Saturday, August 27, 2011

///////////লেখক///////////// রহস্য, রোমাঞ্চ ছোট গল্প

লেখক///// ২৮/০৮/২০১১
খুট করে দরজার তালাটা খুলে ঢুকে পড়ল দুইজন মানুষ। অন্ধকারে একজন আরেকজন কে ভালই আঁচ করতে পারছে। একজন পুরুষ -একজন নারী । দুইজনেই ঘরে ঢোকার দরজাটা আস্তে করে বন্ধ করে দিল পুরুষ লোকটা। দুইজনের পরনে উজ্জ্বল কিছু ছিলনা। তাই কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছিলনা। কিন্তু অনুভব করতে পারছিল একজন আরেকজন কে। হটাত করেই নিস্তব্ধতা ভেদ করেই মেয়েটা বলল-
"আচ্ছা আপনি কি এখানে একা থাকেন?"
লোকটা বলল-
"না এখানে মাঝে মাঝে ই আসি আমি। এই ফ্লাট টা আমার একান্তই নিজস্ব । এখানেই - এই কালচে মারবেলের টেবিলে বসেই আমি লিখেছি আমার সেরা সেরা গল্প গুলো। আমার সব গল্পের সৃষ্টি এই ঘরেই। কিন্তু এটার কথা কেউ জানেনা। শুধুই জানি আমি।" বলেই নিস্তব্ধ হয়ে গেল লোকটা।
"তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আপনি একজন লেখক?" মেয়েটার গলায় জিজ্ঞাসু স্বর।
"হ্যাঁ আমি লেখক। আমি লিখি। গল্প লিখি। উপন্যাস লিখি। এবং লিখি জীবনী কিনবা ভ্রমণ কাহিনী।" লোকটার সরল স্বীকারোক্তি।
"আপনি কোনদিন কবিতা লিখেছেন?" মেয়েটার গলায় জিজ্ঞাসু স্বর দানাবাধে একে একে।
" হ্যাঁ এক সময় আমি কবিতা লিখতাম। কবিতায় আমি হতাম জিঘাংসু স্বত্বা। কবিতায় আমি হতাম হন্তারক স্বত্বা। এখন আমি কবিতা লিখিনা। আমি এখন গল্প লিখি। এখন আমি শুধুই গদ্য লিখি। গদ্যের মাঝে কবিতা লিখি।" লোকটার গলায় অসন্তোসের সুর।
"আপনি কি কবিতা ভালবাসেন না?" আস্তে আস্তে প্রশ্নের বানে জর্জরিত করতে থাকে মেয়েটা।
"হ্যাঁ বাসি অবশ্যই। কিন্তু এক জন মানুষের মাঝে বেঁচে থাকা রহস্য গুলো কে আমি দানা ভেঙ্গে বের করে আনি। একজন মানুষের কষ্ট গুলোকে বের করে নিয়ে আসি আমার লেখার মাঝে। আমার এক একটা কবিতার মাঝে। মানূষের অজানা স্বত্বা কে বের করে এনে দাঁড় করাই মানুষের সামনে। মানূষ আমার লেখা পড়ে। আমি একটু একটু করে অমর হই মানুষের মাঝে।" অসহিস্নুতা ঝড়ে পড়ে লোকটার কন্ঠে। যেন আর পারছেনা প্রশ্নের উত্তর দিতে। আস্তে আস্তে মাথার পেছন দিকটার ব্যাথা বেড়ে যেতে থাকে। আস্তে আস্তে দেয়ালে দাঁড় করানো আলমিরা থেকে বের করে নিয়ে আসে দুই টুকরা কালো কাপড়।তারপর এগোতে থাকে মেয়েটার দিকে।

মেয়েটা দাঁড়িয়ে ছিল টেবিলের কাছে। লোকটা মেয়েটাকে টাবিলে বসায়। তারপর একটা কালো কাপড় দিয়ে মেয়েটার চোখ দুটোকে বাধতে শুরু করে। মেয়েটা বাঁধা দেয়না। রাস্তা থেকে মেয়েটাকে তুলে নেবার আগেই মেয়েটাকে বলা ছিল যে মেয়েটার হাত পা বেধে লোকটা যা খুশি তাই করতে পারে। এই জন্য ই লোকটা মেয়েটাকে অনেক টাকা দিয়েছে। টাকার পরিমান অনেক বেশি থাকায় মেয়েটা ও কোন বাঁধা দেয়না।

