Tuesday, October 25, 2011

এক রাতের স্বপ্ন { তিনটা গল্প একসাথে }

গতকাল রাতে আমি একসাথে অনেক গুলো স্বপ্ন দেখে ফেললাম। দেখেই আধা ঘুমের মাঝে জেগে লিখতে শুরু করলাম গল্প। তিনটা মনে আছে। বাকি গুলো ভুলে গেছি। নিচে তিনটা দেয়া হল।



না বলা ভালোবাসা



‘ ইমরান তুমি কি সেদিন বুঝোনি? যে আমি তোমাকে ভালবাসি? তোমার বোন সুমির জন্মদিন এর অনুষ্টান ছিল। আমি তোমাকে বলেছিলাম আমাকে একটা ফুল দিতে। তুমি আমাকে দিয়েছিলে ঠিক তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলে আমার পাশের মেয়েটাকে। তুমি কি বুঝোণি যে আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি ইমরান?’



শুনেও না শোনার ভঙ্গিতে ইমরান তাকিয়ে থাকে মেয়েগুলোর দিকে ।যেন মনে করতে চেষ্টা করছে সেদিনের ঘটনা।তার সামনে একজন মেয়ে না। অনেক গুলো মেয়ে। এক এক বয়েসের এক এক জন। সবাই লাল শাড়ী পড়া। সবাই লাল রঙ্গে রাঙ্গানো। কিন্তু সবার চোখে মুখে দারুন মিল।

ইমরানের সেদিনের ঘটনা মনে পড়তে থাকে। ও মিলির দিকে ফুল বাড়িয়ে দিয়ে তাকিয়ে ছিল আরেকটা মেয়ের দিকে। এখন সেই মেয়েটাই ইমরানের বউ। সেদিন প্রথম দেখেই মেয়েটাকে ভাল বেসেছিল। মিলি ওর বোনের জন্মদিনে এসেছিল –ওকে সুমির সামনে থেকে একটা ফুল এনে দিতে ও বলেছিল। ও দিয়েছিল এনে। কিন্তু হটাত কেন যেন চোখ দুটো ফিরে গেল অন্য দিকে। কতই বা বয়স ছিল তখন? পনের কি ষোল। এই বয়সে কি একটা মেয়ের মত একটা ছেলের একটা বুঝার ক্ষমতা তৈরি হয়? হয়ত হয়- হয়ত হয়না। কে জানে।



ভাবতে ভাবতে ওর সামনে থাকা ১৪ বছরের মিলির চোখ ভিজে গেল পানিতে। কি সুন্দর একটা মুখ। কিন্তু পরম দুঃখে ভারাক্রান্ত। ইমরান একটু দূরে হাটতে হাটতে গেল আরেক জনের কাছে। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল আরেকটু বয়স্ক আরেকটু গম্ভীর কিন্তু স্নিগ্ধ চেহারার মিলি। ওর সামনে যেতেই বলে উঠল সে-



“ কি দেখে কি মনে পড়ছে- আমার এই চেহারা যখন ছিল আমি তোমাকে ইশারা করতাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে। কতদিন আমি ঢিল ছুঁড়েছি তোমার পড়ার টেবিলের কাঁচের জানালার পাশে। তুমি কোন দিন টের পাওনি”।



মনে পড়ল হটাত করে ইমরানের। ওর জানালার পাশে প্রায় ই ঢিল পড়ত। ও শুনে ও না শুনার ভান করত। কারন তখন ছিল ওর ইন্টার পরীক্ষা। ওর মাথায় তখন ভবিষ্যতের চিন্তা। তাই খোঁজ নেয়াই হয়নি কে কিছুক্ষন পর পর ওর বাসার দেয়ালে ঢিল মারছে। ভাবতে ভাবতে তন্ময় হয়ে গেল ইমরান।



এমন সময় আরেকবার ভাবনায় ছেদ পড়ল ওর। ওর সামনে এখন দাড়িয়ে ত্রিশ বছরের মিলি। চোখ দুটো করুণ- চোখ বেয়ে পানির প্রবাহ মান ধারা শুকিয়ে কালচে হয়ে গেছে। সেই চেহারা এখন নেই। ও বুঝতে পারল এটা মিলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার পরের সময়ের চেহারা।



