Sunday, August 28, 2011

dffdf

খনার বিজ্ঞান
#পূর্ণিমা আমায় যে ধরে হালতার দুঃখ সর্বকাল।।
তার বলদের হয় বাতঘরে তার থাকে না ভাত।।
খনা বলে আমার বাণীযে চষে তার হবে হানি।।
-
এই বচন বুঝিয়ে বলার প্রযোজন নেই মনে করছিতবে এর তাপর্যটুকু গুরুত্বপূর্ণগ্রহ নক্ষত্রের বিশেষ অবস্থান প্রাণী জগতের ওপর পড়ে, একথা আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যাও অস্বীকার করে নাএই সম্পর্কিত আলোচনায় পরে যাওয়া যাবেতবে এই বচনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৬% কৃষকএবং এখানে একটি বিষয় আলোচনা হওয়া জরুরি আমাদের গ্রামের সংস্কৃতিতে অতীত কোন ঘটনার রেশ পরম্পরায় থেকে যায়ফলে হয়তো এমন কোন ঘটনা ঘটেছিল -যা খনার এই বচনের পক্ষে রায় দেয়এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য খনার বচনের বিপক্ষে যে সমস্ত কৃষক রায় দিয়েছেন তাদের কৃষিজ ঐতিহ্য নেইঅর্থা তারা পূর্বে অন্য কোন পেশায় ছিলন কিন্তু এখন কৃষিকাজে সম্পৃক্তএখানে আরো কিছু বচন উল্লেখ করা যায়
#
খানা ছখানা ভাগ্যে পাইসাতের কাছেতেও না যাই।।
-
গরুর দাঁত সাত হলে ভালো নাকুমিল্লায় ৯৮% কৃষক সাত দাঁতওয়ালা গরুকে খারাপ বলেছেন
এরকম আরেকটি আছে-
#
জাতের গরু জিহ্বা কালা
আরো কিছু বচন-
#
লাউ গাছে মাছের জলধেনো মাটিতে ঝাল প্রবল।।
#
ব্যাং ডাকে ঘনঘনশীঘ্র বৃষ্টি হবে জেনো
#ডাহিনে ফণী বামে শিয়ালদহিলে দহিলে বলে গোয়ালী।। তবে জানিবে যাত্রা শুভালী।।
-
বচনটার মানে হচ্ছে ঘর হতে বের হওয়ার সময় ডানে সাপ বামে শেয়াল দেখলে যাত্রা শুভ হবেএটাকে হোরা শাস্ত্র বলা হয়প্রাচীন ভারতের রাজা থেকে শুরু করে পন্ডিতরাও এই হোরা শাস্ত্র চর্চা করতো এবং মানতোবরাহ মিহিরও এই শাস্ত্র চর্চা করতেনশহুরে মেজাজেও এই রকম বিভিন্ন সংস্কার আছেতবে এগুলোকে কুসংস্কার বলার বাজারি রেওয়াজ চালু আছেসেই আলাপে না গিয়ে বলা যায় আমাদের গ্রামের লোকেরা এই সমস্ত বেশ ভালো ভাবেই মেনে চলেন, এবং গড়ে ৮০% পল্লিবাসী এই বচন মেনে চলেন
একই রকম আরেকটি বচন-
#
হাঁচি টিকটিকির বাধাযে না মানে সে গাধা
#দক্ষিণ ছেড়ে উত্তর বেড়েঘর করগে পোতা জুড়ে।।
বাড়ির দক্ষিণ দিক খোলা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন ৫৩%কুমিল্লায় এই মতের ক্ষে ১০০%
স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু বচন আছে-
#আলো হাওয়া বেঁধো নারোগে ভোগে মরোনা।।
#পুবে হাঁস পশ্চিমে বাঁশউত্তরে বেড়ে, দক্ষিণে ছেড়ে, ঘর করগে পুতা জুড়ে।।
খাবার বিষয়ক-
#
অধিক খেতে করে আশএর নাম বুদ্ধি নাশ।।
#
মুড়ি আর ভুড়ি সকল রোগের গুড়ি।।
#
বারো মাসে বারো ফলনা খলে যায় রসাতল।।
#
ফল খেয়ে জল খায়জম বলে আয় আয়।।
#
বেল খেয়ে খায় পানিজির বলে মইলাম আমি।- জির মানে কৃমি
#
আম খেয়ে খায় পানিপোঁদ বলে আমি ন জানি।।
#
শুধু পেটে কুলভরা পেটে মূল
#
খানা খায় করে শব্দঅলক্ষী খুশী লক্ষী জব্দ।।
#দিনে বালিশরাতে চালিশ।।
#
দুগ্ধ শ্রম গঙ্গাবারি, এ তিন উপকারী।।
#
ততো তিতা চুকা ঝালএই চার পুরুষের কাল
#
ভোরের হাওয়া, লাখ টাকার দাওয়া।।
এমন অসংখ্য বচন আছেএই লিখার সমস্ত বচন ও পরিসংখ্যান কৃষি ও কৃষ্টি নামক ড. আলি নওয়াজ লিখিত বই থেকে নেয়াএই উপপর্ব শেষ করছি একটি মজার বচন দিয়ে
#
অক্ষর দ্বিগুণ চৌগুণ মাত্রানামে নামে করি সমতা।।
তিন দিয়ে হরে আনতাহে মরা বাঁচা জান।।
এক শুণ্যে মরে পতিদুই থাকলে মরে যুবতী।।
অর্থঃ দম্পতির নামের অক্ষরে দ্বিগুণ ও মাতাকে অর্থা অ ই ইত্যাদি দ্বিগুণ সংখ্যাকে চতুর্গুন করিয়া ৩ দিয়া হরণ করিলে যদি ভাগশেষ ১ বা শূণ্য থাকে,
তবে পতি অগ্রে মরিবে এবং দুই থাকিলে স্ত্রীর মৃত্যু অগ্রে হইবে
আরো কিছু খনার বচন
*তাল বাড়ে ঝোপে খেজুর বাড়ে কোপে
*মাংসে মাংস বৃদ্ধি, ঘুতে বৃদ্ধি বলদুধে বীর্য বৃদ্ধি, শাকে বৃদ্ধি মল
*তেল তামাকে পিত্ত নাশযদি হয় তা বারো মাস
*রবিতে বিধবা হয় সোমে পতিব্রতামংগলেতে বেশ্যা, বুধে সৌভাগ্য সংযৃতা।। বৃহস্পতিবারে স্বামী লক্ষীবন্ত হয়শুক্রবারে পুত্র দীর্ঘজীবি হয়।।
শনিবারে বন্ধা হয় জ্যোতিষির মতেঅতএব লিখি দোষ কাটিবে যাহাতে।।
এই বচনটি সম্ভবত যৌন মিলন সংক্রান্ত
মুখে মুখে প্রচলিত এসব ভাষা যুগ যুগ ধরে তাদের কৃষিকাজ এবং জীবনাচারে প্রভাবিত হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানীরা বিষয়টিকে সোজা চোখে না দেখলেও খনার বচন তার অবশ্যম্ভাব্যতা থেকে কক্ষচ্যুত হয়নি। বরং গ্রামের কৃষকরা বিজ্ঞানের ভাষার চেয়ে প্রবাদ-প্রবচনে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তবে অনেক বিজ্ঞজন খনার বচনকে আধুনিক বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করতে গিয়ে প্রবচনগুলো খনার বিজ্ঞান হিসেবে অভিজ্ঞান করেন। বচনগুলো অষ্টম অথবা নবম শতাব্দীতে রচিত। তবে আজো তা নির্ভুল ও সূক্ষ্মদৃষ্টিসম্পন্ন নীতিবাক্য হিসেবেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত। যেখানে ঋতুভেদে শস্য উপাদন, আবহাওয়ার উপলব্ধি সন্নিবেশিত হয়েছে এবং মাঝে মাঝে ভবিতব্য নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে চলেছে।
যদি বর্ষে আগনে/রাজা যায় মাগনে/ যদি বর্র্ষে পুষে/ কড়ি হয় তুষে/যদি বর্ষে মাঘের শেষ/ধন্য রাজা পুণ্য দেশঅর্থা যদি অগ্রহায়ণে বৃষ্টি হয় তবে দুর্ভিক্ষে রাজাকে ভিক্ষা করতে হবে। পৌষ মাসে বৃষ্টি হলে তুষ বিক্রি করেও টাকা হয়, আর মাঘের শেষ দিন বৃষ্টি হলে রাজার ভা-ার শস্যে পূর্ণ হয়। কিংবা যত জ্বালে ব্যঞ্জন মিষ্ট/তত জ্বালে ভাত নষ্টঅর্থা মিষ্টি যত জ্বালানো যাবে তত ভালো, আর ভাত যত জ্বাল দেয়া যাবে তত নষ্ট হবে।
খনা তার প্রবাদে মাঝে মাঝে প্রাচীন ইতিহাসের কথা উল্লেখ করেছেন। শুভ-অশুভ দিনক্ষণ নিয়ে ভবিষ্যতের কথা চিরন্তন ভাষায় বলেছেন। যদি না হয় আগনে বৃষ্টি/তবে না হয় কাঁঠালের সৃষ্টিঅর্থা অগ্রহায়ণে বৃষ্টি না হলে কাঁঠালের ফলন ভালো হবে না।
কৃষিকাজে খনার বচনে অনেক নির্দেশনা আছে যা আধুনিক কৃষিবিজ্ঞানের সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ। হাত বিশ করি ফাঁক/আম কাঁঠাল পুঁতে রাখকিংবা গাছগাছালি ঘন সবে না/গাছ হবে তার ফল হবে নাকিংবা খনা ডেকে বলে যান/ রোদে ধান ছায়ায় পানকিংবা ষোল চাষে মুলা/ তার অর্ধেক তুলা/তার অর্ধেক ধান/ বিনা চাষে পান।গবাদিপশু নিয়ে খনা অনেক অনুভূতিপ্রবণ বচন রচনা করেছেন। যে চাষা খায় পেট ভরে/গরুর পানে চায় না ফিরে/গরু না পায় ঘাস পানি/
ফলন নাই তার হয়রানিকিংবা গরুর পিঠে তুললে হাত/ গিরস্তে কবু পায় না ভাত।প্রকৃতিবিষয়ক প্রবচনে তিনি মানুষের জন্য সাবধান বার্তা ঘোষণা করেছেনÑ ‘আলো হাওয়া বেঁধো না/রোগে ভোগে মরো না।
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের
Early to bed, and early to rise, makes a man healthy, wealthy and wise
সেই বিখ্যাত উক্তির বহু আগে খনা লিখে গেছেন সকাল শোয় সকাল ওঠে/তার কড়ি না বৈদ্য লুটেঅর্থা যে আগে শয্যায় যায় এবং আগে শয্যা পরিত্যাগ করে তার জন্য ডাক্তারের প্রয়োজন হয় না। এবং সব সমালোচনার উত্তর আছে। বাংলাদেশে কিছু দিন আগে চালু হয়ে ও বন্ধ হওয়া
Daylight saving timeপদ্ধতিও তার সমর্থক। 

খনা লেখ্য ভাষ্যহীন প্রাকৃতদের কৃষি সংক্রান্ত জ্ঞানের রাজ্যকে বিকাশে গেঁথে চলেন বচনের পর বচন, যা কৃষকের মুখে আজো টিকে আছে তার শাশ্বত প্রাণ নিয়ে। বরাহ চেষ্টা করেন লীলাবতীকে বশে আনার। কিন্তু লীলা চলছেন নিজের ইচ্ছেমতো। লীলার অবাধ্যতায় ক্রুব্ধ বরাহ পুত্রকে আদেশ করেন লীলার জিহ্বা কর্তন করে তাকে যেন সর্গ করা হয়। খনার বচনের মাঝে টিক থাকা শত বছরের জল, মাটি, ফসল আর শ্রমমুখর মানুষের গন্ধ মাখা জ্ঞান আর সত্যটুকু কি সত্যি লীলাবতীর নাকি এ সত্য তথ্য সবই এ ভূখণ্ডের বৃষ্টি, পলি, আলো আর জল হাওয়ার সাথে মিশে থাকা যুগান্তরের সামষ্টিক জ্ঞানের সংকলন? এমন বর্বরোচিত নির্মম পরিণতি লীলাবতীর একি শুধুই একজন বলেই, নাকি নারী হয়েই তিনি চাষাভুষোর সাথে মিশেছেন বলে, সেই তার কাল? পুরুষতন্ত্র না শ্রেণী কাঠমো; নাকি উভয় দাঁড়ানো লীলাবতীর বিপ্রতীপে? স্বামী মিহির বা প্রাকৃত লোকালয় কারো পরোয়া না করে। সকল পিছুটানের মায়া শেকল ভেঙে নিজেকে খনা নিয়ে যান দিগন্তের ওপারে। শুধু স্বাক্ষী হয়ে থেকে যায় পথে প্রান্তরে কৃষকের মুখে মুখে খনার শান্ত সঙ্গগুলো। তবু প্রশ্ন দানা বাঁধে মনে খনার সত্যিই কি একক সত্য, নাকি আজকে যা নির্ভুল কাল তাই হতে পারে অসত্য? কেবলই সত্যের পথে দাঁড়ানোর যে মৃত্যুনেশা তার সে নেশা কি একরোখা জেদ? এভাবে খনা নিজেকে নিজেই করেছেন প্রশ্নের সম্মুখীন।

লেখার সোর্স নেয়া হয়েছে
http://khona.blog.com/
http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%96%E0%A6%A8%E0%A6%BE

No comments:

Post a Comment