Thursday, July 28, 2011

ছোট গল্প...███ লাশ ███ ..

২১-০৩-১৯৯৭
ফিরোজকে আমি বিশ্বাস করে ভুল করেছি। ওকে আমি ভুল করে খুব ভাল একজন বন্ধু মনে করেছিলাম। তাই ওকে দিয়েছিলাম আমার ভাইয়ের স্থান। আমার মাকে মা বোন কে বোন ডাকার অধিকার। ছোটবেলা থেকে ওকে আমি নিজের ভাইয়ের মত দেখেছি। কিন্তু আজ আমার কাছে সব পরিষ্কার। ও আমার ভাই নয়- ও আমার বোনার ঈজ্জত হরণ করেছে একা পেয়ে। যে বোন হেসে খেলে কাটাত ওর সময়- সে এখন কবরের ভেতর। আত্মহত্যা ছাড়া হয়ত কোন পথ খুঁজে পায়নি।

কদিন আগে সুমি আমাকে বলেছিল-
"ভাইয়া ফিরোজ ভাই আমার দিকে কেমন কেমন করে তাকায়- আমার ভাল লাগেনা"
সেদিন আমি ওকে আদর করে বলেছিলাম -
"বোকা তোকে তো ও নিজের বোনের মত দেখে।"
আমি বিশ্বাস করিনি সেই ফিরোজ যাকে আমি নিজের ভাই মনে করেছিলাম সে রাস্তা থেকে সুমিকে তুলে নিয়ে গিয়ে......
না।। আর ভাবতে পারছিনা। ওকে আমি খুন করে ফেলবো..

২৭-০৩-১৯৯৭

মাত্র আমি ফিরোজকে লোহার রড দিয়ে মেরে মাথার পেছন দিকটা থেতলে দিয়েছি। এক বাড়িতেই শেষ বেচারা। ইচ্ছা ছিল ওকে কেটে টুকরা টুকরা করে ভাসিয়ে দেব বুড়িগঙ্গায়- কিন্তু এখন ঘেন্না লাগছে। এইত কদিন আগেও কোরবানির গোস্ত কাটার জন্য আমাকে ও হাত লাগাতে হত। নিজের হাতে কত মাংস কেটেছি। কিন্তু এই পশুটার দিকে তাকাতেই আমার খুব ঘেন্না হচ্ছে।

কি করা যায় একে? বস্তা ভরে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেব নদীতে?
নাহ- ভুল হবে। কালকেই লাশ ভেসে ঊঠবে- তখন আমাকে ঠিক বের করে ফেলবে পুলিশ।
কাটাকাটির চিন্তা তো আগেই বাদ দিয়েছি।
মাটি চাপা ও দিতে পারতাম- কিন্তু এখন ঢাকা শহরে খালি যায়গা খুঁজেই পাওয়া যায়না। মাটি চাপা দেব কই? এর মাঝেই লাশের গা থেকে গন্ধ বের হওয়া শুরু হয়েছে। মাকে তিনদিন আগে রেখে এসেছিলাম আমার ফুফুর বাড়িতে। না হলে এখন মা এসব দেখলে ঠিক পাগল হয়ে যেতেন।
কি করি এখন?

২৮-০৩-১৯৯৭
টানা দুই দিন হতে চলল আমি কিছু খাইনি। লাশটাকে রেখেছি বাথরুমে ।
একটু আগে দুইবার বমি হয়েছে আমার। ফুফুর বাড়ি থেকে মা ফোন করেছিল। এখানে আসতে চায়। কিন্তু এখন এখানে আসলে আরেক কান্ড বাধবে। তাই এখন আসতে না করে দিয়েছি।
এখন অনেক রাত। এত রাতে শুধু একটা বাড়িতেই আলো জ্বলে। সেটা হল এলাকার নেতা সংসদ সদস্যের বাড়িতে। উনি সারা রাত জেগে দিনে ঘুমান। ভোটের সময় দেখা হয়। তারপর উনি হাপিস হয়ে সারা বছর ঘুমান। এভাবেই চলছে। আমি কি উনার কাছে যাব? গিয়ে বলব যে আমি একটা খুন করেছি?
পুলিশকে ফোন করেছিলাম। বিশ্বাস করেনি আমার কথা। তাই এখন আমাদের নেতাই শেষ সম্বল। আমি উনার কাছে গে্লাম......

১৫-০৪-১৯৯৭
আজ আমার দ্বিতীয় মিশন। কি মিশন জানেন? খুন করার মিশন। বিরোধী দল হরতাল দিয়েছে। তাই এখন একটা ইস্যু দরকার যাতে সরকারী দল ও বলতে পারে যে তাদের ও একজন মারা গেছে। আমাকে সেদিন রাতে নেতা চুপচাপ উনার বাসায় থাকতে বললেন। তারপর দিন থানা থেকে ওসি সাহেব আসলে উনি সব চেপে যান। বাসা থেকে লাশ উদ্ধার হয়। কিন্তু রেডিও টিভি পর্যন্ত খবর পৌছায়না।

দিন কয়েক এর জন্য আমাকে আরেক টা এলাকায় পাঠানো হয়। সেখানে আমি বেশ ভাল ছিলাম। চিকিৎসা করানো হল আমার। সুস্থ হলে আমাকে আমার প্রথম মিশনে পাঠাল নেতা। আমাকে এক জন পাতি নেতাকে খুন করতে হবে। খুনের পর লাশ ও গুম করতে হবে।

সেবার আমি ফাইভ স্টার নিয়ে গিয়েছিলাম খুন করতে। হাত অনেক কেঁপেছিল। মারার পর লাশ টা গুম করতে ও অনেক ঝামেলা হয়েছিল। তাই এবার আমাকে আমার পুরোনো অস্ত্র দেয়া হল। সেই লোহার রড। যেটা দিয়ে আমার প্রথম শিকার ছিল ফিরোজ। আমাকে শুধু মাথার পেছন থেকে বাড়ি মেড়ে মেরে ফেলতে হবে সেই পাতি নেতা কে।
নাহ-থুঃ ফিরোজ নামটা মনে আসতেই মুখে থু থু চলে আসল। আমাকে এগিয়ে যেতে হবে খুব আসতে আসতে। সামনে বসে থাকবে খুনি।

অনেক ক্ষন ধরে বসে আছি।কিন্তু কেউ আসছেনা। কি হল- আমাকে একটা খুন করতে বলা হল- সামনে বসে থাকবে খুনি। লম্বা পাচফুট চার- কালো চেহারা। চুল কোঁকড়া। এমন একজন। ও নেতা আবার সবুজ শার্ট ও পড়ে আসবে। এইত আমাকে যা বলা হয়েছে। কিন্তু সে রকম তো কেউ আসছে না। যেখানে বসে আছি- পুরো এলাকা শুনশান। কখন যে আসবে সেই শিকার- আমি শিকারী তাকে খুন করবো কে জা্নে...