“ তুমি কি সেদিন শুনতে পাওনি আমার ক্যান্সারের কথা? ডাক্তার আমার রক্তে ক্যান্সার পেল। বলল আমাকে এক মাস পর পর রক্ত না দিলে আমি মরে যাব। তুমি এসেছিলে আমাকে প্রথমবার রক্ত দিতে। কিন্তু আমাকে দেখেও কি বুঝোণি কেন আমার সেই অবস্থা? কেন আমি ত্রিশ বছরেই মরনের কাছাকাছি? তুমি বার বার তাচ্ছিল্য করেছ আমার ভালবাসাকে। আমি দিনেরপর দিন কেঁদেছি। তুমি একটি বার ও আমার ডাকে সাড়া না দিয়ে বিয়ে করেছ সেই মেয়েটাকে। এটা আমার আত্মা কিভাবে সহ্য করবে বল? তাই হয়ত আমি মরনের পথে চলে এসেছিলাম। তুমি দেখেও বুঝলেনা”...



মনে পড়ে গেল ইমরানের সেই দিনের কথা। মিলির বাবা ওকে ডেকে বলেছিল বাবা তোমার রক্তের গ্রুপতো ও পজেটিভ- আমার মেয়েটাকে এখন কি এক ব্যাগ রক্ত দিতে পারবে? প্রথমে কি চিন্তা করে না বললে ও পরে রাজি হয়েছিল ইমরান। সেদিন রক্ত দেবার পর বসতে চায়নি একটু ও। কিন্তু মিলি ওকে বসিয়েছিল। নার্স কে বলে একটা আপেল খেতে দিয়েছিল । ইমরান কয়েক টুকরা খেয়েই চলে গিয়েছিল টিউশনিতে। সেদিন যদি জানত মিলি ওকে ভালবাসে তবে ওর পাশে আরো কিছুক্ষন বসত।ভাবতে ভাবতে হটাত ওর সামনে ভেসে ওঠে আরেকটা মুখ। এই মুখ টা মিলির বলে চেনাই যায় না। চোখ দুটো বসে গেছে গর্তে। কিন্তু মুখে সেই মিষ্টি হাসিটা আছে। চেহারাটা দেখেই মনে পড়ে গেল ইমরানের। এটা সে গতকাল কেই দেখেছে। মিলি মারা যাবার সময় সে পাশেই ছিল। ওর হাত টা ধরে কি যেন বলতে গিয়েও শেষে বলতে পারেনি। চেহারাটা দেখে চোখের পানি আটকাতে পারল না ইমরান। এমন সময় ওর ঘুম টা ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভেঙ্গে উঠে গিয়ে বারান্দায় দাড়াল ইমরান। এক সময় এই খানেই ওর পড়ার টেবিল ছিল। এখন সেই পুরানো বাড়ি নেই। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। উঠেছে নতুন দালান। কিন্তু সেই দালানের ঠিক আগের যায়গাতেই ইমরান নিজের ফ্লাট টা পেল। বারান্দা থেকে দেখা যায় মিলির বাসা। প্রতিদিনের মত নীলচে ডিম লাইট টা নেই। হয়ত ঘরের বাসিন্দা নেই বলে কেউ জ্বালাতে সাহস পায়নি। কিন্তু ইমরানের এখন ও মনে হচ্ছে- কেউ একজন তাকিয়ে আছে ওর দিকে। হয়ত এভাবে তাকাতেই ও বেশি ভালবাসত।

......................................................................................................





