Wednesday, December 28, 2011

হে মৃত্যু আমাকে গ্রহণ করো



হে মৃত্যু আমাকে গ্রহন করো
আমি আজ মরে যেতে চাই
যেভাবে মরে গিয়েছিল আজ থেকে বহু আগের
নাম না জানা শত সহস্র মানুষগুলো -
তাদের নাম আমরা মনে রাখিনি।

হে মৃত্যু আমাকে গ্রহণ করো
আমি যাযাবর পাখি হয়ে বেঁচে থাকতে চাইনা
বেঁচে থাকতে চাইনা কারো চোখের ভেতর
আলতো ভাবে পড়ে যাওয়া ছোট্ট কনার মত
আমি শুধু মরে যেতে চাই
শুধু মরে যেতে চাই - যেভাবে মরন হয়েছিল
পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী মানুষটির
আমি মরে যেতে চাই যেভাবে মরে গিয়েছিল
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষটির
আমি মরে যেতে চাই বয়সের ভাবে নুইয়ে যাওয়া
সেই সহস্র বর্ষী বৃক্ষের মত
বেঁচে থেকে এই পৃথিবির বুকে ঠেলাঠেলি
আমার একদম পছন্দ নয়।

তাই আজকে আমি তোমার কাছে এসেছি
আজকে আমি সেই জন্মকালের মত নগ্ন
আমি আজ সেই জন্মকালের মত একাকী
আমি আজ সেই তারুন্যের মত শক্তিশালী
আমাকে তুমি গ্রহন করো
আমাকে তুমি গ্রহণ করো যেভাবে তুমি
গ্রহণ করেছিলে মহাক্ষমতা ধারী পুরুষকে
যেভাবে তুমি গ্রহণ করেছিলে পূর্বে মৃত
সকল বিশ্ব সুন্দরীকে
আমাকে তুমি গ্রহণ করো
আমাকে তুমি আপন করে নাও
আমাকে তুমি আপন করে নাও ।

আজ অনেক দিন পর মরে যেতে ইচ্ছে করছে- মনে হচ্ছে বেঁচে থেকে কোন লাভ নেই- শুধু শুধু আমরা নিজেরা বেঁচে থাকতে চাই। মরে গেলেই সকল সমস্যার সমাধান। কোন চিন্তা নেই- ভাবনা নেই, মাথার ভেতর শুধু ঘুরছে আমার সামনেই হয়ত অপেক্ষা করছে মৃত্যু- মৃত্যু- মৃত্যু...

জীবনের এপারে ওপারে কোন সুতো নেই যে ধরে রাখতে পারে আমাকে। জীবন কি সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মাথার ভেতর ছিড়তে থাকে নিউরোন। আমি চিৎকার করে কাঁদতে গিয়ে কান্না ভুলে ফুপিয়ে উঠি। জীবনের মানে খুঁজে খুঁজে হয়রান শীতের কাকের মত আমি মরনের পানে চেয়ে চেয়ে কবিতা লিখার বৃথা চেষ্টা করি। লেখা গুলো কবিতা হয়ে ওঠেনা। আমি আজন্ম কবিতা লিখতে চেয়েছি- হে ঈশ্বর -আমাকে তুমি কবিতা লেখার ভাগ্য দিলেনা। আমাকে তুমি কবি হতে দিলেনা তোমার জগতে।

আমি আজন্ম পাপ বয়ে বয়ে বেড়াতে পারবনা -তাই আমি মৃত্যু চাই- খুব সাধারন কোণ এক মৃত্যু। খুব ছোট কোন একটা পাখির মত আমি মরে যেতে চাই। খুব ছোট কোন এক শুয়োপোকার মত আমি মরে যেতে চাই। খুব খুদ্র একটা মাছি- যার মৃত্যু হয় জন্মাবার একদিন পরেই- আমি তার মত মরে যেতে চাই। আমি মরে যেতে চাই সেই যুবকের মত যে ভালবাসার জন্য প্রান দিয়েছিল। আমি মরে যেতে চাই। এই নিলাম- বিষের পেয়ালা।

কিন্তু বিষের পেয়ালা নিয়ে মনে হল
আমি ভালবাসা পান করছি
চুষে চুষে খাচ্ছি ভালবাসার নীলচে সবুজ দানা
গিলে গিলে খাচ্ছি তলানিতে তলিয়ে থাকা
একরাশ নিস্তব্ধ রহস্য
জীবনের সবখানেই যার মাকড়শার মত বিস্তার
আমি মৃত্যুর কাছে জানতে চেয়েছি জীবনের মানে কি
আমি আকাশের কাছে জানতে চেয়েছি জীবনের সংজ্ঞা কি
আমি বালিশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষের কাছে
জানতে চেয়েছি জীবনের সংজ্ঞা কি
আমি জেনেছি- এই পৃথিবীতে জীবনের কোন সংজ্ঞা নেই
আমি জেনেছি - এই ব্রহ্মাণ্ডে জীবনের অস্তিত্ব হেঁয়ালিপূর্ণ
আমি জেনেছি- খুব সাধারন ভিখিরিও নেহাত দরকার না পড়লে
মরতে চায়না কোনভাবে।

তাই বিষের পেয়ালা হাতে আমি আবার তাকাই আমার বারান্দার চাঁদের দিকে। সেখানে খুব একাকী একটা চাঁদ- আমাকে অনেক আগে ফাঁকি দিয়ে ঝুলে পড়েছে - আমি মনে মনে বলি- হে চাঁদ- তুমি আমাকে আর ফাঁকি দিতে পারবেনা- আমি মৃত্যুর পর- মরা চোখ দিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবো অনন্তকাল। আমি মরা চোখ দিয়ে তোমার কক্ষপথে একাকী বসে বসে তারা গুনবো- তুমি আমাকে আর ফাঁকি দিতে পারবেনা। তুমি আমাকে আর কোনভাবেই অমাবস্যার আঁধারে ঢেকে দিতে পারবেনা। আমি তোমাকে ঠিক সেখানেও খুঁজে খুঁজে বের করে বানিয়ে দেব প্রতিপাদ। আমি সেখানে আবার নতুন করে জীবন এর মানে খুঁজে বেড়াব। কারন খুঁজে বেড়াব কেন মানুষ মরার আগে আবার বাঁচতে চায়-
কেন মানুষ মরার জন্য বিষ খেয়ে আবার বমি করে ফেলে দেয়
কেন মানুষ সামনে মৃত্যু জেনেও জীবনের হিসাব কষে?
কেন মানুষ ফাঁসির দড়ির নিচে দাঁড়িয়ে বাঁচতে চায়

আমি অনাদি হয়ে জানার চেষ্টা করার আগে
এই পান করে নিলাম এক গলা বিষ
হয়ত এটাই আমার শেষ লেখা

আমাকে আর খুঁজে পাবেনা তোমরা-
অবশেষে বলি- শেষ বিকেলের ঝরে যাওয়া পাতার মতন
আমাকে ভুলে যেও। আমি কারো মনের ভেতর খঁচখঁচে কাঁটা হতে চাইনা।।

No comments:

Post a Comment