ওই ত দেখা যাচ্ছে শিকার আমার- সোনা তুমি আসতে অনেক দেরি করে ফেলেছ। ওই ত- বাইকে করে এসেছে। পাতি নেতা বলে কথা। ঐযে হাতে লাল স্কার্ফ- লাল স্যান্ডো গেঞ্জি- উচ্চতা মাপা যাচ্ছেনা। তবে মাথার চুল কোঁকড়া। আমাকে পেছন থেকে যেতে হবে। পেছন থেকে মাথার বামে এলাকায় জোড়সে একটা মারলেই বেচারা শেষ।

কিন্তু একি? ও যাচ্ছে কোথায়? আমাকে না বলা হল ও অনেক ক্ষন থাকবে। আমাকে তাহলে কি ব্লাফ দিল ওরা? এখন আমি কি করবো? আমি কি ফিরে যাব? চিন্তা করতে করতে ঘুরতে গিয়েই দেখি আমার পেছনে সেই পাতি নেতা।
দূর থেকে আমি তাঁর চোখ দেখিনি। এখন দেখতে পাচ্ছি। টকটকে লাল। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ও তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমার হাতে লোহার রড টা ধরা। কিন্তু আমি মারার চিন্তা করার আগেই দেখতে পেলাম একটা সাদাটে ঝলক- তারপর সব ফাঁকা .....

..............................................................................................................................................................................................................................................................................................................
দুই দিন পর একটা লাশ নিয়ে মিছিল করছে দুই টা দল। পুলিশের সাথে ধাওয়া পালটা ধাওয়ায় জখম হয়েছে শতাধিক। দুই দলের সব নেতা সেই লাশকে নিজেদের দলের লোকের লাশ বলে দাবি করছে। কিন্তু সেই লাশের আসল পরিচয় কেউ জানেনা.........

Wednesday, July 27, 2011

████████ফিরে এসো তুমি████████

কত দূরে তুমি- দূর থেকে ও দূরে-
জানিনা আর কতকাল অপেক্ষা করলে দূর নীলিমা থেকে
তোমার ডাক ভেসে আসবে- এখানে কপোতের মত অপেক্ষায় আমি
জরা বৃক্ষ শিকড় গেড়েছে আমার পায়ে-
আঙ্গুলের ফাঁকে জমেছে বেদনার পুঁজ
অজর শিরাতে জমেছে উন্মাতাল ঢেউয়ের জল-
ফুলে ফেপে উঠেছে বুকে জমানো ব্যাথা গুলো
কাঁদতে কাঁদতে চোখের কোটরে জমেছে ঝুল কালি
আকাশে এখন আর ফেপে উঠেনা আগের মত কালবৈশাখী
অক্ষম আমি-দুঃখ গুলোকেও ভুলে থাকতে পারিনা-
কানে বাজে আজন্ম পাপের মত ।

আকাশে শালিক ঊড়ে- ঊড়ে শঙ্খচিল বলাকা-
কিন্তু কেউ এসে আগমনী গান শোনায়না তোমার
বাতাসে ভেসে আসেনা তোমার চুলের ভোতা গন্ধ
হয়ত তুমি নেই বলে এখানে আকাশে চাঁদ ওঠেনা
চাঁদ উঠলে জোছনা আসেনা
জোছনা এলে সবাই মিলে চলে যায়না বনে
এখানে তুমি হীন সব ছন্নছাড়া অর্ধন্মাদ।

আকাশের বুক চিড়ে বৃষ্টি নামে-
আমার চোখ বেয়ে নামে চলন্ত বেদনারা
তুমি নেই পাশে তাই
হয়ত আকাশ বেয়ে এখন কান্না নামে
বৃষ্টি নেমেছিল সেই কবে
নদী মিশেছিল সমুদ্র সন্ধিতে তুমুল জলরাশি হয়ে
মাটিতে নেমে ভালবেসেছিল মেঘের কান্না
এখন হয়ত তাও নামেনা-
চিৎকার করি- কেঊ শোনেনা-
হয়ত শুনবেনা তুমি ও
তবুও কন্ঠ নালী ভেদ করে চিৎকার করে বলি-
ফিরে এসো তুমি আমার কাছে-
ফিরে এসো আবার
ফিরে এসো এই আমাতে
এসে দেখো -তুমি এখন ও আমার..

Tuesday, July 26, 2011

████████তোমাকেই নিয়ে লেখা ████████

তোমাকে নিয়ে নাম লিখেছি অন্তরের দেয়ালে
প্রেম লিখেছি রক্তিম অন্তরালে-
তোমার নামের নিচেই ছিল দুঃখ বেদনা রা
উথাল পাতাল করেই জল বুদ বুদ ঢেকে দিল তোমাকে
নাকি তোমার নামকে?
কে জানে।
জলের গালে বৃক্ষ জমে- পাতায় নামে মৃদুলাক্ষ জোছনা
তোমার গালে....
তোমাকে নিয়ে আমি এই মৃদুলাক্ষে স্বপ্ন দেখেছি
লেখেছি বর্ণ হীন জোছনার মাঝে কাঙ্খিতার দুরু দুরু বুকের শ্বাস
আর কেউ নয়- শুধু তুমি ই ছিলে-
তাই আমি তোমাকে নিয়েই একেছি ভালবাসার পাথুরে ক্যানভাস
রাঙ্গানো ভালবাসার মাঝে দুরন্ত আবেগ-
নীলচে কালো সন্দেহ দের দূর করেছি প্যস্টেল ভালবাসায়
সেখানে একেছি নিচ্ছিদ্র প্রেম।
প্রেম নাকি সঙ্গম-
শরীরের মাঝে শরীরের মিলন-
নাকি মনের মাঝে মন?
তোমাকে নিয়ে বাসর সাজিয়ে আমি সঙ্গম করেছি পড়ন্ত বিকেলের
এক রাশ দুঃখের সাথে
আমাকে ঘীরে ছিল একনদী কষ্টের বালুকনা-
তোমার আবেগে কেঁদেছে আমার উলঙ্গ চুলের রাশি
তুমি কি দেখেছ?
না-
তুমি দেখে ফেলার আগেই আমি মুছে ফেলেছি চোখের কান্না
তুমি দেখে ফেলার আগেই কষ্ট গুলোকে দিয়েছি বিনম্র বিদায়
দুঃখ গুলো পেচিয়ে রেখেছি ভাল মুখোশের আড়ালে