ছিনতাই




এই রিক্সা যাবে? না আজকে ও রিক্সা পাবো বলেই মনে হয়না। রিক্সা ওয়ালা রা নিজেদের কিভাবে কে জানে। কেউই যেতে চায়না। ওদের কি অন্য কোন ইনকাম সোর্স আছে? যে ওরা ধীরে ধীরে রিক্সা চালানো ছেড়ে দিচ্ছে? কেউ মুখে পান দিয়ে সিগারেটে সুখটান দেয়। কেউ বসে বসে ঝিমায়। এই সময় কেউ যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলেই যেন বিরক্ত হয় ওরা। নিজেকে তখন এলাকার রাজা মনে করে। এরকম বিরক্ত মুখে কেউ তাকালে নিজের উপর ই খুব রাগ লাগে। কিন্তু কিছুই করার নেই। উপায় নেই যে বাসে চড়ে যাব। আমাদের অফিস থেকে ফার্মগেটে যাবার বাস রুট নেই। সিএনজি পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। আর লেগুনা গুলো যা শুরু করেছে ইদানিন- কোন ভাবেই যায়গা পাওয়া যায়না। মানুষ জন এখন লেগুনা গুলোর পিছে পিছে ছুটে। তাই আমার মত অভাগা রা এখন লেগুনাতে চড়তে পারেনা। তাই শেষ ভরসা থাকে এই রিক্সা। অই যে একটা রিক্সা আসছে- “ এই রিক্সা যাবে?”



উফ- বাচা গেল অনেকক্ষণ পর একটা রিক্সাওয়ালা রাজি হল। আমি উঠে আয়েশ করে বসে হুট তুললাম। আমি রিক্সায় একা থাকলে হুট তুলে দেই। কারন কিছুই না- ছোট বেলা থেকে অভ্যাস। মা অনেক ছোট বেলা স্কুল এ যাবার পথে আমাকে একা একা যেতে দিলেই হুট তুলে দিতে বলতেন। সেই থেকে আমি হুট তুলে দেই। এই বয়সে চাকরি করেছি।কিন্তু আমার সেই অভ্যাস যায়নি।



কিন্তু হটাত এক বিচিত্র অনুভুতি হওয়া শুরু হল আমার। আমি রিক্সায় বসার পর থেকে মনে হচ্ছে পেছন থেকে কেউ আমাকে গুতা দিচ্ছে। কিন্তু ব্যাপার টা কেমন যেন প্রশ্নবিদ্ধ। কারন আমার পেছনে কেউ নেই । আমি দুইবার পেছনে তাকালাম। বেশ ভাল্ভাবেই দেখলাম যে কেউ নেই। কিন্তু—ভাবতে ভাবতেই হটাত আমার পেছন থেকে কেউ একজন শক্ত দুটো হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। এমন ভাবে ধরেছে যে আমার মাথা ঘুরাতে শুরু করল।



হটাত করে দুই চোখ অন্ধকার হতে শুরু করল। এম্নিতেই চারপাশে অনেক অন্ধকার। তার ভেতর কোন আলো নেই রাস্তায়। এই একটা পরিস্তিতিতে আমি রিক্সাওলাকেও ডাকতে পারছিনা। মুখ আর নাক বরা বর একটা বিশাল হাতের চাপে আমি শ্বাস নিতে পারছিনা। আরেকটা হাত আমার দুই হাতকে পেছন থেকে আঁকড়ে ধরেছে। আমি অসহায়ের মত আমার প্যান্টের পকেটের দিকে তাকালাম। সেখানে আমার গতমাসে কেনা মোবাইল সেট টা আছে। অনেক শখ করে আমি কিনেছি তিনমাস টাকা জমিয়ে। সেই সেট টা চলে যাবে পেছনের লোক্টার পকেটে কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু আজকেই না আমি বেতন পেলাম? হায় হায় কি হবে এখন। আমার বাম হাতের ব্যাগে এই মাসের বেতন পুরোটা আছে। কি হবে এখন। যদি এই লোক বেতন নিয়ে চলে যায় তবে কিভাবে আমি পুরো মাস চলব? কে জানে। হায় হায় আমি নিজের পেটের চিন্তা করছি। কিন্তু আজকেই মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। প্রচন্ড পা ব্যাথায় মা এখন বিছানায়। আমি একদিন শুয়ে থাকতে বলেছিলাম শুধু আমার টাকা নেই এটা চিন্তা করে। আজকে মাকে নিয়ে যেতেই হবে। কোন ভাবেই এই টাকা ছিনতাই কারী টার হাতে দেয়া যাবে না। কিন্তু আমি যে নাড়া চাড়া করতে পারছিনা। কোনভাবে মাথাটা নাড়াতে পারছি। কিন্তু তাতে কি আমার শরীরের বন্ধন ছিন্ন করতে পারব? কে জানে।



