাসির পাখনা মেলানো সুরে বেজে বেজে ওঠে ক্লান্ত সুবোধ
বালিকার নতুন গজানো চুলের ভেতরে যেভাবে চলে যায় পুরুষের হাত
সেভাবেও ভালবাসা হয়েছিল কোনকালে।।

জাফ্রান রঙ মিশে একাকার হয়েছিল সবুজ রঙ এ
লালচে আকাশ হয়েছিল দগ্ধ বিকেল
চিরনবীন মানুষ গুলো হটাত হয়েছিল শিশু
বিধাতা থেকে নিয়ে এসেছিল নবীনতর প্রেম

বিধাতা ভালবেসেছিল মানুষকে
মানুষ গুলো ও বেসেছিল ভাল নিজেদের
জমে থাকা ভালবাসা চুমু খেয়ে চুষে নিতে চেয়েছিল বলে
সিজার কে ভালবেসেছিল ক্লীওপেট্রা

ভালবাসায় সংজ্ঞা মানেনি বয়সের বাঁধ
চিবুকের প্রস্থ মানেনি যৌনতার প্রাপ্তি
জীবন যেখানে মিশেছিল জীবনের খোঁজে
হয়ত সেখানেই জন্মেছিল ভালবাসা।।

কিশোরী

কিশোরী তুমি কাকে বলেছিলে ভালবাসি? আমি শুনে ও শুনিনি সে গান
মাতাল সন্ধ্যায় আমি অন্তহীন হেঁটে হেঁটে কান রেখে শুনতে চেয়েছিলাম।
নীল পাহাড়ের বুকে বুজে থাকা অন্তনীল আকাশের কনায় পা ভিজিয়ে
তুমি কাকে বলেছিলে ভালবাসি? আমি মেঘের কাছে বৃষ্টি ভিক্ষে করেও
শুনতে পারিনি সে ডাক- যোজন যোজন দূরে ছিলে তুমি হয়তোবা।
ডাকবেলী ফুলের স্কন্ধ কানে গুজে তুমি কাকে বলেছিলে ভালবাসি?
আমি গাছের কাছে ফুলের কাছে চিৎকার করে জানতে চেয়েছিলাম
শুনতে পাইনি সেই কন্ঠনালী উতঘাটক শব্দ- তুমি কি ইশারা করেছিলে ?

তোমাকে ভালবাসি বলতেই আকাশ থেকে গড়িয়ে পড়ল একরাশ অশ্রু।
তোমাকে ভালবাসি বলতেই চাঁদের গা থেকে ভেসে আসল তীব্র আলোকছটা।
ভালবাসি শুনেই ছুটে আসল পেয়ালা ভর্তি আর্তনাদ এবং আমি শত বাঁধা অতিক্রম করে বার বার চিৎকার করে বলেছিলাম ভালবাসি ভালবাসি এবং

তুমি তখন খোলা চুলে বেনী দুলিয়ে হেসেছিলে খিল খিল করে
তুমি তখন একলা মেঠো পথে খুঁজে ছিলে অন্তহীন অন্যকাউকে ।।

✖✖✖একাকী সঙ্গীত ✖✖✖



পৃথিবীতে কেউ কারো নয়
সবাই একা
সবাই...
এমন কি আকাশের ঈশ্বর ও।
চাঁদ শুধু একা একা তারা গোনে
একটি ধ্রুব তারা মুখ তুলে দেখেনি
কোন বালিকা তারাকে
সারা জীবন অপেক্ষায় থেকে
পথ দেখিয়ে গেছে দিক ভ্রান্ত মানুষকে
সেই দিক ভ্রান্ত মানুষ ও গন্তব্যে গিয়ে
একদম একা।

একটি ছেলে একদিন অনেক সাধ করে
ফুল দিয়েছিল একটি মেয়েটাকে
ফুলটি রাখেনি মেয়েটি
তার পর থেকে ছেলেটি শুধু একা
একাকীত্বের শব্দ ঘুন ঘুন করে ঘোরে তার কানে
শব্দের তীব্রতায় বাধ্য হয় কানে হাত চেপে ধরে
চিৎকার করতে পারেনা-
মেয়েটি ও বিছানায় শুয়ে থাকে একা
অনেক মানুষের ভিড়ে একা
অনেক আসবাবের মাঝে একা
অনেক গল্পের মাঝে একা

কারন চিৎকার শোনার সময় ছিলনা কোন কারো
সবাই নিজের জন্য দৌড়ায়
সবাই নিজের জন্য বেঁচে থাকে
সবাই নিজের জন্য
এমনকি একটা মুমূর্ষু মানুষ ও নিজের জন্য
শুধু নিজের জন্য বেঁচে থাকতে চায় বলেই
সবাই স্বার্থপর হয়
সবাই নিজেকে ভালবাসে সব চেয়ে বেশি
সবাই নিজেকে লালন করে লালসার মাঝে
একজন বালকের স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়া
কারো কান্নার কারন হয়না
একজন মানুষের মরে যাওয়া মনে রাখেনা বেশি দিন
একজন মানুষের অভাব মেটায় আরেকজন
একজন মানুষের জন্য থেমে থাকেনা কোনকিছুই
একজন মানুষের জন্য অপেক্ষা করেনা কেউ
-নিখাদ স্বার্থ ছাড়া

এইজন্য চিৎকার করে বলি
পৃথিবীরে প্রেম বলে কিছু নেই
এই পৃথিবীর সকল প্রানী
বেঁচে থাকার জন্য সম্পর্ক করে
এই পৃথিবীর সূর্য অস্ত যাবার পর প্রতিটি মানুষ একা
খুব একা।

একাকী থাকার সময় মনের ভেতর বেজে ওঠে একাকী সাইরেন
আকাশের ভেতরে বেজে ওঠে বিকট চিৎকার
মাথার নিউরন গুলো ওলট পালট করে ভেসে আসে নিঃসঙ্গ পদশব্দ
তখন মনে হয়
পৃথিবীতে সবাই একা
সবাই
আকাশের ঐ ঈশ্বর মানুষকে একা করেই পাঠিয়েছেন
একা একা পথ চলা শেখার জন্য
হয়ত নিজের মত করে জীবন ধারনের জন্য
নিজের কষ্ট বুঝাবার এর চাইতে ভাল কোন উপায়
হয়ত ছিলইনা ঈশ্বরের কাছে।।

































হে মৃত্যু আমাকে গ্রহণ করো



হে মৃত্যু আমাকে গ্রহন করো
আমি আজ মরে যেতে চাই
যেভাবে মরে গিয়েছিল আজ থেকে বহু আগের
নাম না জানা শত সহস্র মানুষগুলো -
তাদের নাম আমরা মনে রাখিনি।

হে মৃত্যু আমাকে গ্রহণ করো
আমি যাযাবর পাখি হয়ে বেঁচে থাকতে চাইনা
বেঁচে থাকতে চাইনা কারো চোখের ভেতর
আলতো ভাবে পড়ে যাওয়া ছোট্ট কনার মত
আমি শুধু মরে যেতে চাই
শুধু মরে যেতে চাই - যেভাবে মরন হয়েছিল
পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী মানুষটির
আমি মরে যেতে চাই যেভাবে মরে গিয়েছিল
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষটির
আমি মরে যেতে চাই বয়সের ভাবে নুইয়ে যাওয়া
সেই সহস্র বর্ষী বৃক্ষের মত
বেঁচে থেকে এই পৃথিবির বুকে ঠেলাঠেলি
আমার একদম পছন্দ নয়।

তাই আজকে আমি তোমার কাছে এসেছি
আজকে আমি সেই জন্মকালের মত নগ্ন
আমি আজ সেই জন্মকালের মত একাকী
আমি আজ সেই তারুন্যের মত শক্তিশালী
আমাকে তুমি গ্রহন করো
আমাকে তুমি গ্রহণ করো যেভাবে তুমি
গ্রহণ করেছিলে মহাক্ষমতা ধারী পুরুষকে
যেভাবে তুমি গ্রহণ করেছিলে পূর্বে মৃত
সকল বিশ্ব সুন্দরীকে
আমাকে তুমি গ্রহণ করো
আমাকে তুমি আপন করে নাও
আমাকে তুমি আপন করে নাও ।

আজ অনেক দিন পর মরে যেতে ইচ্ছে করছে- মনে হচ্ছে বেঁচে থেকে কোন লাভ নেই- শুধু শুধু আমরা নিজেরা বেঁচে থাকতে চাই। মরে গেলেই সকল সমস্যার সমাধান। কোন চিন্তা নেই- ভাবনা নেই, মাথার ভেতর শুধু ঘুরছে আমার সামনেই হয়ত অপেক্ষা করছে মৃত্যু- মৃত্যু- মৃত্যু...

জীবনের এপারে ওপারে কোন সুতো নেই যে ধরে রাখতে পারে আমাকে। জীবন কি সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মাথার ভেতর ছিড়তে থাকে নিউরোন। আমি চিৎকার করে কাঁদতে গিয়ে কান্না ভুলে ফুপিয়ে উঠি। জীবনের মানে খুঁজে খুঁজে হয়রান শীতের কাকের মত আমি মরনের পানে চেয়ে চেয়ে কবিতা লিখার বৃথা চেষ্টা করি। লেখা গুলো কবিতা হয়ে ওঠেনা। আমি আজন্ম কবিতা লিখতে চেয়েছি- হে ঈশ্বর -আমাকে তুমি কবিতা লেখার ভাগ্য দিলেনা। আমাকে তুমি কবি হতে দিলেনা তোমার জগতে।

আমি আজন্ম পাপ বয়ে বয়ে বেড়াতে পারবনা -তাই আমি মৃত্যু চাই- খুব সাধারন কোণ এক মৃত্যু। খুব ছোট কোন একটা পাখির মত আমি মরে যেতে চাই। খুব ছোট কোন এক শুয়োপোকার মত আমি মরে যেতে চাই। খুব খুদ্র একটা মাছি- যার মৃত্যু হয় জন্মাবার একদিন পরেই- আমি তার মত মরে যেতে চাই। আমি মরে যেতে চাই সেই যুবকের মত যে ভালবাসার জন্য প্রান দিয়েছিল। আমি মরে যেতে চাই। এই নিলাম- বিষের পেয়ালা।

কিন্তু বিষের পেয়ালা নিয়ে মনে হল
আমি ভালবাসা পান করছি
চুষে চুষে খাচ্ছি ভালবাসার নীলচে সবুজ দানা
গিলে গিলে খাচ্ছি তলানিতে তলিয়ে থাকা
একরাশ নিস্তব্ধ রহস্য
জীবনের সবখানেই যার মাকড়শার মত বিস্তার
আমি মৃত্যুর কাছে জানতে চেয়েছি জীবনের মানে কি
আমি আকাশের কাছে জানতে চেয়েছি জীবনের সংজ্ঞা কি
আমি বালিশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষের কাছে
জানতে চেয়েছি জীবনের সংজ্ঞা কি
আমি জেনেছি- এই পৃথিবীতে জীবনের কোন সংজ্ঞা নেই
আমি জেনেছি - এই ব্রহ্মাণ্ডে জীবনের অস্তিত্ব হেঁয়ালিপূর্ণ
আমি জেনেছি- খুব সাধারন ভিখিরিও নেহাত দরকার না পড়লে
মরতে চায়না কোনভাবে।

তাই বিষের পেয়ালা হাতে আমি আবার তাকাই আমার বারান্দার চাঁদের দিকে। সেখানে খুব একাকী একটা চাঁদ- আমাকে অনেক আগে ফাঁকি দিয়ে ঝুলে পড়েছে - আমি মনে মনে বলি- হে চাঁদ- তুমি আমাকে আর ফাঁকি দিতে পারবেনা- আমি মৃত্যুর পর- মরা চোখ দিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবো অনন্তকাল। আমি মরা চোখ দিয়ে তোমার কক্ষপথে একাকী বসে বসে তারা গুনবো- তুমি আমাকে আর ফাঁকি দিতে পারবেনা। তুমি আমাকে আর কোনভাবেই অমাবস্যার আঁধারে ঢেকে দিতে পারবেনা। আমি তোমাকে ঠিক সেখানেও খুঁজে খুঁজে বের করে বানিয়ে দেব প্রতিপাদ। আমি সেখানে আবার নতুন করে জীবন এর মানে খুঁজে বেড়াব। কারন খুঁজে বেড়াব কেন মানুষ মরার আগে আবার বাঁচতে চায়-
কেন মানুষ মরার জন্য বিষ খেয়ে আবার বমি করে ফেলে দেয়
কেন মানুষ সামনে মৃত্যু জেনেও জীবনের হিসাব কষে?
কেন মানুষ ফাঁসির দড়ির নিচে দাঁড়িয়ে বাঁচতে চায়

আমি অনাদি হয়ে জানার চেষ্টা করার আগে
এই পান করে নিলাম এক গলা বিষ
হয়ত এটাই আমার শেষ লেখা

আমাকে আর খুঁজে পাবেনা তোমরা-
অবশেষে বলি- শেষ বিকেলের ঝরে যাওয়া পাতার মতন
আমাকে ভুলে যেও। আমি কারো মনের ভেতর খঁচখঁচে কাঁটা হতে চাইনা।।