এই দেখো তোমাকে নিয়ে একটা কবিতা ও লিখে ফেলেছি
ছন্দের পর ছন্দের অমিলে তুমি শুধু তুমি
নিবিড় শুধুই নামের মাঝে-
মিশে গেছ একাকার.......

********ঘুষখোর********* – রহস্য গল্প

ঘুষখোর – রহস্য গল্প ২১-০৭-২০১১


চেয়ারে বসে বসে সারাদিনের ঘুষ এর উপার্জন গুনছেন সমীর বাবু। কেউ দিয়ে গেছে পাঁচশো টাকার বান্ডিল- কেউ দিয়ে গেছে ১০০০ টাকার বান্ডিল।উল্টো পালটা নোট গুলো গুছাতে গুছাতে মনে মনে গালি দিতে থাকলেন সেই টাকা যারা দিয়েছে তাদের। মনে মনে বললেন-

“শালা মানুষ গুলো ভাল মত টাকা গুলো গুছিয়ে ও দিতে পারেনা। ওরা জানেনা যে এখন ব্যাংকে উল্টা পালটা টাকা নেয় না? টেলার কাউন্টারে ভটকু মেয়েটা প্রতিদিন ঘ্যন ঘ্যাঙ করে উল্টা পালটা টাকা দিলে ”

মনে মনে বলতে বলতে মুখে আরেক খিলি পান ঢুকিয়ে দিল সমীর বাবু। নিজের মনে মনে টাকা গুলো আবার গুনতে শুরু করবেন- এমন সময় ঘড়িতে ঢং ঢং করে পাঁচটা বাজার সংকেত দিল। দেয়ালে একটা পুরানো আমলের ঘড়ি লাগানো সমীর বাবুর সামনে। পুরনো একটা রাজবাড়ির দালানে এই সরকারী বিদ্যুৎ উন্ন্যনের এই অফিসে আজ প্রায় ৬ বছর হতে চলল সমীর বাবুর। এখানে ঢোকার সময় পুরো দশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে নেতা কে খুশি করে তারপর নেতার সেক্রেটারিকে দুই মাসের বেতনের সমান টাকা দিয়ে তারপর চাকরি টা পেয়েছেন তিনি। এজন্য অবশ্য সমীর বাবুর সকল জমিজমা বন্ধক দিতে হয়েছে উনাকে। আর এখানে চাকরি পেয়েই প্রথম মাস থেকে শুরু করেছেন পুরো-দমে ঘুষ খাওয়া।

পুরো বারোলাখ টাকা দিয়ে সমীর বাবুর বাপের দিনের জমি ছাড়াতে ছয় বছর লেগে গেছে। এর মাঝে উনার মা ও মারা গেছেন। বিয়ে করেছে একটা। মেয়ে ও আছে- ক্লাস টু তে পড়ে।কিন্তু আজ উনার মন খুব ভাল- কারণ আজ প্রথম বার নিজের জন্য ঘুষ খেয়েছেন তিনি। এর আগে জমি ফেরত দিতে আর নতুন ফ্লাট কেনার জন্য খেয়েছেন। চিন্তা করেছিলেন ছেড়ে দেবেন ঘুষ খাওয়া। কিন্তু কিছুই করার নেই। অভ্যাস হয়ে গেছে। ঘুষ ছাড়া একটা ফাইল ও ছাড়েন না তিনি।

পাঁচশো টাকার বান্ডিল টা গোনা প্রায় শেষ এমন সময় ঘরে এসে দরজার আড়ালে মুখ ঢেকে চিৎকার করে বেয়ারা নিখিল বলল- “
সার এক জন বুড়া লোক আসছে একটা ফাইল নিয়ে।অনেক বার বলেছি আজ অফিস শেষ- কিন্তু বেটা কিছুতেই শুনবেনা-সার উনাকে কি আসতে বলবো?”

ফাইলের কথা শুনে সমীর বাবুর চোখ দুটো চকচক করে উঠল- বললেন-
“পাঠা পাঠা-ভেতরে পাঠিয়ে দে শিগগির- হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলতে নেই রে”

শুনেই নিখিল দৌড় দিল বুড়োকে আনতে। সমীর বাবু তাড়াতাড়ি সামনে পড়ে থাকা নোট গুলো পাশে পড়ে থাকা কালো ব্যাগে ভড়ে একটা ভারিক্কি চাল নিয়ে বসে থাকলেন- খদ্দেরের সামনে হাসি মুখ নিয়ে থাকলে আবার কেউ টাকা দিতে চায়না।টাকা দিতে গড়িমসি করে।

টাকা নিয়ে কি কি করবেন কি কি কিনবেন এটা চিন্তা করতে করতে প্রায় চোখ বুজে ফেলেছিলেন সুখে- এমন সময় খুক করে কাশি শুনে সামনে তাকালেন তিনি- তাকিয়ে পুরো থ মেরে গেলেন। দেখেই মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল উনার- কারণ সামনে দাঁড়িয়ে আছেন উনার স্কুলের নিতেশ সার। উনার সাহায্য ছাড়া কোন ভাবেই সরকারী স্কুলে চান্স পেতেন না সমীর বাবু। সার কে দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সমীর বাবুর। মনে করেছিলেন এতদিন পর সার হয়ত উনাকে চিনবে না। অনেক দিন পর দেখা- সার কি চিনবে? এর মাঝে সমীরের সঙ্গী হয়েছে দের মনি একটা পেট। চেহারায় জেল্লা এসেছে। পান খান রীতিমত। মুখের পাশে পানের পিকের একটা গাড় দাগ চেহারাটাকে পুরোপুরি সরকারী চাকুরের বানিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু সমীর বাবুকে পুরো অবাক করে দিয়ে নিতেশ সার বলে উঠলেন-