কিন্তু আস্তে আস্তে আমার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। আমি কি ঘুমিয়ে যাচ্ছি? নাকি আমাকে কোন ভাবে ক্লোরফরম দিয়ে অজ্ঞান করার তালে আছে ঐ ছিনতাই কারী? কিন্তু আমাকে জ্ঞান হারালে চলবে না। কোন ভাবেই না। আমি ঘাড়ে ছিনতাই কারীর ভারী নিঃশ্বাস পাচ্ছি। গরম সেই বাতাসে যেন পুড়ে যাচ্ছে আমার ঘাড়। কিনতু আমি এখন নড়তে পারছিনা। হয়ত আমি মরে যাব এভাবেই। আমাকে মেরে ফেলার প্লান করেনি তো শয়তান টা? কি সব চিন্তা করে চলেছি আমি? একি আমি শুনতে পাচ্ছি আমার হৃদস্পন্দন। ধুপ ধুপ শব্দ আস্তে আস্তে থেমে যেতে চলেছে। আমি হয়ত মরে যাচ্ছি। চারপাশ অন্ধকার হতে শুরু করেছে অনেক। কালচে একটা পর্দা ঢেকে দিচ্ছে আমাকে। কি করব বুঝতেই পারছিনা। নিজেকে সপে দেব মৃত্যুর কাছে? শুনেছিলাম কেউ একজন বলেছিল মরনের পর এই পৃথিবীর সব চাওয়া পাওয়াকে শুন্য মনে হয়। আমি কি নিজেকে এখন সপে দেব মৃত্যুর কাছে? নাকি করে দেখব শেষ চেষ্টা? আমাকে নিস্তেজ হতে দেখে শয়তান টা হাতের বাঁধন খানিক টা আলগা করতেই আমি চিৎকার দিলাম প্রান পনে-



সাথে সাথে মুক্ত আমি। পেছন থেকে যে আমাকে জড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল- সে এক লাফে পালিয়ে গেছে। এখন আমাকে কেউ বেধে রাখেনি। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম আমি। ঠান্ডা বাতাস যেন আমার প্রায় অচল ফুসফুস কে ভরে দিল নিদারুন প্রান্সুরতিতে। আহ- আমি বেচে আছি- এটার চাইতে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে??

......................................................................................................





খোঁজ



আমি এখন যেখানে লুকিয়ে আছি সেযায়গাটা কেউ চেনেনা। অনেক ছোট বেলা আমি লুকাতাম এখানে। যখন কানামাছি খেলতাম ভাই বোন দের সাথে। এখন আমি অনেক বড়। কিন্তু পালাতে পালাতে আমি এখানে আস্তেই হটাত করে মনে পড়ল আমি এখানে ও লুকাতে পারি। ভাবছেন কি দোষ করেছি আমি যে আমাকে লুকাতে হবে? কিন্তু আমি ভয়াবহ একটা ঘটনা দেখে ফেলেছি। ঘটনা টা ছিল খুব স্বাভাবিক। এলাকার এক সম্ভ্রান্ত মানুষের অপারেশন ছিল এক স্বনাম খ্যাত হাসপাতালে। আমি ছিলাম অপারেশন রুমের বাইরে। সেই লোকটার আরো কিছু লোকজন ছিল সাথে। কিন্তু অপারেশন থেকে একটা ট্রেতে করে এক নার্স বের হতেই আমি সেই নার্সের পিছু নেই। পিছে পিছে গিয়েই জানতে পারি সেই নার্স রুগির একটা কিডনি কেটে নিয়ে গিয়ে আমাদের অগোচরেই বিক্রি করে দিচ্ছে এক দল দালালের কাছে। আমি সেই ঘটনা দেখে ফেলেই প্রতিবাদ করতে যাই। কিন্তু পরক্ষনেই ঐ দালাল গুলো অস্ত্র উচিয়ে আমাকে মারতে আসে। আমি পালিয়ে যায় সেখান থেকে। কিন্তু পালিয়ে আমি যাব কোথায়? পেছনে ছিল সেই দালাল দের পোষা গুন্ডা রা । আমাকে পেলেই মেরে ফেলবে। তাই আমি কোন ভাবেই পালাতে পালাতে চলে আসি আমার নিজের এলাকায়। নিজের বাড়িকেই সব চেয়ে আপন মনে হয়েছে আমার। কিন্তু সেই গুন্ডা গুলো নিজেদের পুলিশের সাদা পোশাকের কর্মী পরিচয় দিয়ে আমার ঘরের লোকজন দের সাথে নিয়ে ই আমাকে খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে। আমি শুনতে পাচ্ছি- আমার ছোট ভাই আমার নাম ধরে ডাকছে। জানি আমি সাড়া দিলেই মৃত্যু হবে ভাই এর সামনেই।