আস্তে আস্তে টেবিলের সামনে রাখা পাথরের চেয়ারের সাথে। লোকটা একটার পর একটা কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে মেয়েটাকে। মেয়েটাও বলে চলে। একান্ত মনের গহীনের সব কথা। একান্ত নিজস্ব সব কথা। যে কথাগুলো সে কাউকেই হয়ত বলেনি। কাকে ভালবাসত , কাকে ধোকা দিয়েছে, কাকে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌছে দিয়েছে। আর লোকটা লিখে যেতে থাকে মন্ত্রমুগ্ধের মত। আস্তে আস্তে রাত গভীর হয়। মেয়েটা অস্বস্তি বোধ করে। চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকতে থাকতে একসময় প্রতিবাদ করে ঊঠে। কিন্তু মেয়েটার প্রতিবাদে থোরাই কেয়ার করে লোকটা - লিখেই যেতে থাকে। একসময় মেয়েটা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। এবার লোকটা ঊঠে পড়ে লেখা থেকে। গল্পটা লেখা শেষ হয়না বলে মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সে।

তারপর ঊঠে গিয়ে দেয়াল আলমারি থেকে একটা বক্স বের করে এনে রাখে মেয়েটার সামনে। তারপর সেটা খুলে একটা স্কালপেল বের করতে করতে বলে-
" তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম- আমার এই ফ্লাটে একবার যে আসে সে আর ফেরত যায়না। আমি তার স্বত্বা কে আমার লেখার মাঝে নিয়ে আসি। আমি তাকে বেধে ফেলি আমার সৃষ্টির মাঝে। আমি তাকে আবদ্ধ করি আমার স্বত্বার মাঝে"- বলেই স্কালপেল টা আমূল বসিয়ে দেয় মেয়েটার গলায়। গলগল করে রক্ত পড়তে থাকে মেয়েটার কাটা গলা থেকে। কন্ঠ নাড়ি চিড়ে দিয়েছে লোকটা। তাই চিৎকার করতে পারেনা। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়। এরপর লোকটা আবার গিয়ে টেবিলে বসে। আবার লিখতে থাকে শেষের অংশ টুকু। রাতের মাঝেই অনেক কাজ লোকটার। লেখাটা শেষ করতে হবে। তারপর মেয়েটার লাশ টাকে ফেলে আস্তে হবে কোন এক দুরের ডাস্টবিনে। ভেবেই আবার লিখতে শুরু করে লোকটা আপন মনে.....
..................................

একুশে বইমেলায় লেখক কবি আরশাদ হালদারের নতুন পাঁচটা উপন্যাস বের হয়েছে। সবকটাই হিট। লেখকের অটগ্রাফ নিতে লেগেছে বিশাল লাইন। সেই লাইনে লিনা ও দাঁড়িয়ে ছিল একমনে। তার চিন্তা চেতনা জুড়ে এখন শুধুই লেখক আরশাদ হালদার। সে ভাবনার জগত থেকে বের হবার আগেই তার অটোগ্রাফ নেবার পালা চলে আসে। লিনা কে দেখেই আরশাদের চোখ দুটো চকচক করে ঊঠে। তিনি অটোগ্রাফ দেবার সময় লিখে দেন নিজের ব্যাক্তিগত ফোন নাম্বারটা ও । লিনা ফোন নাম্বার পেয়ে যার পর নাই খুব খুশি।রাতেই লেখক কে ফোন করবে ভাবতে ভাবতে সে বের হয়ে আসে ভক্তদের ভীর থেকে। হয়ত লেখকের প্রেমে বিভোর লিনা। কিন্তু জানেনা সে কোন পথে এগিয়ে চলেছে.....

( সমাপ্ত )

No comments:

Post a Comment