“আরে সমীর না? কেমন আছিস? আমাকে চিনেছিস? আমি তোর সেই
হাই স্কুলের নিতেশ সার। আমাকে যে তুই পরীক্ষা পাশ করে টুক করে প্রণাম করেছিলি মনে আছে? ওই যে তোর বাবা মারা গেল যে বছর তুই পরীক্ষা দিতে পারলিনা... যাক যে কথা তুই বাবা এখানে অফিসার কবে থেকে রে? আমাকে একবার ও জানাস নি। সায়েন্স নিয়ে পড়ে ও বিবিএ পড়লি। তারপর তোর তো কোন খোঁজ নেই। আমাকে অনেক গুলো অফিসে ঘুরিয়ে তোদের সেকেন্ড অফিসার আমাকে বলেছে তোর কাছে আসতে। আমাকে আরও বলল তুই নাকি ঘুষ খাস- যেন বেশ কিছু টাকা নিয়ে যাই। আমি ভাবলাম আগে সাক্ষাত করি। তারপর না হয় ভাবা যাবে। কিন্তু এখন তোকে দেখে মনে বল এলো রে- আমি তো আর কোন ঘুষ খোঁড়ের সার হতে পারিনা রে ...”
বলে আনন্দে গোল গোল চোখ পাকিয়ে সমীর বাবুর দিকে তাকাল।মনে মনে গাল পাড়তে পাড়তে বলল-

“হ্যাঁ সার কেমন আছেন? বসুন বসুন- বলুন কি করতে পারি?”

এবার নিতীশ সার খুব কষ্ট পেলেন।সমীর উনার প্রিয় ছাত্রদের মাঝে অন্যতম। আগে প্রতিদিন প্রাইভেট পড়ে বাসায় যাবার আগে একবার করে প্রণাম করত। আর আজ কিনা উঠে সম্মান পর্যন্ত দেখাল না। আস্তে আস্তে চেয়ারটা টেনে নিয়ে ফাইলটা সামনে রেখে বসলেন নিতীশ সার। কষ্ট পেলেও মুখের ভাব ঠিক রেখে বললেন-

“বাবা- দেখ না- এই ফাইলটা- আমার পেনশনের ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর ব্যাপারে একটা সাইন লাগবে- সামনের মাসে আমার মেয়ে নমিতার বিয়ে- এখন যদি বেতন না বাড়ে তাহলে নমিতার বিয়ে যে হবেনা রে”

চোখ মুখ শক্ত করে বসে ছিলেন সমীর বাবু- সামনে ফাইলটা নিয়ে নেড়ে চেরে দেখলেন একটু- মনে মনে গুনে নিলেন কত টাকা খেতে পারবেন- ভেবেই ফাইলটা বন্ধ করে রেখে সামনে ডানে রেখে বললেন- “ হুম বুঝেছি- এটার জন্য আপনাকে দুই মাস পড়ে আসতে হবে”।

অবাক হয়ে গেলেন নিতীশ বাবু। পাকা ভ্রু গুলো বাকিয়ে বললেন-

“মাত্র একটা সই বাকি আছে রে- এটা করতেই দুইমাস?”

“আহা বুঝছেন না কেন- দেখছেন না চারদিকে কত ফাইল- এখানে সিরিয়াল বলে একটা ব্যাপার আছে। আর আমার তো কাজের অভাব নেই- এত কাজের মাঝে কত ফাইল আসবে- তাই কমসে কম দুইমাস লাগবে”। বলেই মুখে পান চিবাতে চিবাতে ব্যাগ গুছাতে শুরু করে দিলেন সমীর বাবু।

অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন নিতীশ সার। এই ছেলে কি থেকে কি হয়ে গেল। কোন ভাবেই নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি অনেক কষ্টে বললেন- “বাবা সমীর- তোমাকে কি ঘুষ দিতে হবে?”
উত্তরে সমীর বাবু যা বললেন তাতে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল নিতীশ সারের- সমীর বাবু বললেন-

“ দেখেন- এখান থেকে ফাইল সাইন করিয়ে নিয়ে যেতে দুটো বান্ডিলে ৫০০ টাকার ১০০ টা নোট লাগে। আসলে এটা হল উপহার। এটাকে ঘুষ বলবেন না। আমাকে আপনি কিছু দেবেন- আমি আপনাকে কিছু দেব। এই তো। আপনি আমার পরিচিত এজন্য আপনার জন্য কনসেশন আছে- আপনি ৫০০ টাকার ৫০ টা নোট নিয়ে আসলেই হবে। আপনার ফাইল এ সাইন হয়ে যাবে”- বলেই খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠলেন সমীর বাবু।
নিতীশ বাবুর বুকের কাছটায় কেমন যেন ব্যথা করে উঠল।আস্তে আসতে নিজেকে সামলে নিয়ে পলিথিনের ব্যাগ থেকে টাকা বের করলেন তিনি। উনাকে আজ টাকা টা দিতে হবে ভেবেই সাথে এনেছিলেন। নিজের আদর্শকে বলি দিয়েই নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু উনার আদর্শ এভাবে বলিদান হবে উনি ভাবতেই পারেন নি। ফাইলে সই করিয়ে উনি আসতে আসতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে রিক্সায় চেপে চলে গেলেন সেখান থেকে। যাবার সময় কান্না কান্না চোখে তাকিয়ে ছিলেন সমীর বাবুর দিকে। সমীর বাবু তখন টাকা গুনায় বাসত।

কিছু ক্ষণ পর সমীর বাবু বের হলেন অফিস থেকে। সারা দিন বসে থেকে থেকে ওজন বেড়ে চলেছে। ডাক্তার বলেছে প্রতিদিন একবেলা করে হাটতে। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে নটা বেজে যায়। তারপর মেয়েকে স্কুলে দিয়ে এসে তাড়াহুড়া করে অফিসে চলে আসেন তিনি। তাই ওজন বাড়ানো থামাতে পারছেন না তিনি।
রাস্তায় নেমে একটা রিক্সা ডাক দিলেন তিনি-

“এই যাবি? ফার্মগেট?” রিক্সা ওয়ালা মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। আজকাল কার রিক্সা ওয়ালা দের তুই করে বললে রেগে যায়। সমীর বাবু অবশ্য এসবের ধার ধারেন না। সামনে হাটতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি দাঁড়িয়ে না থেকে। এমন সময় এক বুড়া রিক্সা ওয়ালা আসতে আসতে রিক্সা চালিয়ে আসছিল- উনাকেই বললেন- “কি হে যাবে নাকি? ফার্মগেট?”
বুড়ো ৩০ টাকা ভাড়ায় রাজি হলেন। রিক্সা ওয়ালাকে এক গাল গালি দিতে দিতে উঠে বসলেন রিক্সায়। রিক্সা চলতে শুরু করল। আজকাল রাস্তায় অনেক জ্যাম। ভালমতো রিক্সায় ও ঘুরা যায়না। এমন একটা সময় এসেছে। রিক্সা অনেক অলি গলি ঘুরে গ্রিন রোডে এসে নামল।এমন সময় বৃষ্টিও নামল। সন্ধ্যায় বৃষ্টি নামতেই বৃষ্টিকে একচোট গালি দিলেন সমীর বাবু। রিক্সা ওয়ালা রাস্তায় থেমে রিক্সার সিটের নিচ থেকে পলিথিন বের করে দিলেন।হুড তুলে পলিথিন টা গায়ে ভালভাবে জড়াতে জড়াতে আরও একচোট গালি দিলেন তিনি।

বৃষ্টি ভালই নেমেছে। জ্যাম মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে গেল।বুড় চালক আসতে আসতে চালাচ্ছে। সামনে অনেক রিক্সা –তাই রিক্সার গতি ও ধীর।এমন সময় ঘটল ঘটনাটা। সমীর বাবু যেন হার্টের একটা বিট মিস করলেন। সামনে দিয়ে একটা রিক্সা যাচ্ছিল বিপরীত রাস্তায়- সেখানে বসে ছিল মাঝ বয়সী এক লোক। পুড়ো শরীর নীল পলিথিন দিয়ে ঢাকা। শুধু মুখ দেখা যাচ্ছিল-কিন্তু সেই মুখেই ছিল যত বিপত্তি। লোকটার মুখ ছিল- কিন্তু মুখে আর কিছু ছিলনা। মানে চোখ মুখ কিছু নেই। সেখানে সাদা চুনের প্রলেপ দিয়ে চোখ মুখ আকা। মসৃণ একটা তেলতেলে মুখে চোখ মুখ আঁকা- আর কিছু নেই। দেখেই প্রচণ্ড ভয় পেলেন সমীর বাবু। রিক্সা উনাকে কাটিয়ে চলে গেছে- কিন্তু নিজের চোখ কে কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। এটা কিভাবে সম্ভব?এই ভর সন্ধ্যায় এখনো চারপাশ আলোকিত। এখন কিভাবে তিনি ভুল দেখবেন?

নিজের চোখ কে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। ঘোরের মাঝে চলে গেছেন বুঝি তিনি। এমন সময় রিক্সার ঝাঁকুনি খেয়ে ঘোর থেকে জেগে উঠলেন যেন তিনি। সামনে একের পর এক রিক্সা যাচ্ছে- বাকি কাউকে এরকম না দেখে মনে মনে চোখের ভুল ভেবে আবার ভুলে যেতে চাইলেন ঘটনা। ভুলেই যেতেন- কিন্তু একটু পর সামনে আরেকটা রিক্সা এলো।সেখানে বসেছিল এক মহিলা-আর সাথে একটা বাচ্চা মেয়ে-সেই মহিলার ন্যাড়া মুখের উপর সেই সাদা চুনের প্রলেপ দেখে ভয়ে আত্মারাম কেঁপে উঠল সমীর বাবুর। কি দেখছেন উনি? এভাবে দুইজন মানুষ গেল সামনে দিয়ে দুইজনের ই একই অবস্থা। ঠোট-নাক মুখ কিছু নেই-সেখানে সাদা চুন দিয়ে চোখ মুখ আঁকা। ভাবতেই ভয়ে শরীরের সব লোম দাড়িয়ে গেল সমীর বাবুর।

রিক্সা বাসার সামনে থামতেই তিনি তাড়াতাড়ি নেমে পড়লেন ভাড়া দিয়ে।সোজা বাসার গেইট দিয়ে ঢুকে দৌড় মারলেন লবি দিয়ে। মাত্র এক মাস হল এই ফ্লাট কিনেছেন তিনি। এখনো কিস্তির টাকা দেয়া বাকি। লিফট দিয়ে না উঠে তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করে দিলেন তিনি। এর মাঝেই ঘামতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি।

ব্যাপারটাকে মনের ভুল ভেবে ভেবে উঠছেন সিঁড়ি দিয়ে- এমন সময়- নীল সার্ট আর লুঙ্গি পড়ে এক লোক সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সামনে এসে দাঁড়াল। দাড়িয়েই সালাম ঠুকে বলল-

“সার শরীর ডা ভালা নি”

সমীর বাবু নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলেন- সিঁড়ি বেয়ে চার তলায় উঠছিলেন আনমনে- কথাটা শুনেই সামনে তাকালেন- আর জমে গেলেন যেন- সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নীল সার্ট আর লুঙ্গি পড়া লোক টা আর কেউ নয়- এই বাড়ির দারোয়ান মালিক মিয়া। কিন্তু সব ঠিক থাকলেও মালিক মিয়ার মুখ টা ঠিক নেই। মুখের যায়গায় ছিদ্র গুলো ভরাট করে দিয়েছে কেউ যেন। আর সেখানে চুনের প্রলেপ দিয়ে কেউ চোখ মুখ একে দিয়েছে। দেখে বুকের বাম পাশে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়ে গেল সমীর বাবুর। তিনি দৌড় দিয়ে উঠে গেলেন মালিক মিয়াকে পাশ কাটিয়ে।
বাসার কলিং বেল টিপছেন তিনি- কেউ খুলছেন- ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে আরও ভয় পেয়ে গেছেন তিনি। নকল চাবি দিয়ে তালা খুলে ঘরে ঢুকতেই উনার বুকের উপর আছড়ে পড়ল নিতি- সমীর বাবুর বৌ।

উনি বুঝতে পারছেন না কেন নিতি কাঁদছে- অনেক লম্বা চুল নিতির। চুল ছেড়েই দিয়ে থাকে বাসায় নিতি। সেই চুলের জন্য দেখতে পাচ্ছেন না তিনি নিতির সুন্দর মুখটা। কাঁদছে নিতি। কাঁদতে কাঁদতেই মুখ তুলে তাকাল নিতি। আর তাতেই প্রচণ্ড ভয়ে পেছনে পিছিয়ে আসলেন সমীর বাবু। কারণ নিতির সেই সুন্দর মুখের যায়গায় এখন রাস্তায় দেখা সেই মহিলার মত চুন দিয়ে চোখ মুখ আঁকা। নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছেন না সমীর বাবু। এটা কিভাবে সম্ভব? উনি কি ভুল দেখছেন? নাকি সবার মুখ এরকম হয়ে যাচ্ছে?

উনি কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই হাতে একটা ছোট আয়না ধরিয়ে দিল নিতি সমীর বাবুকে।

“আয়না দিয়ে কি হবে?” জিজ্ঞেস করতেই- নিতি বলল- আগে নিজের দিকে তাকাও- বলে দৌড়ে চলে গেল বেডরুমের দিকে।

এক দৃষ্টিতে নিতির দিকে তাকিয়ে থাকলেন সমীর বাবু-কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। এটা কিভাবে সম্ভব? কোন মানুষের মুখ কিভাবে কয়েক ঘণ্টার মাঝে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। ভাবতে ভাবতে আয়নাটা তুলে নিয়ে নিজের দিকে ধরলেন তিনি- আর দেখলেন- আয়নায় দেখা যাচ্ছে একটা গোলগাল নাদুস নুদুস মুখ-যাতে কোন ছিদ্র নেই-চোখ নেই-নাক নেই-কান নেই-ঠোট নেই-ঠোটের উপর প্রিয় গোঁফ নেই- শুধু সাদা চুনের প্রলেপ দিয়ে চোখ মুখ মোটা মোটা করে আঁকা- যেন অন্য কোন প্রাণীর মুখ-বসিয়ে দেয়া হয়েছে সমীর বাবুর মুখের উপর।

হটাত দৌড় মারলেন সমীর বাবু- দৌড়ে ঢুকে পড়লেন টয়লেটে- সেখানে গিয়ে বেসিনের কল ছেড়ে মুখের উপরের চুনের প্রলেপ ডলতে শুরু করে দিলেন-ডলছেন তো ডলছেন উঠার নাম নেই- উনি হয়ত জানেন না- এই কালি কোন দিন উঠবেন- ঘুষখোর দের মুখে পড়ে গেছে চূড়ান্ত অভিশাপের সিল। এটা তিনি হয়ত বুঝতেই দেরি করে ফেলেছেন। বেশী দেরী করে ফেলেছেন......

( সমাপ্ত )

********তাবিজ********* - রহস্য রোমাঞ্চ গল্প কিনবা সত্য কাহিনী //// পর্ব ১

তাবিজের নাম শুনেন নাই এমন ব্লগার হয়ত খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সবাই জানেন এই বিজ্ঞানের যুগে এই সব তাবিজ কবচের কোন মুল্য নাই। অনেক এ তো বিশ্বাস ই করেন না- বিশেষ করে যারা পরম ধার্মিক এবং নাস্তিক- আমার এই কথা গুলোকে সোজা উড়িয়ে দেবেন- বলবেন আমি একটা................

যাই হোক কথা না বাড়িয়ে শুরু করি। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো সেটাই বুঝতে পারছিনা। ঠিক আছে আমার দেখা প্রথম ঘটনা দিয়েই শুরু করি।
আমি তখন অনেক ছাত্র -মাত্র ক্লাস ২তে পড়ি। আমি জন্ম থেকে দেখে এসেছি আমার দাদু গ্রামে ডাক্তারি করেন। উনি ডাক্তার হিসেবে খুব জনপ্রিয়। এতই জনপ্রিয় যে উনার নামে আমাদের গ্রামের রাস্তা র নাম করন করা হবে হবে এমন একটা ভাব। উনি বেশী জনপ্রিয় ছিলেন উনার বিনা পয়সায় চিকিৎসার জন্য। আমার বাবা রা সাত বোন চার ভাই এর সংসার চলেনা- না খেয়ে থেকেছেন নিজেও তবুও যে গরীব তার থেকে একটা টাকা ও উনি নিতেন না। অনেক অনেক দূরে দূরে গিয়ে তিনি বিনে পয়সায় রুগি দেখে আসতেন। এমন ভাল মানুষের ও যে শত্রু থাকে সেটা সেই ছোট বেলায় জানতাম না।
আমার দাদুর ছোট ভাইয়ের বৌ- আমার দাদি সম্পর্কে হন- উনি দাদুকে একদম দেখতে পারতেন না। অবশ্য সবসময় তা মনে মনে- উপরে উপরে উনি সব সময় ভাল ব্যাবহার দেখাতেন।দাদুকে নিয়ে যখন রাস্তা নামকরন করার চিন্তা ভাবনা করছিলেন এলাকার লোকজন- তখন আমার সেই দাদি আমার দাদুকে তাবিজ করেন।

আমরা ব্যাপারটা জানতাম না।দাদুকে হটাত করে দেশ থেকে শহরে আনা হল- বাবা- কাকারা উনাকে নিয়ে অনেক দৌড়া দৌড়ি করলেন- কন ফল হলনা- উনার অসুখ ভাল হয়না। অসুখ টা ছিল উনার সারা শরীর জ্বালা করতে আর পিপড়া কামড়াতো। আমরা পিপড়া তাড়াবার জন্য সারা ঘরে কর্পূর দিয়ে রাখতাম। ঘরে কোন পিপড়া নাই - তবুও উনি সারাদিন চিৎকার করে যেতেন যে উনাকে পিপড়া কামড়াচ্ছে। শেষে নিরুপায় হয়ে এক স্বনাম ধন্য ডাক্তার উনাকে বিদেশে নিয়ে যেতে বললেন।

বিদেশ নেবার ক্ষমতা তো বাবাদের ছিলনা- উনাকে নিয়ে যাওয়া হল ইন্ডিয়া। সেখানে দিল্লি আর মাড্রাজ এর অনেক অনেক ডাক্তার দেখানো হল- কেঊ ঊনার রোগটাই ধরতে পারছিলেন না। এদিকে ঊনাকে দেখাশুনা করতে করতে আর মাদ্রাজি খাবার খেয়ে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষে উনাকে দেশে নিয়ে আসা হয়।

উনার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কোন ভাবেই কিছু করা যাচ্ছেনা। এর মাঝে উনার একটা স্ট্রোকের মত হয়- আর ঊনার বাম হাত অবশ হয়ে যায়। বিছানা থেকে ঊঠতেই পারতেন না। এমন সময় এক আত্মীয় বলে এক ওঝার কথা- শুনে বাবা- কাকা সবাই না করে দেয়।

কিন্তু আরও এক সপ্তাহ পর দাদুর অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়- শরীরে কোন দাগ নাই- তবুও দাদু চিৎকার করছেন-দেখে আর না পেরে বাবা সেই ওঝাকে ডাকেন।

উনি আসলেন- খুব সাধারন বেশ ভুষা উনার- কাছ থেকে দেখিনি আমি লুকিয়ে ছিলাম ভয়ে। উনি দাদুকে দেখলেন। তারপর আমার মাকে বললেন বাথরুমের একটা বদনা তে পানি নিয়ে আসতে- মা ও নিয়ে এলেন- উনি সবাইকে কি এক মন্ত্র পড়ে পানিতে ফু দিয়ে দেখালেন- আর বললেন- খুব পরিচিত কেউ একজন দাদুর চুল বেধে একটা পুতুলে মন্ত্র পড়ে সেটার গায়ে অনেক গুলো সূচ ফুটিয়ে দিয়ে আমাদের পাশের আম গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে। গাছে বাতাসে সেই পুতুল দোলে- আর আমার দাদু চিল্লান। এর মাঝে একটা কাক সেই পুতুলের একটা হাতে ঠোকর মেরেছে- বলে দাদুর এক হাত প্রায় অচল হয়ে গেছে। এটা আর ভাল হবেনা। তবে পুতুলটা খুলে আনতে হবে- না হলে দাদু মারা যাবেন এভাবেই। তারপর যে এই কাজ করেছে তাঁর নামএর প্রথম অক্ষর দেখালেন।আমরা ও দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে নিলাম। কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না। আমাদের পরিবারের সবাই শিক্ষিত- আমরা এই কথা গ্রামে বললে আমাদের দুর্নাম হবে ভেবে বাবা কাঊকে জানালেন না। পরদিন সেই পুতুলটা খুলে নিয়ে এলেন আমাদের গ্রাম থেকে।

তারপর দিন দাদু র অবস্থা খুব খারাপ। উনাকে অক্সিজেন দেয়া হয়েছে। সেন্স ছিলনা। এমন অবস্থায় সেই ওঝা একটা একটা করে পুতুলের গা থেকে সূচ খুলেছে। তারপর সেটার শরীরে পেঁচানো চুল্টা খুলে সেটাকে ছিড়ে ফেলেছে- সব আমাদের চোখের সামনে। যদি ও আমি তখন অনেক ছোট- বাবা আমাকে দেখতে দিতে চাননি- কিন্তু আমি তো দেখবোই- এই গো ধরে বসে ছিলাম।পড়ে দেখেছিলাম। অনেক ভয় পেয়েছিলাম যখন সেই পুতুলের ভেতর থেকে রক্ত পড়তে দেখেছিলাম।

পরদিন থেকে দাদু সুস্থ হয়ে ওঠেন। আমি দাদুকে ১২ দিনের মাথায় আবার ডাক্তারি করতে যেতে দেখেছি। যদিও দাঙ্গার কারনে উনি গ্রামে যেতে পারেন নি- এবং উনার নামে রাস্তা হওয়া টা দাঙ্গার কারনে প্রায় ঢাকা পড়ে যায়- এবং উনার এক হাত অবশ হয়ে গিয়েছিল- কিন্তু দাদুকে রোগী দেখা থেকে কেঊ দমাতে পারেনি।

এরপর কেটে গেছে অনেক দিন। দাদু মারা গেছেন- কিন্তু সেই স্মৃতি আমি ভুলিনি। কখনো ভুলব না। এটাকে কি বলবেন আপনারা?

তাবিজ??
নাকি অপবিজ্ঞান??
নাকি শয়তানি ক্ষমতা??

জানিনা কি- এটা দেখেও কিন্তু আমার বিশ্বাসে তাবিজ জিনিসটা গেথে যায়নি- গেথেছে অনেক অনেক পড়ে- সেটা আরেকটা কাহিনী......

লিরিক/////////// বন্ধু

তোমাকেই নিয়ে স্বপ্ন হাজার আমার
তোমাকেই নিয়ে কাঁদা
তোমাকেই নিয়ে জীবন মরন আমার
তুমি ছাড়া সব সাদা

বন্ধু-
তুমি ছাড়া সব আঁধার

তোমাকেই নিয়ে তুচ্ছ জীবন আমার
তুমি হীন সব আঁধার
তোমাকেই ঘীরে স্বপ্ন হাজার আমার
ছিড়ে ফেলি সব বাঁধা

বন্ধু
তুমি শুধু আমার

লিরিক///////// আহা বৃষ্টি


আহা বৃষ্টি কি যে বৃষ্টি
বৃষ্টি এ কি বৃষ্টি
তাই তোমাকেই ভালবেসে
আমি অনাসৃষ্টি সৃষ্টি করবো

হাতে রেখে হাত ভিজবো দুজন
মেলবো পাখা পাখির কুজন
আজ তোমাকেই ভালবেসে আমি
ইতিহাসে ইতিহাস গড়বো

বেদনা গুলো যাক দূরে যাক
সুখের পরশ মাটিতে লুটাক
শুধু তুমি আমি দুজনে মিলে
সুন্দর এক পৃথিবী বানাবো।।