আমি এখন লুকিয়ে আছি আমাদের পুকুর পাড়ের কোণায় ড্রেনে। এখানে থিকথিকে কাদা আর জঞ্জাল কে এখন আপন মনে হচ্ছে আমার। আমার যাবার আর কোন পথ খোলা নেই। রাত হয়েছে অনেক আগে। আর কিছুক্ষনপরেই ভোর হবে। এই সময় টুকু আমাকে বেচে থাক্তেই লুকিয়ে থাকতে হবে। সকাল হলেই আমি নিজেকে বাঁচাতে পারব। ঐ গুন্ডা গুলোকে এলাকাতেই বেধে রেখে পুলিশে খবর দিতে পারব। কিন্তু এই সময় টুকু বেচে থাকাই আমার এখন উদ্দেশ্য। আমি যেখানে লুকিয়ে আছি সেখান দিয়েই একটু আগেই দৌড়ে গেছে কিছু লোক। শহুরে জুতার আওয়াজ এ বুঝেছি যে লোক গুলো আমাকে খুঁজতে আরো লোক এনেছে শহর থেকে। কিন্তু আমি এখন এই জঞ্জালে ও থাকতে পারছিনা। প্রশ্রাবের বিশ্রী গন্ধে নাক জ্বালা শুরু হয়ে গেছে। বুঝতেই পারছিনা কি করব। সামনে এগিয়ে গেলে আমাদের বাড়ির সামনের পুকুর। সেখানে গেলেই আমাকে আর লুকিয়ে থাকতে দেবেনা কেউ। একবার পেলেই সবার সামনেই হত্যা করবে । কিন্তু এখানে থাকার উপায় ও নেই। সামনে এগিয়ে তাড়াতাড়ি ময়লার ঢাকনা সরিয়ে বের হতে হবে লোক গুলো পৌঁছানোর আগে।



পৌছাতেই আমার হাতের আর পায়ের যায়গায় যায়গায় ছিড়ে গেল। সামনে আমার ঢাকনা- ছিদ্র দিয়েই পাওয়া যাচ্ছে টলটলে পানির গন্ধ । এখন কি পানিতে ঝাপিয়ে পড়বো? নাকি আমাকে ওরা দেখে ফেলবে? কি করব আমি? না এখানে আর এক মুহূর্ত ও না। আমাকে এখন বের হতেই হবে। আহ ঢাকনা খুলে বের হতে গিয়েই আলোর রেখা দেখছি। না এখন বের হওয়া যাবেনা। কেউ একজন এগিয়ে আসছে। না ঢাকনা টা লাগাতে গিয়েই সামান্য শব্দ হয়ে গেল। কি হবে এখন। পায়ের শব্দ আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। কে জানে কি হবে এখন- আমি কি ধরা পড়ে গেলাম?



“ রাসু- রাসু- আমি তোর মামা বলছি। আমি জানি তুই এখানে। আস্তে আস্তে বের হয়ে আয়। আমার সাথে কেউ নেই এখানে। কিন্তু বেশিক্ষন লাগবেনা সবাই আস্তে। তুই আস্তে করে বের হয়ে আয়”



আমার বুকে যেন প্রান ফিরে এল। আমার ছোট মামা আমাকে বাচাতে এসেছে। আস্তে করে বের হলাম আমি। মামা আমাকে একটা গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে দিলেন। আমি সেই মুখ ঢাকা নিয়েই আস্তে আস্তে হাটতে হাটতে বের হয়ে যাচ্ছি বাড়ির গণ্ডি থেকে। মামার দায়িত্ব হল লোক গুলোকে সকাল পর্যন্ত আটকে রাখা। সকাল হলেই বেচারা রা বুঝতে পারবে কত ধানে কত চাল...

...................................................................................................... সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment