Saturday, January 15, 2011

ভালবাসার গল্প

 সেদিন একবন্ধুর সাথে রিক্সায় করে ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছিলাম।মাথার উপর গনগনে আকাশ-হাতে এতগুলো ইকুইপমেন্টস-তার মাঝেও আমার হাতে মোবাইল- আমি ইন্টানেট  এ চ্যাট এ ব্যস্ত।অনেক অনেক বন্ধুর ভীরে একজন আমার নজর কেড়ে ছিলো দিন তিনেক আগে-তার সাথেই কথা হচ্ছে।সাধারণ কিছু কথা- আর কথাগুলো ছিলো এরকম:
- তোমার নাম কি?
-- বলবোনা
-থাকো কই?
--সিলেট
-পড়ো কিসে?
--মেডিকেল কলেজে
-আমি রাজীব
--কোথায় পড়া হয়?
-আর্কিটেকচারে
--
--
--
ওপাশে অনেকক্ষন নিশ্চুপ থেকে ও জিজ্বাস করল
-- নামটা কি বল্লেন?
-রাজীব
-- টাইটেল কি?
-চৌধুরী
-তুমি?
--সুমনা
-টাইটেল?
--চৌধুরী
-ওমা আমাদের যদি বিয়ে হয় তাহলে তোমার টাইটেল চেন্জ হবেনা
--কি???
--না মানে বলছিলাম আমাদের যদি বিয়ে হয় তাহলে তোমার টাইটেল চেন্জ হবেনা
--
--
--

ওপাশ থেকে আর কোন কথা ভেসে আসছে না।সেদিনের মতো আমাদের কথা শেষ বুঝলাম।কিন্তু সেদিন থেকেই শুরু হল আমার প্রেম নিবেদন।

দেখিনি তাকে কোনদিন-জানি ও না কেমন মেয়ে।জানিনা সে কি রকম ভাবে নেবে আমাকে।শুধু জানতাম ওকে আমার পেতেই হবে।মনের মতো এমন একজন কেই তো আমি খুঁজছিলাম অনেকদিন ধরে।

তার পর শুরু হল চ্যাট-মোবাইলটা হাতে নিয়ে বসে থাকলাম দিন রাত।ভাত খাওয়ার সময় ও বাম হাতে ধরে থাকলাম মোবাইল-কথা আমাদের ফুরায় না।
কোন কোন দিন আমি ওর জন্য বসে থাকি-ও না আসলে আমার মন খারাপ হয়। একটু পর পর আমি লগইন করি ইন্টারনেটে-ওকে না দেখে আমি আবার ফিরে আসি বাস্তবে-মন খারাপ হয়।ও ওর মতো ঢুকে আমাকে না দেখে চলে যায় পড়তে-কিন্তু পড়ায় কারো ই মন বসেনা।

অবশেষে একদিন রাত ৩টায় মনে হোল এবার আর হচ্ছেনা-এবার ফোনেই কথা বলতে হবে-আমি চেয়ে বসলাম ওর মোবাইল নাম্বার।আর ও ও সাথে সাথে দিয়ে দিল-আর সেই প্রথম মোবাইলে তার কন্ঠ শুনলাম-
-হ্যালো?
--হ্যা বলো
-শুরুতেই তুমি বললেন?
-- আমি তো তোমার বড়ো তাইনা?
-হতে পারে- তাই বলে?
--আমি পড়ালেখায় ও তোমার সিনিয়র
-ওকে  ঠিক আছে
--তোমার কি কাল পরীক্ষা আছে?
-আমাদের সবসময় ই পরীক্ষা থাকে।
--আমাদের ও প্রায় প্রতি দিন ই অ্যাসেসমেন্ট থাকে।

এভাবে শুরু হল কথার গাড়ী-আর থামবার নাম নেই।সেদিন সারা রাত কথা বললাম।আর কথা বলতে বলতে আমরা হয়ে গেলাম আরো আপন।কেউ কাউকে ফোন না দিলে থাকতে পারিনা এক দন্ড।

এভাবে আমি সিদ্বান্ত নিলাম আমি সিলেট যাবো।কিন্তু ঢাকার বাইরে আগে কখনো যাইনি একা-তাও একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে-কিন্তু মন তো মানেনা।শেষ পর্যন্ত আমি হার মানলাম ভালবাসার কাছে।আমি গিয়ে হাজির হলাম সিলেট শহরে।

ঢাকার বাইরে এই প্রথম আমি গেলাম কোন বন্ধু ছাড়া।প্রথমেই গিয়ে নামলাম শহরের বাইরের বাস স্টেশনে।তার পর আমি বসে থাকলাম ঘন্টা তিনেক।ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার  একটা ই সমস্যা-১১.৩০ এর আগে বাসে উঠলে ভোর হবার ও আগে পৌছে যায় বাস সিলেট-আমি সেটা যানতাম না-যার ফলাফল অপেক্ষার প্রহর শেষ না হওয়া।সকাল হতেই ফ্রেশ হয়ে নিলাম।তার পর গেলাম শাহজালাল{র:} ও শাহপরান{র:} এর মাজার জিয়ারত করতে।
 
 দুপুরের খাওয়া শেষ করে রওনা দিলাম ওর সাথে দেখা করতে -দুজনে মিলে একটা রেষ্টুরেন্ট ঠিক করেছিলাম-আমি সেখানে আগে গিয়ে বসলাম-এবার আমার অপেক্ষার পালা-বসে আছি তো বসেই আছি-সুমনা  তো আর আসেনা-ব্যাগ থেকে খাতা বের করে একটা কবিতা লিখে ফেললাম-আমি আবার যখন তখন কবিতা লিখি।এটা আমার বদঅভ্যাস।

কবিতা লিখে সেটা ঠিক করতে করতে সে পৌছে গেল সেখানে-দেখলাম ও ওর একটা বান্ধবী নিয়ে এসেছে।আমি তো ওকে দেখে অবাক-ওকে আমি কোথায় যেন দেখেছি-আমার কোন ভাবেই মনে পড়ছেনা- দেখলাম ও ও আমার দিকে কেমন যেন তাকাচ্ছে-বুঝলাম আমাদের দুজনেই দুজনকে পরিচিত লাগছে।
কথা বার্তা হচ্ছে-এমন সময় ওর বান্ধবী প্রস্তাব দিল আমরা যেন বেড়াতে শাহজালাল ইউনির্ভাসিটি তে যাই- আমরা  সানন্দে রাজী হলাম।

ওরা দুজন এক রিকসায় উঠল-আমি উঠলাম আরেক রিকসায়-আধা ঘন্টা পর যখন আমি শাহজালালে গিয়ে পৌছালাম তখন আমার আরেকদফা বিষ্ময় এর পালা-আমি অবাক হয়ে দেখলাম আমি যেন এলাকাটা চিনি-কিন্তু ওটাই আমার প্রথম সিলেট ভ্রমন।চেপে গেলাম বিষ্ময়টা-হাটতে হাটতে পৌছে গেলাম শাহজালাল এর ঐতিহ্যমন্ডিত শহীদমিনারে-আমি-সুমনা আর ওর বান্ধবী-ওখানে বেদীর উপর বসে আমরা আড্ডা দিতে লাগলাম-এর মাঝে ওর বান্ধবীর অনুরোধে কয়েকটা গান ও গাইলাম।
শুরু হল আড্ডা।আড্ডার টপিক এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতে স্বপ্ন ক্যাটাগরিতে চলে গেল
-আমি কথায় কথায় বললাম-
-এই যেমন ধরো এই যায়গাটা আমার কেমন যেন খুব ই পরিচিত লাগছে
মনে হচ্ছে আমি যেন এখানে আগেও এসেছি।কিন্তু এটাই আমার প্রথম সিলেট ভ্রমন
সাথে সাথে সুমনা ও বলল
--আরে আমার ও তো পরিচিত লাগছে।মনে হচ্ছে আমি আগেও এখানে এসেছি-একা নয় কারো হাত ধরে-

কথাটা বলার সাথে সাথে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল-সাথে সাথে আমার যেন মনে পড়তে শুরু করল আমি আগেও এখানে এসেছি-রিকসায় নয়-দৌড়ে-আর আমার সাথে ছিলো কেউ একজন -আমি তার ডান হাত ধরে দৌড়ে দৌড়ে শহীদ মিনার চত্তর পেড়িয়ে গেছিলাম।
কথাগুলো সুমনাকে বলতেই ও যেন শিউড়ে উঠল-বলল
--আরে এটা তো আমার ও মনে হচ্ছে-আমার মনে হচ্ছে সেদিন আমাদের পায়ে জুতো ছিলোনা-আমরা কারো ভয়ে দৌড়াচ্ছিলাম-পেছন পেছন কেউ যেন আসছিলো-তখন কেউ একজন-যে আমার হাত ধরে ছিলো সে আমাকে টেনে নিয়ে গেল শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে- আমাদের সামনে ঘন বন ছাড়া কিছু নেই-তারপর-

আমি জুড়ে দিলাম-তারপর আমরা দৌড়াতে থাকলাম-তারপর-তারপর তারপর আর মনে পড়ছে না-
ও বলল-আমার ও না।কিন্ত জানেন আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি-
--আমার ও মনে হচ্ছে তোমাকে কোথাও যেন দেখেছি-কিন্তু মনে পড়ছেনা কোথায় দেখেছি-শুধু মনে হচ্ছে তুমি আমার খুব কাছের একজন-

মাঝ থেকে সুমনার বান্ধবী বলল-হয়তো সবটাই আপনাদের কল্পনা-দ্যাজাভু-এটা মনে হয় মাঝে মাঝে-
--কিন্তু যদি আমার টা স্বপ্ন হয়?
-আমি নির্ঘাত স্বপ্ন দেখেছি- সুমনা বলল।
--আমি ও -বললাম আমি
--কিন্তু দুজন মানুষ একসাথে স্বপ্ন্ দেখে কিভাবে?
তাও দুজনেরই দেখা হবার পর সেই স্বপ্নের এলাকায় গেল দুজনে?কিভাবে মনে পড়ে দুজনেরই একসাথে?

সুমনা ভয়ে আমার বাম হাতটা ধরে ফেলল-আমি শক্ত করে ধরলাম সেটা-দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি-কেউ জানেনা কেন দেখেছিলাম স্বপ্নটা-তবে আমি জানি স্বপ্নে আমি এই হাতটা ছেড়ে দিলেও বাস্তবে আর কোনদিনই এই মহামূল্যবান হাতটাকে ছাড়া যাবেনা-কোনভাবেই না...

No comments:

Post a Comment