নিঃসঙ্গ ড্রাফট কিনবা নিখিল ড্রাফট

মৃত্যু নিয়ে আমার অপ্রকাশিত লেখা- যেগুলো প্রকাশিত হবেনা কোনদিন

নিস্তব্ধতার সংজ্ঞাঃ ..................................নিখিল ড্রাফট ১

নিস্তব্ধতা যেন ছিড়ে ফুঁড়ে বের করে দিচ্ছে সব কিছু
নিরবতার সংজ্ঞা বুঝতে শিখিনি কোনদিন
একাকীত্বের ও তবু একটা শেকড় থাকে
নিরবতার থাকে খান কয়েক কাঁটা-নিয়েছিল আমার পিছু

মৃত্যুর পর আবার জেগে উঠতে পারি ভেবে মরতে চাইনি
মৃত্যুর শীতলতা যৌনতার ঠিক বিপরীত ছিল বলে
আমি ভয় পেয়েছিলাম দুহাত ভরে গ্রহণ করতে
নিজের চাইতে কাউকে বিশেষ ভাবে কোনদিন যে ভালবাসিনি

জীবনের পংক্তিমালা দৃষ্টির সনির্বদ্ধ সমীকরণ........নিখিল ড্রাফট ২

আমার দু ঢেল দৃষ্টিক্ষেত
তলপেটে নিখাদ পেশীর মত
দেখা যায় হিংস্রতার অবমুখ হয়ে
আমি নিনাদ করি
কেঁপে কেঁপে ওঠে সবকিছু
ভালবাসার মত নিখাদ হয়না
আমার জীবন- শুধু তাই
আমি চিৎকার করে বেঁচে থাকি
হতাশার ভেতর ক্ষোভ জমে যায়
জমা হয় এক এক করে-
আমি মরনের পর ভেসে ওঠা- থলথলে
ফুলে ওঠা লাশ হব ভেবে
ঝাঁপ দেইনি জলের কাঁপনে।

বিষের পেয়ালা নিয়ে বুঝেছি
সেখানে ভেসেছিল একবুক জলের তলায়
ভালবাসার তলানি
আমি সেই বিষের কাছে
সুখ খুঁজতে গিয়ে নিজেকে হারাব ভেবে
আমার ফিরে ফিরে এসেছি এই পৃথিবীর বুকে।

এবং তারপর আমি দেখেছিলাম সাদা বকের সুদৃঢ জীবন প্রণালী
আমি দেখেছিলাম কি জন্য ওরা বেঁচে থাকে- জীবনকে ভোগ করে
আমি দেখেছিলাম নিতান্ত অনিচ্ছায় ও বেঁচে থাকে ক্ষীণপ্রান মানুষ
আমি দেখেছিলাম কিভাবে এক বেলা খেয়েও বড় হবার স্বপ্ন দেখে মানুষ গুলো-
আমি দেখেছিলাম কিভাবে সব আশা শেষ হয়ে গেলে মানুষ আবার ঘর বাঁধে নতুন আশায়
জীবনের নতুন মানে খুঁজে পাবার জন্য আমি আবার
এবং আবার আকাশের চেতনায় বিশুদ্ধতা খুঁজি
বৃষ্টির জলে খুঁজি চুমুক চুমুক ভালবাসার ভালোলাগায় ভিজে যাবার স্বাদ কিনবা একমুঠো রোদ্দুর
রোদের কাছে খুঁজি খুব মেঘলা বিকেলে ও একচিলতে ভালবাসার রেখা এবং
এই জন্যই আমি বেঁচে থাকি
আমি আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখি
আমি আবার স্বপ্ন দেখি একটি বালিকা হয়ে বেঁচে থাকব আমি
স্বপ্ন দেখি একজন মানুষ হয়ে হেটে বেড়াব সমুদ্র তটে
স্বপ্ন দেখি আমি শুধুই স্বপ্ন দেখি
অবশেষে আমার শরীর গঠিত হয় মানুষের মত
এবং আমি সত্যিকারের মানুষ হব বলেই
কি ভেবে
নিজেকে সঁপে দেই মৃত্যুর কাছে।।


যন্ত্রনাঃ ....................................নিখিল ড্রাফট ৩
অনন্ত শীতের রাতে চাঁদ ঢেকে যায় কুয়াশার চাদরে
একা একা ঝিঁ ঝিঁ পোকা ও ডাক ভুলে যায় কোন এক সময়
আমি সেই একাকী শীতের ভেতর কুয়াশায় হারিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখি
স্বপ্ন দেখি দূর নীল নিলীমার মাঝে একাকী হেটে যাব চলন্ত রেলের দিকে
হাত বাড়িয়ে টেনে আনব মৃত্যুকে
আমি কাল গুনি কখন আসবে মৃত্যু।

লেপের তলায় থেকে শীতের রাত কাটাতে ইচ্ছে মরে গেছে বহু আগে
বেঁচে থাকার ইচ্ছেরা ও পার হয়েছে অজানা গন্তব্যে
একাকী বেঁচে থেকে লাভ নেই বলে এক সময় থেমে যায় বটবৃক্ষের বাড়ন্ত জীবন
আমি ও সেই পথে এগিয়ে যাই- একা ছিলাম একাই আছি বলে
একবার চুমু খেতে চেয়েছি মৃত্যুর মুখে ।

আমার চুমুর ভেতর জমেছিল ছত্রাকের বাসা
সেখানে ছিল একরাশ গন্ধকের ছানা
খরা পড়েছিল অজানার মন্তব্যে
তারপর আমি যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে
ঝাপ দেই মৃত্যুর কোলে।।


শেষ ড্রাফটঃ নিখিল শুধুই নিখিল
মৃত্যু মানুষের নিঃশেষ গন্তব্য।মানুষ ভেবে ভেবে নিঃশেষ হয়ে গেছে মৃত্যুর পর কি আছে। কেউ কারো থেকে কম ছিলনা কোনকালেই। কিন্তু অবশেষে কি আছে কেউ কোনদিন বলে যেতে পারেনি। কারন মরনের পর কেউ ফিরে আসেনি- কেউ বলতে আসেনি কি ছিল মৃত্যুর মাঝে?কি ছিল মরে যাবার যন্ত্রণা- কি ছিল মৃত্যুর পরের অবস্থা....

জানি মৃত্যুই মানুষের শেষ গন্তব্য। একদিন আমি ও তাই মরে যাব- মিশে যাব এই পৃথিবীর মাঝে। মিশে যাব নিখিল সমুদ্রে। তাই আমার লেখা গুলো যে গুলো আমি অন্তরালে ছড়িয়ে দিয়েছি তোমাদের জন্য- এগুলোকে ভুলে যেও আমার সাথে। খুব খুশি হব আমাকে একদম চূর্ণ করে সাগরে ফেলে দিলে।।

Monday, November 28, 2011

সূর্যোদয়ের পর

নিজেকে অচেনা মনে হতে শুরু করেছে সূর্যোদয়ের পর থেকে। অনেকটা যেন সরীসৃপ- কিনবা অন্য কোন প্রাণীর মত জিহবাএ ভেতর থেকে বেড়িয়ে আস্তে চাইছে ঠান্ডা রক্তের ঘ্রাণ-অজগর কিনবা অন্য কোন প্রাণীর মত।আহ হয়ত মরেই যাব।মরে যদি যেতেই হয়- মানুষ হয়েই মরি- কেন তবে সরীসৃপ আমি

কে জানে -হটাত কেন যেন আমি আবিষ্কার করি ভাস্কোডাগামার মত- কিনবা পাব্লো আমেরিগোর মত- আমি মানুষ নেই- জেব্রার ডোরার মত কিনবা অজগরের চামড়া বদলের মত চামড়া কেটে বের হতে চাইছে গাঢ় লালচে রক্ত-হলদে লালার মাঝে হারাতে শুরু করেছে আমার রক্তাভ লেজ।আমি যেন গিলতে শুরু করেছি নিজেকে। সাপ লুডূর সাপের মত আমি মই না পেয়ে নিজেকেই খেতে শুরু করেছি। কামড়ে কামড়ে ছিড়তে শুরু করেছি নিজের কান্না- নিজের সুপ্ত বাসনা- হত্যা করতে শুরু করেছি আমাকেই।আহা সূর্য ডুবে এখন রাত। আগামী সূর্য আর আসবেনা। তাই এখনি সময় নিজেকে শেষ করে দেবার।

এখন আমি কামড়ে আছি আমার লেজ- যেখানে একসময় ছিল আমার এক জোড়া পুরুষ্ট পা- যার একটু উপরেই ছিল আমার নিতিম্ব- খানিকটা উপরে আমার শিশ্ন। এখন সেখানে নেই কিছুই- শুধু লকলকে লেজ। সপ্ত ছিদ্রের একটা মাত্র ছিদ্র অবশিষ্ট থাকে সেখানে। ব্যাঙ্গাচির কোন জীবন ছিল কিনা জানিনা-মাতৃজঠরে আমি তো ব্যাঙ্গাচির চাইতে ও অধ্ম ছিলাম। এখন তার ও অধ্ম। বাইরে পেট মোটা নির্জীব লেজ- ভেতরে বিষাক্ত কানকো। কামড়ে ধরেই বুঝতে পারি মানুষ আমি ছিলাম না কোন কালেই। মানুষের মত মুখোশ পড়ে ছিলাম একদল পশুর মাঝে। মানুষের মত কিনবা পশুর মত আমি হেটেছি- ফিরেছি- স্বপ্ন দেখেছি। তাই আমি মানুষ হতে পারিনি। মানবতা নামের কোন বস্তুও ছিলনা কোন কালেই।যে রক্তের ধারা আমার মনে হয়েছিল গরম- টগবগে সেটা ছিল বস্তুত ঠান্ডা- সরিসৃপের মত।অবশেষে তাই আমি গিলতে শুরু করেছি পূর্বপুরুষের লাভা- উত্তর পুরুষের রক্ত- অনেকটা শুয়োপোকার মত। অনেকটা মানুষ নামের রক্ত চোষা প্রাণীর মত।

আবার চারদিকে লালচে হতে শুরু করেছে। খানিক আগে থেকে মনে হতে শুরু করেছে আমি নিজেকে মানুষ ভেবেই ভাল আছি। পশু আমার ভেতরে আছে বলেই আমি নিজেকে পশু ভেবেছিলাম।।

Friday, November 25, 2011

টিপুর জন্য গান

শব্দ হীন কবিতা তোমার জন্য
কিনবা একগুচ্ছ শব্দহীন গানের বুলি
তুমি জেনে নিও যেখানেই থাকো
তোমাকে দিলাম একটি ফুলের কলি

... কান্নার জল ছিলোনা কিছু
থেমে যাওয়া সময়ের ভীরে
মুছে যাওয়া জীবনের সাময়িক কষ্ট
থাকবেনা থেমে তোমাকে ঘীরে

তবুও শব্দহীন কিছু কান্না তোমাকে দিলাম
তবুও বাক্যহীন বেদনার বিদায়ে বিদায় দিলাম।।

Tuesday, November 22, 2011

স্বপ্ন

আমি স্বপ্ন দেখব বলে চোখ মেলেছিলাম নিখিলের পরে
সেখানে দেখেছিলাম কালো নীল চোখ
সেই চোখে আমি এখন নিজেকে দেখি
কিনবা নিজের ভেতর তোমাকে
চোখে চোখে চোখ রাখা আমাকে স্বপ্ন দেখায়
... সেই স্বপ্নে আমি শুধু দীর্ঘ পথে পথ চলা দেখি
স্বপ্ন এবং গাড়নীল সংঘাতে আমি শুধুই নিনাদিত হই
মনে হয় যেন আমি হারিয়ে যাই চোখের মায়ায়
সেই মায়া তে হারাবো বলে আমি আবার
চোখ মেলে স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করি
শুধু স্বপ্ন দেখব বলে আমি আবার হারাই
সেই নীলাভ তারার মেলায়।।



নষ্ট কবি

ভালবাসা

ভালবাসা কাকে বলে?
বুঝে ফেলার আগেই ভালবেসে ফেলেছিলাম আমি
তাই না বুঝেই যখন আমাকে চলে গেলে
তখন বুঝলাম
তুমি কখনো আমার ছিলেনা।
... ... তুমি কখনো আমার হবে ও না
দূরে ছিলে - দুরেই আছো

নষ্ট কবি

Saturday, November 12, 2011

✖✖✖✖✖পরিবার✖✖✖✖✖ রহস্য- রোমাঞ্চ- সাইকো গল্প

পরিবার /////// ১০-১১-২০১১



এই যে দেখছেন আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আমার প্রাণপাখি- ওর নাম শকুন্তলা। আমি নাম রেখেছি শকুন্তলা দেবী। দেখেন না কি মিষ্টি করে ঘুমুচ্ছে আমার কোলে- দেখেন। কি সুন্দর ওর টানা টানা চোখ দুটো- অপরূপ তাইনা? আহা দেখলে ভোলা যায়না। ভুলতে পারিনা আমি- তাই তো বার বার আমি ছুটে আসি আমার শকুমনির কাছে। আহা- ওর স্পর্শে আমার যেন সোনার কাঠির জিয়ন ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙ্গে। আমি বাঁচতে শিখি। জীবনকে ভালবাসতে শিখি নতুন করে।অপূর্ব সুন্দর তার চুল গুলো দেখলে মনে হয় যেন আমি হারিয়ে যাই। আহা কি সুন্দর মোলায়েম। আমি ওকে আদর করে ডাকি সোনাই। একদিন শকুন্তলার রুপে মজেছিল দুষ্মন্ত। প্রচন্ড কষ্ট দিয়েছিল শকুন্তলা কে। আমি কিন্তু কোনদিন আমার শকুন্তলা কে ভুলবনা। কারন আমি দুষ্মন্তের চেয়েও আমার শকুন্তলাকে ভালবাসি। তাই আজ থেকে তিন বছর আগে আমি ওকে বিয়ে করি।আর বিয়ের পর যেন নতুন করে আমি আবার মজেছি প্রেমে।আহা রুপ যেন দিন দিন ঝরে পড়ছে। আমি যখন ওর সাথে লুকোচুরি খেলি তখন মনে হয় যেন ও হাসে- আমি বাতাসে ওর হাসির শব্দ পাই- রিনিরিনি শব্দে আমি আবার ঘায়েল হই - আবার পড়ে যাই প্রেমে।

জানেন আমি না মরে গেলে ও ভুলতে পারব না ওকে। মানুষ এত সুন্দর হয় কিভাবে? কে জানে। আমি ওর মাথার চুলে হাত বুলাই- হাত বুলাই ওর নিশ্চল কপালে-চোখে-গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁটে।ওকে চুমু খেতে এত ভাললাগে- আহ- যেন স্বর্গীয় সুধা। তাই তো আমি ওকে আদর করে ডাকি সোনাই। আমি আমার সোনাই কে কখনো ভুলতে পারব না। আমি কখনোই দুষ্মন্ত হতে পারব না।

জানেন প্রতিদিন সকাল বেলা ঊঠে আমি কি করি? আমি সকাল বেলা ঘুম থেকেই উঠে সোনাই কে চা বানিয়ে খাওয়াই। অবশ্য সেই চা আমাকেই পুরোটা খেতে হয়। ও না কিচ্ছু খেতে চায়না। ঘুম থেকে উঠতেই বেলা করে ফেলে। আমি জোর করে জাগাই। চা খাওয়াই। তারপর কোলে করে নিয়ে যাই বাথরুমে । সেখানে আগে থেকে তৈরি থাকে সাবান গোলা জল। আমি ওকে প্রতিদিনের মত স্নান করিয়ে দেই। ওনা লক্ষ্মি মেয়ের মত চুপটি করে থাকে। এত লক্ষ্মি মেয়ে দেখেছেন কখনো? জানি দেখেন নি। জানেন ওর না শরীরে একটা দাগ ও নেই। একটা ও না। শুধু নাভির নিচে একটা সামান্য কাঁটা দাগ আছে- আমি সেটাকে দাগের সংজ্ঞা থেকেই বাদ দেই। এই মিহি দাগটা ছাড়া কোন দাগ নেই ওর শরীরে। হলুদ আলতা মেশানো গায়ে চমৎকার দেহবল্লবী। আমি না ওকে স্নান করাতে গিয়ে আবার পাগলামি শুরু করে দেই। দেখা যায় সেখানে ই সব কাজ ফেলে আমরা দুজনে ....

হুম কি ভাবছেন? জানেন আমরা না দুইজন খুব সুন্দর জুটি। আর আমার এক বদভ্যাস- আমি ওর কাছে গেলেই পাগলামি শুরু করে দেই।আর ও যেন অপেক্ষা ই করে আমি কখন আদর করব ওকে। আমাকে যদি একটু ও বাঁধা দিত। আমি ও যেন পাগল হয়ে যাই। আস্কারা পেয়ে মাথায় উঠেছি। দেখা যায় স্নান আর খাওয়া ছাড়া ওর সাথেই সারাদিন কেটে যায়। অবশ্য বাড়ির অন্যান্য রা ও বুঝে আমাদের ভালবাসা। তাই তো মা আর বোন আমাকে একটু ও বাঁধা দেয় না। আর আমি ওর নরম পেল্ব ঠোটের মাঝে হারাই বারে বার। কেন হারাব না বলুন? ওকে দেখলে ই যে কেউ ওর প্রেমে পড়ে যাবে।এত সুন্দর মানুষ হয়না। মানুষ এত সুন্দর হতে পারেনা। ও হয়ত মানুষ না- অন্য কিছু। আমার জানটুসের মত মানুষ হয়না। আপনি একবার ওকে উপলব্ধি করতে পারলেই দেখবেন আপনি ও ... কিন্তু না- তা হবেনা- আপনাকে আমি উপলব্ধি করতে দিলে তো। ওকে শুধু আমি ভালবাসব। শুধু আমি। ও শুধু আমার ।

অবশ্য ওর সাথে যে আমার মনমালিন্য হয়নি তা না। একবার ও পাশের বাড়ির স্বরূপের সাথে একটা বাজে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। আমি ওকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ও শোনেনি। পরে আমাকে সরি বলেছিল । তাই আমি ও ওকে আবার আপন করে নেই। কিন্তু ঐ হারামজাদা স্বরূপ কে আমি ছাড়িনি। কারন আমি মনে করেছিলাম ও সোনাই কে ভুলে যাবে। কিন্তু একদিন ওকে আমি আমার সোনাই এর সাথে একরুমে দেখে ফেলি। ঐ দিন আমার এত রাগ উঠেছিল না। ঐ দিন আমি স্বরূপ কে বেঁধে পিটিয়েছিলাম। কারন আমার সোনাই ও হারামজাদা স্বরূপ কে ভালবেসে ফেলেছিল। আমি জ্বলেছিলাম- তাই স্বরূপ কে জ্বালিয়েছিলাম। আমি সত্যি সত্যি ওকে জ্বালিয়েছিলাম। না না আগুনে না- এসিডে।স্বরূপের গায়ে আমি দুই মগ এসিড ঢেলে ছিলাম। সেদিন আমি স্বরূপ কে মারার সময় ভিডিও করে সেটা সোনাই কে দেখিয়েছিলাম। সেই ভিডিও দেখে সোনাই এর চেহারা এমন হয়েছিল না- দেখার মত। হা হা হা। আমার ভেতরে জ্বালা আমি স্বরূপের উপর ঢেলেছি।

জানেন সেই ভিডিওটা দেখে আমার সোনাই বিষ খেয়েছে। আমি সকালে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তখন বিষ খেয়েছে। একটা ক্রিটিক্যাল অপারেশন ছিল। সেটা করতে গিয়েছিলাম- সেই ফাঁকে সোনাই বিষ খেল- তারপর তরপাতে তরপাতে মরল। আমি বাসায় এসে দেখি আমার জানটুস মরে পড়ে আছে। শক্ত হয়ে গেছে শরীর। আহ কি ভয়ংকর। আমি ভাবতে ও পারিনা। আমার অসাবধানতার জন্য আমার বউ মরে পড়ে থাকবে? আমি ওকে কোলে নিয়ে একটানা দুই দিন কেদেছিলাম। এভাবে আমার বাবা মারা যাবার পর ও কাঁদিনি।

তারপর হটাত দেখি পঁচতে শুরু করেছে আমার সোনাই। পঁচতে শুরু করেছে ওর সোনাবরন দেহ। পঁচে গন্ধ বের হয়েছে ওর হৃদয় থেকে- যেটা ছিল আমার- শুধু আমার। সেখানে বাসা বাঁধতে শুরু করেছিল পোকা মাকড়। আমি ঠিক সেই সময় সিদ্ধান্ত নেই সোনাই কে কবর এ ফেলে দেবনা। ছেড়ে দেবনা আমি ওকে পোকা মাকড়ের আস্তানায়। আমি প্রতিদিন ঊঠে ওর চাঁদ মুখ দেখব।ওর পেলব ঠোঁটে চুমু খাব।ওর বুকে মাথা গুঁজে শুয়ে থাকব দিনের পর দিন। তাই শুধু মাত্র সোনাই এর শরীরটা বাঁচাতে আমি ছোট্ট একটা অপারেশন করেছি। জানেন সেই অপারেশন করতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। অনেক কেঁদেছি আমি। মনে হচ্ছিল আমার জানটুস ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।তাই আমি খুব সাবধানে শরীর থেকে সব পঁচে যাওয়া অংগ ফেলে সেখানে খড় ঢুকিয়ে দিয়েছি । তাই তো দেখেন ওর পেটের দিকটায় কেমন যেন শক্ত।কিন্তু এখন ও এতদিন পর ও টিকে আছে ওর সেই পেলব ঠোঁট। এখন ও আগের মতই দ্যুতি ছড়ায় ওর সোনাবরন শরীর। ওর সাথে মিলনের সময় খানিকটা কষ্ট হয়। ও আমাকে আগের মত জড়িয়ে ধরেনা। শুধু সান্তনা ও আর কাউকে জড়িয়ে ধরবেনা। ও এখন শুধু ই আমার। আমাকে আগের মত আদর করেনা। আঁচড়ে পাঁচরে আমাকে পাগল করে তুলেনা সঙ্গম কালে। চিৎকার করে আমাকে করেনা আদিম পুরুষ। একদম চুপচাপ থাকে সে। এতে আমার কোন সমস্যা হয়না। আমি তো ওকে আগের থেকে ও বেশী ভালবাসি- তাইনা?

কি আমাকে পাগল ভাবছেন? নাকি ভাবছেন সাইকো? ভাবছেন আমাকে ডান্ডা বেরি পরিয়ে নিয়ে যাবেন পাগল খানায়? হুম তা পারবেন না। আমাকে ঢাকায় দেখতে এসে আমার মা আর বোন ও তাই করেছিল। কিন্তু আমি ওদের ও চুপ করিয়ে দিয়েছি। জানেন- আমি চাইনি ওদের মেরে ফেলতে- কিন্তু ওরা যেন কেমন হয়ে গেছিল। পাগল পাগল বলে নিজেরাই পাগলামি শুরু করে দিয়েছিল। তাই আমি ওদের মেরে ফেলেছি। কিন্তু এক দম ফেলে দেই নি। ওরা এখন আমার ডাইনিনে বসে থাকেন। যেমন চুপ করে থাকে আমার সোনাই। ওইখানে আজকে একটা পার্টি আছে।

জানেন- আজকে আমার বোনটার ২৫ বছর হবে। ওর জন্য পার্টি হবে বাসায়। আমি সবাইকে সাজিয়ে গুজিয়ে বসিয়ে রেখেছি। এখন সোনাই কে সাঁজাবো। তারপর পার্টি শুরু হবে। আমি বেলুন এনেছি- কেক এনেছি। ওরা কেউ খাবেনা। তবু ও আমি এনেছি। সব আমাকেই খেতে হবে। তবে এখন আগের মত সবার খাবার একা খেতে পারিনা। বয়স হয়ে যাচ্ছে। তাই ভাবছি আমার বোনটার জন্য একটা বর খুঁজব। ভাই হিসেবে একটা দায়িত্ব আছেনা? দেখেন আমার বোন কিন্তু অনেক লক্ষ্মী। অনেক ভাল একটা মেয়ে। ওকে বউ হিসেবে পেলে কিন্তু আপনি খুশিই হবেন। আর একটা কথা না বললেই না- আপনাকে না আমার খুব পছন্দ হয়েছে। জামাই হিসেবে আপনার সাথে ওকে দারুন মানাবে। বিয়ে করবেন আমার বোনটাকে? বেচারি অনেক একা। প্লিজ- করেন না। আপনাকে ও আমার পরিবারের একজন বানাবো। তারপর আপনাকে কিছু ই করতে হবেনা। আপনাদের ম্যারিজ এনিভারসারি ও আমি ই নিজ দায়িত্বে পালন করব। কি হবেন? আমার পরিবারের একজন?


(সমাপ্ত )

Saturday, November 5, 2011

✖✖✖✖✖চরিত্র ✖✖✖✖✖ রহস্য রোমাঞ্চ ভৌতিক গল্প

আমি যখন লিখি তখন কোন রকম যোগাযোগ মাধ্যম আমার সাথে থাকেনা। এক মনে লিখি- তাই সাথে আমি মোবাইল ও রাখিনা। রাখলে ও সেটা থাকে সুইচ অফ। ইন্টারনেট - টেলিভিশন- সিনেমা দেখা- সব আমার বন্ধ হয়ে যায়। আমি কয়েকদিন স্নান- খাওয়া- ঘুম বাদ দিয়েই লিখতে থাকি। নেশাখোরের মত লিখি। আমার কোন দিকেই কোন খেয়াল থাকেনা। কারন আমি প্লট ভুলে যেতে থাকি। ভুলে যেতে থাকি যেটা হটাত মনে এসেছিল। তাই আমি কারো সাথেই যোগাযোগ করিনা। কারো দিকেই খেয়াল রাখিনা। এই সময় টা আমার স্ত্রী সোমার জন্য এক খারাপ সময়। ও এই সময় মন মরা থাকে। ওকে সময় দিতে পারিনা। কথা বলতে পারিনা আমার মেয়ে নীলার সাথে। খেলার সাথি আছি আমিই- আমার সাথেই সারাদিনের পর পড়া শেষ করে খেলে নীলা মনি। কিন্তু এই লেখালেখির সময় কেমন যেন মুখ গোমড়া করে ড্রইং রুমে বসে থাকে। সোমা ও মুখ গোমড়া করে বসে থাকে। কিন্তু আমার কিছু করার থাকেনা। আমি লিখি- লিখতেই থাকি। কারো দিকে তাকাবার সময় থাকেনা। আমি তখন হারিয়ে যাই আমার গল্পের চরিত্র গুলোর মাঝে।

আমি একজন লেখক- কিন্তু আমার খুব একটা বই বের হয়নি। হাতে গোনা মাত্র দশটা। সব গুলো রহস্য উপন্যাস। আমি আগে লিখতে পারতাম না। কিন্তু এক সময় খুব ভাল গল্প বানাতাম। এখন সেই গল্প গুলোকে উপন্যাসের রুপ দেই। এটার জন্য আমাকে পড়ে থাকতে হয় একা একা। আমার লেখার রুমে আমি লেখার সময় এই জন্যই কারো প্রবেশ নিষেধ। করলে ও আমাকে ডাকা নিষেধ। কারন আমার মনযোগ ব্যাহত হয়। আমি রেগে যাই। উল্টা পালটা কান্ড ঘটাই। সবার মনে হয় আমি পাগলামি করছি। কিন্তু আমি তো জানি আমি কেন করি। আমি পাগলামি করি- কারন আমি লিখতে ভালবাসি। আমি পাগলামি করি- কারন লেখাই আমার জীবন। আমি সারা মাস ঘরেই বসে কাটাই। কিন্তু মাসে দিন পাঁচেক আমি থাকি একদম একা। এই সময় আমার লেখাই হয় আমার জীবন।

কিন্তু সেইবার আমি পারিনি। কারন আমার বাসায় চলে এসেছে আমার ছোট বোন- বোনের জামাই এবং তাদের দুই বিচ্ছু। নীলা মনির জন্ম হয়নি তখনো- এই বিচ্ছু দুইটাই ছিল আমার জান। আমার খেলার সাথি। আমি বড়- কিন্তু মামার কাছে ভাগিনা ভাগিনী এক অন্য রকম আনন্দের উৎস। আমি ওদের সাথে এক সময় খেলতাম। নীলার জন্মের পর তাই ওরা আমার সাথে তেমন খেলতা পারেনা। আমি ও ওদের কে তেমন সময় দিতে পারিনা। এক জন এবার ক্লাস টেনে। কিন্তু এখন ও মামা বললেই পাগল হয়ে যায়। আমি ওদের কাছে এখন ও সেই ছোট মামাই রয়ে গেছি।

সেইবার আমাকে বাংলাবাজারের একাতন প্রকাশনীর সকাল মাহিন ভাই বললেন একটা সিরিয়াল গল্প লিখতে। এটা একটা উপন্যাস সিরিজ হিসেবে বের করতে চান উনি। আমার ও সেই সময় টাকার দরকার ছিল। বাজারে আমার বই কিন্তু দেদারসে চলে। কিন্তু নীলা মনি আবদার করেছে আমাকে একটা গাড়ি কিনতে হবে। প্রতিদিন রিক্সায় যেতে যেতে ওর হাটু ব্যাথা হয়ে গেছে। আমার এত টাকা ছিলনা গাড়ি কেনার মত। কিন্তু মেয়ের আবদার। তাই টানা দুই সপ্তাহের জন্য আমি বিদায় নিলাম নিজের বাসা থেকে। বিদায় নিলাম বললে ভুল হবে- কাউকেই কিছু না জানিয়ে একটা চিঠি লিখে বিদায় নিলাম । চিঠিতে ঠিকানা দেয়া ছিলনা। শুধু লেখা ছিল আমি যেখানেই আছি- ভাল আছি- এটুকুই। সাথে কিছু টাকা পয়সা ও ছিল। সোমা কে দিয়ে গিয়েছিলাম । এই সময় টুকু যেন বাচ্চা কাচ্চা গুলোকে সে সামলায়। আর এটা বলেই আমি উদাও।

কিন্তু উদাও হতে গেলেই কি উদাও হওয়া যায়?? আমি যেন পড়লাম অথই সাগরে। একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিলাম। কিন্তু সেটার পাশে চলছিল কন্সট্রাকশনের কাজ। আমাকে প্রথম দিনেই ভাগতে হয়েছে। আমি শব্দের মাঝে লিখতে পারিনা। লিখতে পারিনা কোন গোলমালের মাঝে। লেখার সময় নিঃশব্দ চাই- লেখার সময় চাই এক অন্য রকম পরিবেশ। তাই আমি প্রথম দিনের মাঝেই ভেগেছি। গিয়ে উঠলাম আমার এক বন্ধুর বাড়িতে। ছেলে মেয়ের চেচামেচি নেই সেখানে। বন্ধু থাকে একা। কিন্তু সেখানে ও আমার মন টিকল না। শেষে আমাকে বন্ধু রেগে গিয়ে বলল চলে যেতে কোন এক জংলে।কথাটা আমার খুব মনে ধরল। আমি খুঁজতে লাগলাম একটা জংগুলে পরিবেশ। তাতে ও আবার সমস্যা। আমি খুঁজে পেলাম না। আতঙ্কিত হলাম জেনে যে বাংলা দেশে আস্তে আস্তে বনজঙ্গল কমে যাচ্ছে। মানুষ গাছ কেটে ফেলছে। কিন্তু বান্দরবানের দিকে কিছু পাহাড়ি জংগুলে পরিবেশ আছে এখন ও। সেখানেই নাকি একটা কাঠের রেষ্ট হাউজ আছে- কিন্তু পরিত্যাক্ত। আগে মানুষ থাকত- এখন কেউ থাকেনা। আমি শুনেই চলে গেলাম সেখানে। আমার উদ্দেশ্য ছিল দিন সাতেক থাকতে পারলেই হবে। কিছু খাবার দাবার আর কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেলাম সেখানে। ঘটনার শুরু সেখানেই।

আমি সেই কাঠের রেষ্ট হাউজ টা দেখে অনেক পছন্দ করে ফেললাম। জায়গাটার চারপাশে নীলচে পাহাড় আর নিলচে পাতার বন। দূরে কিছু কিছু যায়গায় ঝরনা। মাঝে মাঝে ভেসে ভেসে আসে কলকল পানির শব্দ। কেমন যেন এক মায়াময় স্বর্গীয় পরিবেশ। আমাকে নিয়ে গেল যেন এক স্বপ্নের জগতে। আমি ঘরটার সব থেকে ছোট রুম টা বেছে নিয়ে পরিষ্কার করে ফেললাম। সেখানে একটা খাট ছিল - কাঠের চৌকি বলাই ভাল। আমি সেটাতে শুয়ে শুয়ে লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। মাঝে মাঝে আমি শুয়ে শুয়ে লিখি। শুয়ে শুয়ে লেখার মাঝে একটা আনন্দ আছে। অবশ্য বসে বসে লেখা উপন্যাস গুলোই আমার সবচাইতে সাড়া ফেলেছে বেশী। তার ভেতর একটা উপন্যাস থেকে নাটক ও হয়েছে। প্রায় সময় তাই এখন নাটক লেখার ফরমাইশ আসে। কিন্তু আমি পারিনা। আমি শুধু রহস্য গল্প লিখি।

সেই রুমে সন্ধ্যার মধ্যেই লেখার পরিবেশ তৈরি করে ফেললাম। কারেন্ট নেই সেখানে। তাই অনেক গুলো মোমবাতি জোগার করলাম। সাথে লাইটার- ম্যাচ- আরো অনেক কিছু। রান্না বান্না করে ফেললাম একটা স্টোভ নিয়ে এসেছিলাম- তাতে। তারপর লেখা শুরু করলাম।

আমার নতুন গল্পটার প্লট ছিল একটা মানুষ কে নিয়ে- যে ছিল একজন লেখক।ঠিক আমার মতই। আসলে লেখক তার লেখার মাঝে নিজের চরিত্রকে সব চাইতে বেশী ফুটিয়ে তুলতে পারে। তাই আমার নিজের চরিত্রকে নিয়েই লিখব ভেবেছিলাম। যেই ভাবা সেই কাজ। আমার গল্পের লেখক চরিত্র তার গল্প লেখার জন্য এসেছে বান্দর বানে। সেখানে সে লিখতে বসেছে। এগিয়ে যেতে শুরু করে আমার গল্প। গল্পে কৌশলে এই রেষ্ট হাউজ টাকে ও ঢুকিয়ে দিলাম। লেখকের কি যে ক্ষমতা সেটা লেখক ই জানে।

উপন্যাসের মোড় ঘুরছে। লেখক লিখে চলেছে একটা উপন্যাস। উপন্যাসে কিভাবে ভুতুরে ব্যাপার ঢুকানো যায় সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে লিখে চলেছি। হটাত মনে হল- যদি এই লেখকের একটা ডুব্লিকেট হটাত করে ভুতুরে ভাবে তৈরি করা যায়- তাহলে মন্দ হবে না। যেই ভাবা সেই কাজ। সাথে সাথে লেখার ভেতর লেখকের পাশে উপস্থিত করালাম লেখকের মত দেখতে আরেকজন মানুষ কে। ঠিক মানুষ না- মানুষের মত কেউ একজন। লেখকের মত বেশ ধারন করেছে। উদ্দেশ্য খারাপ না- লেখকের একাকীত্বে বিঘ্ন ঘটানোই এর কাজ। এ এসে লেখকের মনযোগ বিঘ্নিত করবে। এবং লেখকের লেখার বারোটা বাজাবে। ভাবতে ভাবতে লিখে চলেছি। লেখার মাঝে মাঝেই সিগারেট খাবার অভ্যেস আমার। মোমবাতির আলোয় লেখার মাঝে সিগারেটে টান- ফুসফুস ভর্তি নিকোটিন- এবং এগিয়ে চলেছে লিখে যাওয়া।

কিন্তু এমন সময় কেউ একজন যেন আমার পাশ থেকে বলে উঠল-
"এখন কি সিগারেট টা না ধরালেই নয়?"

আমি লিখতে লিখতেই হটাত করে যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। ঘরে আমি ছাড়া কেউ নেই। কেউ থাকার কথা ও না। কিন্তু কেউ একজন বিরক্ত হয়ে আমাকে সিগারেট খেতে না করল। আমি খানিকটা বিরক্ত ই হলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে রুমটা দেখে নিলাম- কেউ নেই। থাকার কথা ও নয়। মনের ভুল মনে করে আমি আবার সিগারেটে একটা সুখটান দিলাম। এবং সাথে সাথে আমার পেছন থেকেই কেউ একজন পুরুষ কন্ঠে আবার বলে উঠল-

"আপনাকে না সিগারেট না খেতে বলেছি?"
আমি সেই রকম ভয় পেয়ে গেলাম কথাটা শুনে। আমার পেছনেই কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আমি জানি এই ঘরে কেউ নেই। একটু আগেও কাউকেই দেখিনি। আমি ভয়ে ভয়ে ঘাড় ঘুরালাম। যা দেখলাম তাতে আমার মাথা ঘুরে গেল। আমার পেছনে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার ই মত একজন। আমার মত পোষাকে। হটাত যেন হার্ট বিট বন্ধ হয়ে গেল আমার। ভয়ে হাত পা জড়বস্তুর মত হয়ে গেল।
মনে মনে বললাম- আমি যা দেখছি- সব হ্যালুসিনেশন- সব মিথ্যা। কথাটা পাঁচবার বলে আবার তাকালাম- ভেবেছিলাম- দেখবনা নিজের চেহারার সেই মানুষ্টাকে- কিন্ত্ মানূষ্টা দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে আমার পেছনে। আস্তে আস্তে হেটে হেটে এসে আমার বিছানায় বসল। আমার ঠিক পাশেই। আমি লিখতে লিখতে শোয়া থেকে কখন যে উঠে বসেছি- খেয়াল ছিলনা। আমি সেই বসা থেকেই যেন পড়ে যাব খাটের উপর- এমন মনে হল। ঘাড় ব্যাথা শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। আমি সব আনলে ও প্রেশারের ঔষধ আনতে ভুলে গেছি। আমি তো জানতাম না আমার লেখার ভেতর থেকে একটা চরিত্র সামনে এসে দাঁড়াবে। জানলে আমি এখানেই আসতাম না।

" কি ভয় পেলে??" কেমন যেন ভয়ানক গলায় বলল সে।
আমি আসলেই অনেক ভয় পেয়ে গেছি। জীবনে কোনদিন ভুত দেখিনি। এই প্রথম। তা ও যদি সিনেমা টীভিতে দেখা ভুত গুলোর মত হত। এই ভুত অনেকটা - না না ঠিক আমার মত দেখতে।

" ভয় পাবো না তো কি নাচবো??" রেগে গেলাম আমি।
" না না রাগবেন না। আমাকে দেখে ভয় পাবার কিছু ই নেই। আমি আপনার লেখার ঐ ভুত চরিত্রটা। আপনাকে ভড়কে দেব বলে আপনার মাথা থেকে বের হয়েছি"- বলেই পেত্নি মার্কা একটা খিল খিল হাসি দিল সে।

এদিকে আমার মাথার ভেতর চিন্তার ঝর। এখন কি হবে? একে কি আমার মত ই দেখা যাবে? তার মানে আমি এখন দুই জন? ভাবতে ভাবতেই সে বলে উঠল-
"হ্যাঁ আপনি এখন একা নন- আপনার কোন ভয় ও নেই- আপনি এখন দুই সত্ত্বা। এখন আমি ও আপনি- আপনি ও আমি। হে হে হে ' সে কি বাজখাই হাসি। এভাবেই আমি হাসি ভাবতেই রাগ ঊঠে গেল। এই হাসি ৯ বছর ধরে সোমা সহ্য করেছে কি করে? কিন্তু সেই উত্তর দিল-

" কারন সোমা আপনাকে অনেক ভালবাসে। আপনার মেয়ে ও অনেক অনেক ভালবাসে।" বলে কেমন যেন চোখে তাকাল ও আমার দিকে। হায় হায় কি হবে এখন- ও যে আমার সব কথা চিন্তা করার আগেই বুঝতে পারছে। তার মানে আমি আর সে একজন। কিন্তু দুইটা শরীর। ভাবতে ভাবতে সে আমার দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিল। আমি কি মনে করে ছুঁতে গিয়ে একটা শক খেলাম যেন। ওর শরীর ভয়ানক গরম। যেন জ্বর ১০৬ ডিগ্রি। আমি ওকে বললাম-

" তোমার শরীর এত গরম কেন?"
" কারন তোমার শরীর এখন অনেক ঠান্ডা" বলে হাসি হাসি মুখে তাকাল আমার দিকে। আমি নিজের শরীরে হাত দিলাম। গলায়- ঘাড়ে হাত দিয়েই বুঝলাম আমার শরীর অনেক ঠান্ডা- অনেক। যেন মরে গেছি আমি।

ভয় পেয়ে গেলাম আরো। আমি কি মারা গেছি? নাকি আমি মারা যাচ্ছি? আমার নিজের মত একজন আমার শরীরের তাপ শুষে যাচ্ছে- আমি কিছু করতে পারছিনা। কি এক আজব। আমি লেখা ফেলে উঠে দাড়ালাম- হটাত এক বিশ্রী গালি দিয়ে বললাম-
" তুই এখন বের হ- এখনি বের হ। আমি তোকে দেখতে চাইনা। তোর কোন অস্তিত্ব নেই। "

কথা শুনে সে হাস্তেই থাকল- হাস্তেই থাকল। আমি ও নিরুপায় হয়ে আলো নিভিয়ে দিলাম। খাতা পত্র মাটিতে ছুড়ে ফেলে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু কি ঘুমাব? এই আমার কপি পেষ্ট লোকটা আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি- আমি ই আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছি। কেমন যেন পাগল পাগল ভাব হয়ে গেল আমার।

পরদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গল অনেক বেলা করে। ঘুম থেকে উঠে আমি কাঊকেই দেখলাম না আমার সামনে। নিশ্চিন্ত হলাম। কিন্তু এই রেষ্ট হাঊজে আর থাকবোনা ডিসিশনন নিয়েই চলে আসলাম ঢাকায়- আমার নিজের বাসায়।

কিন্তু সেখানে আমার জন্য চুড়ান্ত বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। আমি আসার পরেই দেখলাম আমার ঘরে এসে সেই কপি পেষ্ট মানূষ টা বসে আছে। কেউ দেখছেনা। শুধু আমি দেখছি। আমার ই মত একজন আমার রুমে বসে আছে।

সেই দিন থেকে আমার দিনগুলো বিষাক্ত হতে শুরু করেছে। আমি যেখানে যাই- সেই লোকটা আমার পিছে পিছে যায়। কয়েক হাত দূরে থাকে। একবার রিক্সায় করে বাসায় যেতে আমাকে ছিনতাই কারী ধরল। আমি ভেবেছিলাম সব গেছে। কিন্ত্ কেন যেন হটাত ছিনতাই কারী নিজেই ভয় পেয়ে গেল। ভয়েই কিছু না নিয়ে পালাল। আমি ভাবলাম কি সমস্যা? হটাত রিক্সায় দেখলাম আমার পাশেই আমার মত সেই লোক বসে আছে। সেদিন অনেক মজা পেলাম। কিন্তু সমস্যা হল- আমি সোমাকে নিয়ে একটু ও একাকী থাকতে পারিনা। আমার সামনে বসে থাকে সে। প্রথম প্রথম অস্বস্তি লাগত। এখন লাগেনা। এইত- আমার পেছনে এখন ও বসে আছে সে। আমার ই মত দেখতে। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন??

না দেখবেন কিভাবে? আপনি তো আমার লেখা গল্প পড়ছেন। কিন্তু সে আমাকে কথায় কথায় বলেছে- সে নাকি যে কারো মাথায় প্রবেশ করতে পারে। তাই ভাবছি- ওকে আপনার হেপাজতে দিয়ে দেব। কি নিবেন নাকি ? আপনার মত একজন? ঠিক আপনার মত। সব কিছু একই থাকবে। সে হবে আপনার একান্ত সঙ্গী। পরম বন্ধু। যদি চান তবে এই গল্প টা আবার পড়েন। তাহলেই মজা টের পাবেন ...........


(সমাপ্ত)

Thursday, November 3, 2011

✖✖✖✖✖লাশকাটা ঘরে✖✖✖✖✖ - ভৌতিক বড় গল্প



ঝির ঝির শব্দে একটানা বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। চারপাশ নিস্তব্দ- নিশুতি রাত মনে হলেও রাত মাত্র সাড়ে এগারোটা। কিন্তু এই মিরস্বরাই মেডিক্যাল এর লাশ ঘরের চারপাশে যেন নেমে এসেছে নিঝুম অন্ধকার-সাথে টিপটিপ বৃষ্টি। সালাম একটু আগে ভ্যান নিয়ে এসেছে এখানে। উদ্দেশ্য ছিল রমেশ ডোম কে লাশ টা বুঝিয়ে দেবে। পুলিশ কেস। লাশ টা একটা যুবতী মেয়ের। বয়স আন্দাজ ২৪ হবে। স্বামীর সাথে রাগ করে বিষ খেয়েছে। পুলিশ আসতে আসতে ফুলে ঢোল হয়ে গেছে লাশ। ফোলা লাশটা কে মেডিক্যাল এ ময়না তদন্ত করতে পাঠিয়েছে সালাম কে দিয়ে। সালাম এই লাশ বহনের কাজ করছে চার বছর ধরে। এই সব কাজে কখনো ভয় পায়নি সে। আরও বেশ ভালই লাগে ওর।অনেক দূর থেকে লাশ নিয়ে আসতে হলে সালাম এর ডাক পড়ে এই জন্য। অবশ্য টাকা ও কম পায়না। প্রতিটা লাশ টানার জন্য ৬০০ টাকা পায় সে। এ দিয়ে সপ্তাহ খানেকের নেশার টাকা হয়ে যায়- ভাবতে ভাবতে আরেকটা গাঁজা ভরা সিগারেট ধরাল সালাম। সে মর্গের বাইরে অপেক্ষা করছে রমেশের জন্য। রমেশ আসলেই ওকে লাশ বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাবে সে।

নিশুতি রাতে বের হলেই এক বোতল বাংলা নিয়ে যায় সালাম সবখানে । এভাবে প্রায় সময় ওকে মর্গের বাইরে বসে থাকতে হয়। সরকারী চাকরি করে রমেশ।তাই কোন সময় আসে সেটার কোন ঠিক থাকেনা। আর লাশ ফেলে রেখে ও যাবার উপায় নেই। রমেশের হাতের আঙ্গুলের ছাপ একটা সরকারী কাগজে নিতে হয় ওকে।এই ছাপের জন্য ই বসে থাকে প্রায় সময়। এই অপেক্ষার সময় টা বাংলা খেয়ে কাটায়। পাঁচ দিন আগে একটা লাশ নিয়ে এসেছিল সে। সেই সময় বেশ টাকা পেয়েছিল। তাই আজকে সাথে গাঁজার পুরিয়া ও আছে।তাই সময়টা মন্দ কাটছে না। মর্গের বাইরে টুল পাতা আছে- সেই টুলে বসে বসে আরেকটা বিড়ি ধরাল সালাম।

গাঁজা খাবার অভ্যাস সেই ছোট বেলা থেকেই ছিল সালামের। একসময় গাঁজা বিক্রি করত রেললাইনের বস্তি তে। সেখান থেকে চলে আসে পনের বছর বয়সে। সেই থেকে ভ্যান চালায় সালাম। এই পেশায় খুব একটা টাকা আসেনা দেখে থানার দারোগা বাবুর হাতে পায়ে ধরে চার বছর আগে লাশ টানার কাজ টা পেয়েছিল। সেই থেকে কপাল খুলেছে সালামের। দুই বছর আগে বিয়ে ও করেছিল। কিন্তু সংসার টেকেনি। ওর বউ ফুলবানু নাকি রাতের বেলা ওর শরীরে লাশের পঁচা গন্ধ পায়। মাস তিনেক আগে তাই তালাক দিয়ে চলে গেছে আরেকটা লোকের সাথে। ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সালাম। অনেকবার চেয়েছিল এই পেশা ছেড়ে দেবে। কিন্তু পারেনি। পেটের দায়ে এখন ও এই পেশায় পড়ে আছে।

বৃষ্টি থেমে গেছে একটু আগে। এখন মাটিতে সোঁদা গন্ধ- সাথে সালামের গাঁজার ফ্যাকাসে গন্ধ মিলে একটা অন্য রকম পরিবেশ তৈরি করেছে মর্গের আশ পাশে। এর মাঝে বাংলার বোতল ও প্রায় শেষ করে ফেলেছে- এমন সময় হটাত করেই ওর সামনে এসে হাজির হল রমেশ ডোম। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু এখন ও শরীরে প্রচণ্ড শক্তি। আর এই বয়সে ও দিব্যি মাল খেয়ে বেড়ায় সে। সারাদিন ঘুমায়- রাতে এসে লাশ কাটাকাটি করে। সালামের সামনে এসে দাঁড়াতেই সালাম চমকে ঊঠে বলল-

"কে গো? রমেশ কাকা নাকি?"
অনেক ক্ষন চুপচাপ থেকে হো হো করে হেসে ফেলল রমেশ। কিন্তু অন্ধকারে সেই হাসি শুনে হটাত করে যেন ভয় পেয়ে গেল সালাম। বলল-

" কি গো রমেশ কাকা? এমুন করি হাস কেন?"

" কিছু না রে সালামইয়া- দেখলাম তুই কতটা ডরাস রাইতে" বলেই আবার হাসি শুরু করে দিল রমেশ।

রেগে গেল সালাম- " হ- আমিই ডরাই- আর তুমি যে আমারে এতক্ষন বসায়া রাখলা- এই লাশ ঘরের সামনে বইতে বইতে আমার পা দুইখান শেষ হই গেল। এতক্ষন যে তুমি বৃষ্টিরে ডরাই লা?? "

" না রে সালাম- আমার ঘর থেইকে বের হইতে দের হই গেছে। ভাবলাম থানা থেকে লাশ আসিছে- তোকে বসায়া রাখুম না- কিন্তু হটাত বৃষ্টি শুরু হইল- কি করুম- আমার কাছে তো ছাতি নাই- তাই বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত আমি বাইর হইলাম না। "

সালাম তাকিয়ে দেখল রমেশের শরীর শুকনা। তবে সে একটা সাদা কাপড় লুঙ্গির মত পড়ে আছে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি- সাথে খালি গায়ে সাদা লুঙ্গি পরিহিত রমেশ কে দেখে খানিক্টা ভয় পেল সালাম। বলল-
" দাও গো কাকা- কাগজ টাতে একখান টিপ মাইরা- আমি চলি যাই- বেশ রাইত হইসে। ঘরে যামু।" বলে পকেট থেকে কাগজ বের করে এগিয়ে দিল রমেশের দিকে।

কিন্তু রমেশ যেন দেখে ও দেখল না- বলল-

" তা তো যাইবাই- কিন্তু আজকা তোমারে ছাড়ুম না চান্দু- তোমারে আমার লাশ কাঁটা দেখামু "- বলে আবার হো হো করে হেসে ফেলল রমেশ।

" না না- আমার কোন স্বাদ নাই দেখনের। তুমি কাট তোমার লাশ- আমারে টিপ দাও- আমি যাইগা-" বলেই ঊঠে পড়তে চাইল সালাম- কিন্তু রমেশ সালামের বাম হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে গেল লাশ কাঁটা ঘরের সামনে। কোমড় থেকে চাবি বের করে খুলে ফেলল দরজা। তারপর চাবির গোছাটা ভেতরে রেখে ভ্যান এর সামনে নিয়ে আসল সালাম কে- বলল-

" নাও বাছা ধর তো- নিয়া যাই ভেতরে-"

সালাম না করল না। দুইজনে মিলে মেয়েটার লাশটাকে তুলে নিয়ে গেল লাশঘরের ভেতরে। সেখানে একটা সাদা কাপড় পাতা টেবিলের উপর লাশটা রেখে বাতি জ্বালিয়ে দিল রমেশ ডোম। তারপর হেটে গিয়ে একটা চল্লিশ পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়ে দিল। এই আলোতে অন্ধকার যেন আরো বেশী চেপে বসল। আশে পাশে কিছু দেখা যায়না। কোত্থেকে একটা বাক্স নিয়ে হাজির হল রমেশ। সেটা খুলে বের করল একটা ধারাল ছুড়ি। সেটা দিয়ে লাশ বাধার পাটি র বাঁধন খুলতে খুলতে বলল-

"আইজকে তোমারে আমি লাশ কাটা দেখামু। কোন দিন দেখলা না কিভাবে কাটি আমি লাশ" বলে হাসি হাসি মুখে তাকাল । হাসিটা দেখে হটাত ভয় পেয়ে গেল সালাম। কেমন যেন একটা জড়তা চলে এল ওর মাঝে। মন্ত্রমুগ্ধের মত মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। তারপর দেখতে লাগল কি করে রমেশ। অদ্ভুত এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে চারপাশে। এই অন্ধকার রাতে স্যাঁত স্যাঁতে সোঁদা গন্ধের সাথে একটা পঁচা পঁচা গন্ধে ভরে গেল সারা ঘড়। কিন্তু সালামের কোন অনুভুতি কাজ করছে না। সে তাকিয়ে আছে রমেশের সামনে রাখা লাশের দিকে। গন্ধের উৎস হয়ত সেখানেই।

রমেশ আস্তে আস্তে চারটা দড়ি কেটে লাশের উপর থেকে পাটি সরিয়ে ফেলল। তারপর সেই লাশের উপর থেকে সাদা কাফনের কাপড় টা সরিয়ে দিল। বাঁধন খুলতে গিয়ে সালাম ও হাত লাগাল। উপরের দিকের কাপড়টা খুলে সালাম দেখল এক অনিন্দ্য সুন্দরীর মুখ- এখন ফুলে ফেপে ঢোল হয়ে আছে। চোখের নিচে আর নাকের ফুটো দিয়ে চাপ চাপ রক্ত। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সালাম বলল-

" আহা কত সোন্দর আছিল- এখন কেউ এরে ছুইতে ও চাইব না- একদিন নিশ্চয় সবাই এই মায়ারে পাইতে চাইত- নিজের বউ বানাইতে চাইত- আইজকে সেই লোক গুলান আর এই মায়াটারে স্বপ্নে ও পাইতে চাইব না- কি আজিব দুনিয়া না রমেশ কাকা?"

খেক খেক করে হেসে রমেশ বলল-
"আরে দুই পয়সার দাম নাই জিনিস দিয়ে মানুষ কত ভাব ধরে দেখস না? এই মাংস এখন কাউরে দিলে ও নিবনা- কিন্তু ফুটানি মারে সব সময় এই মাংস নিয়া- দুনিয়া ছাইড়া গেলে সবাই ছুইতে ডরায়- দুনিয়ার মাঝে যারা ভালবাসে তারাও এই লাশ দেইখে ডরায়"- বলে আবার হাসি শুরু করল।

মনটা খারাপ হয়ে গেল সালামের। রমেশের খিস্তি হাসি শুনে আরো বেশী মন খারাপ হল। আজকে যেন বেশী বেশী হাসছে রমেশ। বেশী নেশা করলে যা হয় আরকি। ওকে টিপ না দিয়ে এই লাশ ঘড়ে আটকে রেখেছে। মাতালের সাথে বেশী কথা বলল না সালাম। এক নজরে দেখতে লাগল রমেশ কি করে।

সালাম একটা ধারাল কাচি দিয়ে মেয়েটার উন্মুক্ত শরীরে বুক এর মাঝখান থেকে ধরে একটানে সোজা কেটে ফেলল নাভি পর্যন্ত। সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে ছুটল রক্ত পড়া। কোত্থেকে এক গ্লাস পানি এনে ঢেলে দিল সেই রক্তের উপর। সাথে সাথে ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে গেল অনেক রক্ত। জীবন্ত মানুষের অপারেশন করতে অনেক কষ্ট- কিন্তু মরা লাশের অপারেশন করা অনেক সহজ। এরপর সেই লাশের দুইদিকে সুই দিয়ে চামড়া টান টান করে ট্রের সাথে লাগিয়ে দিয়ে কাটা শুরু করল লাশের বিভিন্ন অংগ প্রত্যঙ্গ। লাশের শরীর ফোলার কারন বুঝা গেল এবার। মেয়েটা অনেক মোটা ছিল- সারা শরীরে ভর্তি চর্বি। এই চর্বি গুলো হলদে আকার ধারন করেছে মরার পর। সেই চর্বি গুলো কেটে কেটে একটা বালতিতে ফেলে দিল রমেশ। অনেক দিনের অভ্যস্ত হাতে একটা একটা করে অংগ প্রত্যঙ্গ কাটছে রমেশ খালি হাতে- আর একটা ওজন যন্ত্রের উপর রেখে রেখে ওজন নিচ্ছে। তারপর টেবিলের আরেকপাশে সেই অংগ গুলো রেখে দিচ্ছে সাজিয়ে। হা করে তাকিয়ে আছে সালাম। কোন দিন লাশ কাঁটা দেখেনি। আজকে দেখছে- কিন্তু খেয়াল করেনি কখন পায়ের কাছে একটা কুকুর এসে পড়েছে- হটাত পায়ে একটা হালকা ছোয়া পেতেই ভয় পেয়ে গেল সালাম- তারপর টেবিলের নিচে তাকিয়ে দেখল রমেশের কুকুর ভুতু। সে টেবিলের তলায় রাখা বালতি থেকে মুখ দিয়ে কি যেন খাচ্ছে। হটাত মনে পড়ল সালামের-এই বালতিতেই লাশের চর্বি গুলো রেখেছিল রমেশ। উপরে উঠে রমেশ কে সেটা বলতে যেতেই দেখল রমেশ হাসি মুখে তাকিয়ে তাকিয়ে বলল-

" আরে এই জিনিসটা ভুতুর অনেক প্রিয়। ওরে ভাল কিছু তো খাইতে দিতে পারিনা- তাই এখানে আসলে ও হলুদ জিনিসটা খায়। ওরে আগে বকা দিতাম- কিন্তু চিন্তা করলাম - ভুতুরে ভাল মন্দ কিছু খাইতে দিতে পারিনা- কুকুরটা যখন এই জিনিসটা পছন্দ করছে- তাইলে কি হয় খাইলে একটু-" বলে আবার হেসে ফেলল রমেশ।

এবার কেমন যেন গা গুলিয়ে উঠল সালামের। খেতে দিতে হলে ময়লা খাবে- তাই বলে মানুষের চর্বি খাবে একটা পোষা কুকুর? নাক মুখ কুঁচকে আবার নিচে দেখে নিল সালাম। কুকুরটা তখন ও খেয়ে চলেছে চর্বি।

আস্তে আস্তে কাজ করে চলেছে রমেশ। সব অংগ প্রত্যঙ্গ প্রায় কাটা শেষ এমন সময় কি যেন চিন্তা করে কাজ থামিয়ে দিল সে। তারপর একটা একটা অংগ আবার যথা স্থানে রেখে দিতে লাগল। শুধু কলিজাটা পড়ে আছে টেবিলের এক কোনায়। কালচে আকার ধারন করেছে সেটা। হটাত কি মনে করে কলিজাটা একটা পলিথিন ব্যাগে পেচিয়ে নিয়ে হাটা দিল রমেশ। অবাক হয়ে গেল সালাম। অবাক হয়েই জিজ্ঞাস করল-

"কই যাও কাকা? কইলজাটা কই নিয়া যাও তুমি? কি করবা এটা দিয়া?"

পেছন ফিরে তাকাল রমেশ- খুব একটা ভাল ভাবে চেহারা দেখা যাচ্ছেনা- দেখা যাচ্ছে শুধু হলদে দাঁতের পাটি। হেসে হেসে ই বলল রমেশ-

" এইত- এই কইলজাটার একটা ব্যাবস্থা কইরা আসি রে সালাম- তুই থাক- আমি অক্ষন ই আইতাসি- এই যামু আর আসমু- সামান্য সময় থাক তুই" বলেই হন হন করে দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে গেল রমেশ। পেছন পেছন কুকুরটা ও ছিল। কি মনে করে পেছন ফিরে তাকাল কুকুরটা- অন্ধকারে কুকুরটার হলদে চোখের মনি দেখে ভয় পেয়ে গেল সালাম। একটু পরেই আবার বের হয়ে গেল সেটা। হাঁপ ছেড়ে যেন বাচল রমেশ। লুঙ্গির গিট্টু থেকে একটা গাঁজার পুরিয়া বের করে টানা শুরু করতেই হটাত চিৎকার চেচামেচি শুনতে পেল সালাম- লাশ ঘরের বাইরে থেকে কারা যেন কথা বলে কিছু বুঝতে চাইছে। কেউ একজন মহিলা কাঁদছে। তাড়াতাড়ি লাশ ঘর থেকে বের হয়ে আসল সালাম। দরজা খুলে বের হয়েই অবাক হয়ে গেল সালাম। বাইরে আরেকটা ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। সালামের ভ্যানটা সরানো নিয়ে তর্ক করছিল কিছু মানূষ। মনে হচ্ছে ভ্যানে করে কোন একটা লাশ নিয়ে এসেছে কেউ। সাথে সেই লাশের আত্মীয় স্বজন। তাদের কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল ভেতর থেকে।

সালাম বের হয়েই জিজ্ঞাস করল-
" কি হইসে ভাই- কার লাশ নিয়া আসিছেন? রমেশ তো একটু আগে বাইর হইল- এখন ই আসি যাবে "- বলে গাঁজায় শেষ টান দিয়ে ফেলে দিল ফিল্টার টা।

হটাত নিস্তব্ধ হয়ে গেল সামনের জনতা।ভোর হতে শুরু করেছে মাত্র। আস্তে আস্তে জেগে উঠতে শুরু করেছে পাখি গুলো। এমন সময় যেন একটা বোমা ফাটাল সালাম। সামনে থাকা সবাই ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। একজন মহিলা এগিয়ে সালাম কে বলল-
" কে আছিল এতক্ষন? কে আছিল ভেতরে?"

"ক্যান কইলাম না রমেশ কাকা বাইরে গেছে- একটু পরেই আইসে পড়বে"
বিরক্তি সুরে বলল সালাম।

সেই মহিলা হটাত গিয়ে ভ্যানে রাখা লাশটার মুখ থেকে কাপড় খুলে ফেলে বলল-
" রমেশ যদি এখানে আসে- তবে এইটা কেডা?"

লাশে মাথাটা দেখে হটাত মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল সালামের। রমেশ সাদা কাপড় এ বাঁধা লাশ হয়ে পড়ে আছে সালামের সামনের ভ্যানে। হটাত করে বুঝতে পারল সালাম- ও অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। শুধু অজ্ঞান হবার আগে সেই ভ্যানের পাশে দাঁড়ানো রমেশের কুকুরটাকে দেখতে পেল সে। সেই হলদে চোখে তাকিয়ে আছে খানিক ক্ষন আগের মত। মুখের পাশে লেগে আছে হলদে চর্বি ।।



(সমাপ্ত)

Saturday, October 29, 2011

████বলয় ████রহস্য- রোমাঞ্চ- ভৌতিক গল্প

বলয়////// ০৫-১০-২০১১

ব্যাপারটা আমি খেয়াল করেছিলাম যেদিন আমি জেলখানায় ফাঁসির আসামী সুলেমান এর সাথে শেষ দেখা করতে গেলাম। সুলেমানের ব্যাক্তিগত উকিল আমি। তাই প্রতিবার মামলা চলার সময় আমাকে সুলেমান এর সাথে দেখা করে মামলা নিয়ে আলোচনা করতে হত। সেই থেকে সুলেমান এর সাথে আমার বন্ধুত্ব। কি? ভাবছেন কিভাবে একজন ফাঁসির আসামীর সাথে আমার মত একজন উকিলের বন্ধুত্ব হতে পারে? ফাঁসির আসামী হতে পারে- খুন করতে পারে সে- কিন্তু তার ভেতর বাস করে একজন অন্যরকম মানুষ। এই ভেতরের মানূষটাই আমাকে টেনেছিল। দীর্ঘ দুই বছর ওর সাথে মামলা নিয়ে কথা বলতে বলতে বুঝেছি ওর মত ভাল মানূষ হয়না। জ্ঞান হবার পর থেকে এক ওয়াক্ত নামাজ সে কাজা করেনাই। একটা রোজা ও সে ভাঙ্গে নাই স্বেচ্ছায়। কিন্তু সব কিছুর পর ও সে একজন খুনি। নিজের মুখেই স্বীকার করেছে সে খুনের কথা। আমি ও প্রমান পেয়েছি। তাই শেষ পর্যন্ত ওকে আমি বাঁচাতে পারিনি- কিনবা মন থেকেই চাইনি একজন খুনি বেঁচে যাক। ওর নিজে থেকেই আমি সাই পাইনি। তাই আমি ও বেশী দিন ওর জন্য মামলায় সাক্ষি জোগার করে নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী করতে চাইনি। ওর যখন ফাঁসির আদেশ হয়- নিজে থেকেই মেনে নিয়েছিলাম। এই শেষ সময়ে আমি তাই ওর সাথে দেখা করতে চাইনি। কিন্তু ও বিশেষ ভাবে ডেকে পাঠায় আমাকে। আমি যেতে চাইনি। একজন খুনির ফাঁসি হবে সে জন্য না- একজন ভাল মানূষের ফাঁসি হবে সে জন্য যেতে চাইনি ওর সামনে। সেদিন ঠিক বারোটা এক মিনিট এ সুলেমানের ফাঁসি হবে জানতে পেরে শেষ ইচ্ছা জানিয়েছে একান্তে আমাকে কিছু কথা বলতে চায়।

আমি পৌছাতেই পুলিশ আমাকে কয়েকটা বড় বড় সেল পার করে রেস্ট্রিক্টেড এড়িয়াতে নিয়ে যায়। সেখানে রাজনৈতিক নেতা এবং ফাঁসির আসামীদের হেপাজতে রাখা হয়। আমি যাওয়ার আগেই আমার কালো গাউন আর ফাইল পত্র বাইরে রেখে আসতে হল। রেখে আস্তে হল আমার চশমাটাও। কোন ভাবেই যেন সুলেমান আমাকে মেরে ফেলতে না পারে। বাইরে দুইজন গার্ড দাঁড়িয়ে থাকবে-এর মাঝেই আমাকে বলতে হবে একান্ত কথা। এটাই এখানকার নিয়ম।

আমি পৌছাতেই দুইটা তালা আর একটা কম্বিনেশন লক খুলে আমাকে সুলেমানের সেলে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে আবার লক করে দেয়া হল দরজা। রুমের ভেতর বেশ ছিমছাম পরিবেশে সুলেমান বসে আছে। পরিপাটি বিছানা। পাশেই একটা কমোড আর একটা বেসিন। খাটের উপর পদ্মাসনে বসে ছিল সুলেমান। আমি যেতেই আমাকে ইশারায় সামনে বসতে বলল সুলেমান। আমি বসলাম ওর সামনে।

"তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ডেকেছি আমি" - চোখ বন্ধ করেই বলতে লাগল সুলেমান।

"তোমার কাছে আজ পর্যন্ত আমি কিছু লুকাইনি । তুমি জান আমি কাকে কিভাবে মেরেছি। কিন্তু অনেকবার জানতে চাইলে ও কেন মেরেছি সেটা আমি তোমাকে বলিনি। তুমি তো জানো আমি খুন করেছিলাম আমার বাল্য বন্ধু শাহজাদ কে। ওর সাথে আমি একসাথে কাটিয়েছি অনেক গুলো বছর। একসাথে লেখা পড়া করেছি। যেদিন আমি ওকে মেরে ফেলি ঠিক তার তিন দিন আগে আমি ওর মাথার ইঞ্চি তিনেক ঊপরে একটা হাল্কা আলোর রেখা দেখতে পাই। ওকে সেটা বলতেই ও হেসে উড়িয়ে দেয়। দুইদিন পর আমি ওর মাথার উপর সেই আলোর রেখা আবার দেখতে পাই। সেটা তখন আলোর বলয়ের মত হয়েছিল। ভালভাবে তাকাতে সেই বলয়ের ভেতর আমি সোনালী আলোর রেখা ও দেখতে পাই। ওকে আমি আবার ও জানাই সেই কথা। ও আমার কথা আবার হেসে উড়িয়ে দেয়। সব সময় খানিক টা ফাজিল টাইপের ছিল । আমাকে নিয়ে ফাজলামি শুরু করে দিল সে। হটাত আমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেল কেন যেন। কথাকাটাকাটি শুরু হয়ে গেল। সেই কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আমি শাহজাদের গলা চেপে ধরি। কিন্তু বুঝিনি সে মরে যাবে। পাঁচ ফুট আট ইঞ্চির বিশাল দেহের শাহজাদ আমার সাথে জোর জবরদস্তি করতেই পারলনা। মরে গেল আমার চোখের সামনেই। আর সাথে সাথে মাথার উপর থেকে বলয় টা অদৃশ্য হয়ে গেল নিমিষেই।

আমি সেদিন বুঝিনি আলোর বলয় টা কি ছিল। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি সেটা কি ছিল। আমার মামলা চালানোর সময় আমার বন্ধু শাহজাদের স্ত্রির উকিল সামসুল সাহেবের কথা আপনার মনে আছে? মামলা চলার সময় উনি হটাত হার্ট এটাকে মারা গেলেন- পরে আরেকজন উকিল আসল উনার যায়গায়। সেই সামসুল সাহেবের মাথায় ও দেখেছিলাম আমি সেই বলয়। মৃত্যুর ঠিক একদিন আগেই আমি সেই বলয়ের ভেতর সোনালী বলয়ের রেখা ও দেখেছিলাম।পরের দিন উনার মৃত্যু সংবাদ শুনেই বুঝেছিলাম সেই বলয় ছিল মৃত্যু বলয়। আমি কোন একভাবে টের পেতে শুরু করেছি এই বলয়। এটা সবাই দেখেনা। কেউ কেউ দেখে। কিন্তু মানুষকে জানায় না। কেউ হয়ত মাথায় বলয় নিয়েই ঘুরছে- কিন্তু জানেই না মৃত্যু তার সমাগত।

তোমাকে এই লূকানো সত্য কথাটা বলার জন্যই ডেকেছিলাম - এখন তুমি যাও "- বলেই চুপ মেরে গেল সুলেমান। আমি ও নিরবে ত্যাগ করলাম ওকে। সেই সময় ওকে মনে মনে বদ্ধ পাগল বলে চলে যেতে যেতে কি মনে করে পিছন ফিরেই দেখেছিলাম সুলেমানের মাথার ঠিক তিন ইঞ্চি উপরে একটা হালকা আলোর বলয়। আমি চোখ বন্ধ করে আবার তাকালাম। দেখলাম কিছু নেই সেখানে। বুঝে নিয়েছিলাম আমারই চোখের ভুল। পাগলের সাথে থাকলে নিজের ভেতর ও কিছুটা পাগলামি চলে আসে ভাবতে ভাবতে চলে আসি সেদিন।

ঠিক তিন দিন পর আমি আজকে আমি বউ কে নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছি।বিয়ের পনের বছর উপলক্ষে আমাদের এই সিলেট ভ্রমণ। আমার মেয়ে সুদিপার সামনেই পরীক্ষা। তাই ওকে আমার মায়ের কাছে রেখেই রওনা দিলাম।

এর মাঝেই ট্রেন চলতে শুরু করেছে।একটু আগেই নিশিতা টয়লেট থেকে আরেক প্রস্ত সেজে আসল। নিশিতার শুধু সাজার বাতিক। যেখানেই যাবে সাথে করে নিয়ে যাবে মেকাপ বক্স। ট্রেনে উঠেই তাই সাজার কাজটা আবার সেড়ে আসতেই আমি গেলাম টয়লেটে। গিয়ে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম জিনিসটা। আর কিছুই না- মাথার উপর হালকা আলোর রেখার ভেতরে হলদে একটা রশ্মি নেচে নেচে ঘুরছে। দেখেই মাথাটা খানিক টা চক্কর মেরে উঠল। আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?? আমি আবার পানির ঝাপটা দিলাম। মনে মনে বললাম- আমি যা দেখছি- সব মিথ্যা-সব হ্যালুসিনেশন। কিন্তু চোখ মেলে আবার দেখতে পেলাম সেটাকে। আমার দিকে তাকিয়ে যেন তাচ্ছিল্যের হাসি দিচ্ছে বলয়টা। আমি ছুটে এলাম নিশিতার কাছে।এসে দেখি নিশিতা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর অনন্য সুন্দর মুখটার উপর একটা হালকা আলোর বলয়- ঠিক আমার তার মত। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম খুব- দুই চোখে তাকালাম ট্রেনের বাকি যাত্রিদের উপর- দেখলাম প্রায় ৩০জন যাত্রির সবার মাথার উপর একটা করে আলাদা বলয় তৈরি হয়ে আছে। এই মুহূর্তে আমি নিশিতার দিকে তাকিয়ে আছি। অপেক্ষা করছি সামনে অপেক্ষমাণ মৃত্যুর জন্য। আর আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে যেন নিশিতার মাথার উপর বলয়ের ভেতরকার হলদে আলোর রেখা.।.।


(সমাপ্ত)

Tuesday, October 25, 2011

এক রাতের স্বপ্ন { তিনটা গল্প একসাথে }

গতকাল রাতে আমি একসাথে অনেক গুলো স্বপ্ন দেখে ফেললাম। দেখেই আধা ঘুমের মাঝে জেগে লিখতে শুরু করলাম গল্প। তিনটা মনে আছে। বাকি গুলো ভুলে গেছি। নিচে তিনটা দেয়া হল।



না বলা ভালোবাসা



‘ ইমরান তুমি কি সেদিন বুঝোনি? যে আমি তোমাকে ভালবাসি? তোমার বোন সুমির জন্মদিন এর অনুষ্টান ছিল। আমি তোমাকে বলেছিলাম আমাকে একটা ফুল দিতে। তুমি আমাকে দিয়েছিলে ঠিক তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলে আমার পাশের মেয়েটাকে। তুমি কি বুঝোণি যে আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি ইমরান?’



শুনেও না শোনার ভঙ্গিতে ইমরান তাকিয়ে থাকে মেয়েগুলোর দিকে ।যেন মনে করতে চেষ্টা করছে সেদিনের ঘটনা।তার সামনে একজন মেয়ে না। অনেক গুলো মেয়ে। এক এক বয়েসের এক এক জন। সবাই লাল শাড়ী পড়া। সবাই লাল রঙ্গে রাঙ্গানো। কিন্তু সবার চোখে মুখে দারুন মিল।

ইমরানের সেদিনের ঘটনা মনে পড়তে থাকে। ও মিলির দিকে ফুল বাড়িয়ে দিয়ে তাকিয়ে ছিল আরেকটা মেয়ের দিকে। এখন সেই মেয়েটাই ইমরানের বউ। সেদিন প্রথম দেখেই মেয়েটাকে ভাল বেসেছিল। মিলি ওর বোনের জন্মদিনে এসেছিল –ওকে সুমির সামনে থেকে একটা ফুল এনে দিতে ও বলেছিল। ও দিয়েছিল এনে। কিন্তু হটাত কেন যেন চোখ দুটো ফিরে গেল অন্য দিকে। কতই বা বয়স ছিল তখন? পনের কি ষোল। এই বয়সে কি একটা মেয়ের মত একটা ছেলের একটা বুঝার ক্ষমতা তৈরি হয়? হয়ত হয়- হয়ত হয়না। কে জানে।



ভাবতে ভাবতে ওর সামনে থাকা ১৪ বছরের মিলির চোখ ভিজে গেল পানিতে। কি সুন্দর একটা মুখ। কিন্তু পরম দুঃখে ভারাক্রান্ত। ইমরান একটু দূরে হাটতে হাটতে গেল আরেক জনের কাছে। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল আরেকটু বয়স্ক আরেকটু গম্ভীর কিন্তু স্নিগ্ধ চেহারার মিলি। ওর সামনে যেতেই বলে উঠল সে-



“ কি দেখে কি মনে পড়ছে- আমার এই চেহারা যখন ছিল আমি তোমাকে ইশারা করতাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে। কতদিন আমি ঢিল ছুঁড়েছি তোমার পড়ার টেবিলের কাঁচের জানালার পাশে। তুমি কোন দিন টের পাওনি”।



মনে পড়ল হটাত করে ইমরানের। ওর জানালার পাশে প্রায় ই ঢিল পড়ত। ও শুনে ও না শুনার ভান করত। কারন তখন ছিল ওর ইন্টার পরীক্ষা। ওর মাথায় তখন ভবিষ্যতের চিন্তা। তাই খোঁজ নেয়াই হয়নি কে কিছুক্ষন পর পর ওর বাসার দেয়ালে ঢিল মারছে। ভাবতে ভাবতে তন্ময় হয়ে গেল ইমরান।



এমন সময় আরেকবার ভাবনায় ছেদ পড়ল ওর। ওর সামনে এখন দাড়িয়ে ত্রিশ বছরের মিলি। চোখ দুটো করুণ- চোখ বেয়ে পানির প্রবাহ মান ধারা শুকিয়ে কালচে হয়ে গেছে। সেই চেহারা এখন নেই। ও বুঝতে পারল এটা মিলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার পরের সময়ের চেহারা।



“ তুমি কি সেদিন শুনতে পাওনি আমার ক্যান্সারের কথা? ডাক্তার আমার রক্তে ক্যান্সার পেল। বলল আমাকে এক মাস পর পর রক্ত না দিলে আমি মরে যাব। তুমি এসেছিলে আমাকে প্রথমবার রক্ত দিতে। কিন্তু আমাকে দেখেও কি বুঝোণি কেন আমার সেই অবস্থা? কেন আমি ত্রিশ বছরেই মরনের কাছাকাছি? তুমি বার বার তাচ্ছিল্য করেছ আমার ভালবাসাকে। আমি দিনেরপর দিন কেঁদেছি। তুমি একটি বার ও আমার ডাকে সাড়া না দিয়ে বিয়ে করেছ সেই মেয়েটাকে। এটা আমার আত্মা কিভাবে সহ্য করবে বল? তাই হয়ত আমি মরনের পথে চলে এসেছিলাম। তুমি দেখেও বুঝলেনা”...



মনে পড়ে গেল ইমরানের সেই দিনের কথা। মিলির বাবা ওকে ডেকে বলেছিল বাবা তোমার রক্তের গ্রুপতো ও পজেটিভ- আমার মেয়েটাকে এখন কি এক ব্যাগ রক্ত দিতে পারবে? প্রথমে কি চিন্তা করে না বললে ও পরে রাজি হয়েছিল ইমরান। সেদিন রক্ত দেবার পর বসতে চায়নি একটু ও। কিন্তু মিলি ওকে বসিয়েছিল। নার্স কে বলে একটা আপেল খেতে দিয়েছিল । ইমরান কয়েক টুকরা খেয়েই চলে গিয়েছিল টিউশনিতে। সেদিন যদি জানত মিলি ওকে ভালবাসে তবে ওর পাশে আরো কিছুক্ষন বসত।ভাবতে ভাবতে হটাত ওর সামনে ভেসে ওঠে আরেকটা মুখ। এই মুখ টা মিলির বলে চেনাই যায় না। চোখ দুটো বসে গেছে গর্তে। কিন্তু মুখে সেই মিষ্টি হাসিটা আছে। চেহারাটা দেখেই মনে পড়ে গেল ইমরানের। এটা সে গতকাল কেই দেখেছে। মিলি মারা যাবার সময় সে পাশেই ছিল। ওর হাত টা ধরে কি যেন বলতে গিয়েও শেষে বলতে পারেনি। চেহারাটা দেখে চোখের পানি আটকাতে পারল না ইমরান। এমন সময় ওর ঘুম টা ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভেঙ্গে উঠে গিয়ে বারান্দায় দাড়াল ইমরান। এক সময় এই খানেই ওর পড়ার টেবিল ছিল। এখন সেই পুরানো বাড়ি নেই। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। উঠেছে নতুন দালান। কিন্তু সেই দালানের ঠিক আগের যায়গাতেই ইমরান নিজের ফ্লাট টা পেল। বারান্দা থেকে দেখা যায় মিলির বাসা। প্রতিদিনের মত নীলচে ডিম লাইট টা নেই। হয়ত ঘরের বাসিন্দা নেই বলে কেউ জ্বালাতে সাহস পায়নি। কিন্তু ইমরানের এখন ও মনে হচ্ছে- কেউ একজন তাকিয়ে আছে ওর দিকে। হয়ত এভাবে তাকাতেই ও বেশি ভালবাসত।

......................................................................................................





ছিনতাই




এই রিক্সা যাবে? না আজকে ও রিক্সা পাবো বলেই মনে হয়না। রিক্সা ওয়ালা রা নিজেদের কিভাবে কে জানে। কেউই যেতে চায়না। ওদের কি অন্য কোন ইনকাম সোর্স আছে? যে ওরা ধীরে ধীরে রিক্সা চালানো ছেড়ে দিচ্ছে? কেউ মুখে পান দিয়ে সিগারেটে সুখটান দেয়। কেউ বসে বসে ঝিমায়। এই সময় কেউ যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলেই যেন বিরক্ত হয় ওরা। নিজেকে তখন এলাকার রাজা মনে করে। এরকম বিরক্ত মুখে কেউ তাকালে নিজের উপর ই খুব রাগ লাগে। কিন্তু কিছুই করার নেই। উপায় নেই যে বাসে চড়ে যাব। আমাদের অফিস থেকে ফার্মগেটে যাবার বাস রুট নেই। সিএনজি পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। আর লেগুনা গুলো যা শুরু করেছে ইদানিন- কোন ভাবেই যায়গা পাওয়া যায়না। মানুষ জন এখন লেগুনা গুলোর পিছে পিছে ছুটে। তাই আমার মত অভাগা রা এখন লেগুনাতে চড়তে পারেনা। তাই শেষ ভরসা থাকে এই রিক্সা। অই যে একটা রিক্সা আসছে- “ এই রিক্সা যাবে?”



উফ- বাচা গেল অনেকক্ষণ পর একটা রিক্সাওয়ালা রাজি হল। আমি উঠে আয়েশ করে বসে হুট তুললাম। আমি রিক্সায় একা থাকলে হুট তুলে দেই। কারন কিছুই না- ছোট বেলা থেকে অভ্যাস। মা অনেক ছোট বেলা স্কুল এ যাবার পথে আমাকে একা একা যেতে দিলেই হুট তুলে দিতে বলতেন। সেই থেকে আমি হুট তুলে দেই। এই বয়সে চাকরি করেছি।কিন্তু আমার সেই অভ্যাস যায়নি।



কিন্তু হটাত এক বিচিত্র অনুভুতি হওয়া শুরু হল আমার। আমি রিক্সায় বসার পর থেকে মনে হচ্ছে পেছন থেকে কেউ আমাকে গুতা দিচ্ছে। কিন্তু ব্যাপার টা কেমন যেন প্রশ্নবিদ্ধ। কারন আমার পেছনে কেউ নেই । আমি দুইবার পেছনে তাকালাম। বেশ ভাল্ভাবেই দেখলাম যে কেউ নেই। কিন্তু—ভাবতে ভাবতেই হটাত আমার পেছন থেকে কেউ একজন শক্ত দুটো হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। এমন ভাবে ধরেছে যে আমার মাথা ঘুরাতে শুরু করল।



হটাত করে দুই চোখ অন্ধকার হতে শুরু করল। এম্নিতেই চারপাশে অনেক অন্ধকার। তার ভেতর কোন আলো নেই রাস্তায়। এই একটা পরিস্তিতিতে আমি রিক্সাওলাকেও ডাকতে পারছিনা। মুখ আর নাক বরা বর একটা বিশাল হাতের চাপে আমি শ্বাস নিতে পারছিনা। আরেকটা হাত আমার দুই হাতকে পেছন থেকে আঁকড়ে ধরেছে। আমি অসহায়ের মত আমার প্যান্টের পকেটের দিকে তাকালাম। সেখানে আমার গতমাসে কেনা মোবাইল সেট টা আছে। অনেক শখ করে আমি কিনেছি তিনমাস টাকা জমিয়ে। সেই সেট টা চলে যাবে পেছনের লোক্টার পকেটে কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু আজকেই না আমি বেতন পেলাম? হায় হায় কি হবে এখন। আমার বাম হাতের ব্যাগে এই মাসের বেতন পুরোটা আছে। কি হবে এখন। যদি এই লোক বেতন নিয়ে চলে যায় তবে কিভাবে আমি পুরো মাস চলব? কে জানে। হায় হায় আমি নিজের পেটের চিন্তা করছি। কিন্তু আজকেই মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। প্রচন্ড পা ব্যাথায় মা এখন বিছানায়। আমি একদিন শুয়ে থাকতে বলেছিলাম শুধু আমার টাকা নেই এটা চিন্তা করে। আজকে মাকে নিয়ে যেতেই হবে। কোন ভাবেই এই টাকা ছিনতাই কারী টার হাতে দেয়া যাবে না। কিন্তু আমি যে নাড়া চাড়া করতে পারছিনা। কোনভাবে মাথাটা নাড়াতে পারছি। কিন্তু তাতে কি আমার শরীরের বন্ধন ছিন্ন করতে পারব? কে জানে।



কিন্তু আস্তে আস্তে আমার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। আমি কি ঘুমিয়ে যাচ্ছি? নাকি আমাকে কোন ভাবে ক্লোরফরম দিয়ে অজ্ঞান করার তালে আছে ঐ ছিনতাই কারী? কিন্তু আমাকে জ্ঞান হারালে চলবে না। কোন ভাবেই না। আমি ঘাড়ে ছিনতাই কারীর ভারী নিঃশ্বাস পাচ্ছি। গরম সেই বাতাসে যেন পুড়ে যাচ্ছে আমার ঘাড়। কিনতু আমি এখন নড়তে পারছিনা। হয়ত আমি মরে যাব এভাবেই। আমাকে মেরে ফেলার প্লান করেনি তো শয়তান টা? কি সব চিন্তা করে চলেছি আমি? একি আমি শুনতে পাচ্ছি আমার হৃদস্পন্দন। ধুপ ধুপ শব্দ আস্তে আস্তে থেমে যেতে চলেছে। আমি হয়ত মরে যাচ্ছি। চারপাশ অন্ধকার হতে শুরু করেছে অনেক। কালচে একটা পর্দা ঢেকে দিচ্ছে আমাকে। কি করব বুঝতেই পারছিনা। নিজেকে সপে দেব মৃত্যুর কাছে? শুনেছিলাম কেউ একজন বলেছিল মরনের পর এই পৃথিবীর সব চাওয়া পাওয়াকে শুন্য মনে হয়। আমি কি নিজেকে এখন সপে দেব মৃত্যুর কাছে? নাকি করে দেখব শেষ চেষ্টা? আমাকে নিস্তেজ হতে দেখে শয়তান টা হাতের বাঁধন খানিক টা আলগা করতেই আমি চিৎকার দিলাম প্রান পনে-



সাথে সাথে মুক্ত আমি। পেছন থেকে যে আমাকে জড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল- সে এক লাফে পালিয়ে গেছে। এখন আমাকে কেউ বেধে রাখেনি। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম আমি। ঠান্ডা বাতাস যেন আমার প্রায় অচল ফুসফুস কে ভরে দিল নিদারুন প্রান্সুরতিতে। আহ- আমি বেচে আছি- এটার চাইতে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে??

......................................................................................................





খোঁজ



আমি এখন যেখানে লুকিয়ে আছি সেযায়গাটা কেউ চেনেনা। অনেক ছোট বেলা আমি লুকাতাম এখানে। যখন কানামাছি খেলতাম ভাই বোন দের সাথে। এখন আমি অনেক বড়। কিন্তু পালাতে পালাতে আমি এখানে আস্তেই হটাত করে মনে পড়ল আমি এখানে ও লুকাতে পারি। ভাবছেন কি দোষ করেছি আমি যে আমাকে লুকাতে হবে? কিন্তু আমি ভয়াবহ একটা ঘটনা দেখে ফেলেছি। ঘটনা টা ছিল খুব স্বাভাবিক। এলাকার এক সম্ভ্রান্ত মানুষের অপারেশন ছিল এক স্বনাম খ্যাত হাসপাতালে। আমি ছিলাম অপারেশন রুমের বাইরে। সেই লোকটার আরো কিছু লোকজন ছিল সাথে। কিন্তু অপারেশন থেকে একটা ট্রেতে করে এক নার্স বের হতেই আমি সেই নার্সের পিছু নেই। পিছে পিছে গিয়েই জানতে পারি সেই নার্স রুগির একটা কিডনি কেটে নিয়ে গিয়ে আমাদের অগোচরেই বিক্রি করে দিচ্ছে এক দল দালালের কাছে। আমি সেই ঘটনা দেখে ফেলেই প্রতিবাদ করতে যাই। কিন্তু পরক্ষনেই ঐ দালাল গুলো অস্ত্র উচিয়ে আমাকে মারতে আসে। আমি পালিয়ে যায় সেখান থেকে। কিন্তু পালিয়ে আমি যাব কোথায়? পেছনে ছিল সেই দালাল দের পোষা গুন্ডা রা । আমাকে পেলেই মেরে ফেলবে। তাই আমি কোন ভাবেই পালাতে পালাতে চলে আসি আমার নিজের এলাকায়। নিজের বাড়িকেই সব চেয়ে আপন মনে হয়েছে আমার। কিন্তু সেই গুন্ডা গুলো নিজেদের পুলিশের সাদা পোশাকের কর্মী পরিচয় দিয়ে আমার ঘরের লোকজন দের সাথে নিয়ে ই আমাকে খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে। আমি শুনতে পাচ্ছি- আমার ছোট ভাই আমার নাম ধরে ডাকছে। জানি আমি সাড়া দিলেই মৃত্যু হবে ভাই এর সামনেই।



আমি এখন লুকিয়ে আছি আমাদের পুকুর পাড়ের কোণায় ড্রেনে। এখানে থিকথিকে কাদা আর জঞ্জাল কে এখন আপন মনে হচ্ছে আমার। আমার যাবার আর কোন পথ খোলা নেই। রাত হয়েছে অনেক আগে। আর কিছুক্ষনপরেই ভোর হবে। এই সময় টুকু আমাকে বেচে থাক্তেই লুকিয়ে থাকতে হবে। সকাল হলেই আমি নিজেকে বাঁচাতে পারব। ঐ গুন্ডা গুলোকে এলাকাতেই বেধে রেখে পুলিশে খবর দিতে পারব। কিন্তু এই সময় টুকু বেচে থাকাই আমার এখন উদ্দেশ্য। আমি যেখানে লুকিয়ে আছি সেখান দিয়েই একটু আগেই দৌড়ে গেছে কিছু লোক। শহুরে জুতার আওয়াজ এ বুঝেছি যে লোক গুলো আমাকে খুঁজতে আরো লোক এনেছে শহর থেকে। কিন্তু আমি এখন এই জঞ্জালে ও থাকতে পারছিনা। প্রশ্রাবের বিশ্রী গন্ধে নাক জ্বালা শুরু হয়ে গেছে। বুঝতেই পারছিনা কি করব। সামনে এগিয়ে গেলে আমাদের বাড়ির সামনের পুকুর। সেখানে গেলেই আমাকে আর লুকিয়ে থাকতে দেবেনা কেউ। একবার পেলেই সবার সামনেই হত্যা করবে । কিন্তু এখানে থাকার উপায় ও নেই। সামনে এগিয়ে তাড়াতাড়ি ময়লার ঢাকনা সরিয়ে বের হতে হবে লোক গুলো পৌঁছানোর আগে।



পৌছাতেই আমার হাতের আর পায়ের যায়গায় যায়গায় ছিড়ে গেল। সামনে আমার ঢাকনা- ছিদ্র দিয়েই পাওয়া যাচ্ছে টলটলে পানির গন্ধ । এখন কি পানিতে ঝাপিয়ে পড়বো? নাকি আমাকে ওরা দেখে ফেলবে? কি করব আমি? না এখানে আর এক মুহূর্ত ও না। আমাকে এখন বের হতেই হবে। আহ ঢাকনা খুলে বের হতে গিয়েই আলোর রেখা দেখছি। না এখন বের হওয়া যাবেনা। কেউ একজন এগিয়ে আসছে। না ঢাকনা টা লাগাতে গিয়েই সামান্য শব্দ হয়ে গেল। কি হবে এখন। পায়ের শব্দ আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। কে জানে কি হবে এখন- আমি কি ধরা পড়ে গেলাম?



“ রাসু- রাসু- আমি তোর মামা বলছি। আমি জানি তুই এখানে। আস্তে আস্তে বের হয়ে আয়। আমার সাথে কেউ নেই এখানে। কিন্তু বেশিক্ষন লাগবেনা সবাই আস্তে। তুই আস্তে করে বের হয়ে আয়”



আমার বুকে যেন প্রান ফিরে এল। আমার ছোট মামা আমাকে বাচাতে এসেছে। আস্তে করে বের হলাম আমি। মামা আমাকে একটা গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে দিলেন। আমি সেই মুখ ঢাকা নিয়েই আস্তে আস্তে হাটতে হাটতে বের হয়ে যাচ্ছি বাড়ির গণ্ডি থেকে। মামার দায়িত্ব হল লোক গুলোকে সকাল পর্যন্ত আটকে রাখা। সকাল হলেই বেচারা রা বুঝতে পারবে কত ধানে কত চাল...

...................................................................................................... সমাপ্ত