Sunday, July 17, 2011

☰☰☰☰☰☰☰☰আজ রাতে☰☰☰☰☰☰☰☰

আজ রাতে আমি এসেছি তোমার কাছে
এই দেখো ফেলে এসেছি আমার বিত্ত সমূহ
জানি এই মুহূর্তে সেগুলো অর্থহীন কিনবা নিরর্থক কামনাই হবে
ফেলে এসেছি আমি সকল লালসা গুলো-
পড়ে আছে তোমার পায়ের কাছে
হে বিরাট তুমি - আমাকে আপন করে নাও
আমাকে করে দাও শুদ্ধতম
ধুয়ে দাও আমার লোভ গুলো- গিজগিজ করছে শুঁয়োপোকার মত
আমার শিরা উপশিরায় আমাকে তুমি শুদ্ধ করে দাও
আমার হিংসা গুলোকে আমি ধুয়ে ফেলেছি বুক বিদীর্ণ করে
আমার মোহ গুলো এখন নেই কোথাও-
আমাকে তুমি করে তোল শুদ্ধতম- করে তোল নির্মোহ
কোন এক জলধারার মত যার কোন কামনা নেই-
বাসনা নেই-
আমি শুদ্ধ হতে চাই
চিৎকার করে বলি
আমি শুদ্ধ হতে চাই।

আমার হিংসা ও প্রাণী হত্যার পাপ আমাকে ঘীরে ধরেছে আষ্টেপৃষ্টে
আমার মিলনের সুখ কামনার মত আমার মস্তিষ্কের মাঝে করছে কিলবিল
আমার রিপু গুলো আমাকে করেছে বাঁধন হারা নষ্ট পশু
আমাকে তুমি আপন করে নাও
আমাকে তুমি পাপমুক্ত করে দাও
আমাকে তুমি নিষ্পাপ করে দাও

চিৎকারে আমার ভেঙ্গে গেছে বুকের হাড়
আমি সেই কবে থেকে পথ চেয়ে বসে আছি তোমার
সেই কবে থেকে জমে জমে পচন ধরেছে আমার অংগে
শুধু আমি আজ রাতে এই টুকুই চাই
আমাকে তুমি মুক্ত করে দাও
আমাকে তুমি স্বাধীন করে দাও।।

Saturday, July 16, 2011

▓▓▓▒░ একটি চুমুর জন্য ░▒▓▓▓***** ভালবাসার ছোট গল্প ১৩-০৭-২০১১

একটি চুমুর জন্য ১৩-০৭-২০১১

ছেলেটা এখন ও আসেনি। অনেক ক্ষন ধরে আমি অপেক্ষা করছি ওর জন্য। ও আসছেনা। এখন ও অনুষ্টান শুরু হতে অনেক ক্ষন বাকি। বরপক্ষ আসবে- আপাকে হলুদ দেবে। তারপর আমরা সবাই হলুদ দেব। কিন্তু ওকি আসবেনা? কে জানে। আমি ওর মোবাইল নাম্বারটাতে এখন ফোন করিনা। ভয় লাগে। যদি কোন দিন চিনে ফেলে- খুব লজ্জা পাবো আমি। কি আর করা ছোট বোনের ক্লাস মেট বলে কথা। কিন্তু ওকে শুনেছি রাজ ভাই বলে ডাকে শানু। ওর কাছেই শুনেছি আমাদের ই ব্যাচ মেট। প্রথম দেখায় প্রেম কথাটা আমি বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু ওকে দেখার পর আমি যেন কেমন হয়ে যাই। ওর প্রশংসা শুনে শুনেই হয়ত আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি। কেন যেন রাতের পর রাত ওকে নিয়ে একেছি কত সোনালী দিনের ছবি। জানি এ প্রেম কখনোই সত্যি হবার নয়। কিন্তু আমি ওর মত একটা ছেলের প্রেমে পড়ব জানতাম? কে জানে হয়ত ভাগ্যেই ছিল লেখা।

ওকে আমি প্রথম দেখেছিলাম আমার ছোট বোন শানুর বান্ধবীর বড় ভাইয়ের হলুদে। লাজুক একটা ছেলে। খুব অমায়িক ব্যাবহার ওর। প্রথম দিকে কথাই বলতে চাই না। ধীরে ধীরে কথা বলেছিল আমার সাথে। কিন্তু আমাকে ডাকত আপু। কিন্তু কি আর করা। আমি অবশ্য তখন বুঝিনি আমি ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।

সেই অনুষ্টানে রাজ এমন সুন্দর ভাবে সবার সাথে নেচেছিল তা বলার মত না। নাচ থেকে ফিরে আসতেই আমি ওর অনেক প্রশংসা করেছিলাম। হয়ত সে জন্য আমাকে হেসে বলেছিল-“থ্যাংকস আপা”- আমি অবাক হয়ে দেখেছিলাম- এমনিতে বোঝা যায়না- হাসলে ওর গালে টোল পড়ে। আমি যতক্ষন ছিলাম আড়চোখে ওর মুখের ওই মায়াবী হাসিটা দেখেছি। ও হয়ত খেয়াল করেনি- কিন্তু আমি ঠিক ই ওকে দেখেছি লুকিয়ে লুকিয়ে।

সেই প্রথম দেখা আমাদের। এবং বোধহয় শেষ বারের মতই ছিল। কিন্তু গতমাসে বড় আপার বিয়ের কথা বার্তা চলতে শুরু করতেই আবার ওর সাথে দেখা হবার সম্ভাবনা জেগে ওঠে। আমি এতদিন যে ওর সাথে যোগাযোগ করিনি তা না। করেছি- নিজের পরিচয় গোপন করে ওর সাথে আমি তিনমাস কথা বলেছিলাম। সে সময় আমি বুঝেছি কি ভাল একটা ছেলে সে। কিন্তু আমি কেন যেন যেদিন দেখা করার কথা সেদিন যাইনি- ও যদি আমাকে চিনে ফেলে। এই ভয় সবসময় মনে কাজ করেছে। কি করা- অবশেষে দু বছর পর আজ ওর সাথে দেখা হবে। হয়ত আজ আমি ওকে খুলে বলব আমি যে ওকে ভালবাসি- জানি ও অনেক অবাক হবে। অবাক হবে তানি ও । কিন্তু আমাকে আজকে বলতেই হবে। ওই যে ওই ও ঢুকছে মেইন গেট দিয়ে। অনেক অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে ওকে। কি সুন্দর করে হাসছে সে- কিন্তু সাথের মেয়েটা নিলিমা না? হ্যাঁ- নিলীমা- ওদের ক্লাসমেট- একসাথেই এসেছে। ভয় নেই নিলীমার বিয়ে হয়েছে অনেক দিন- বাচ্চা ও আছে। রাজ নীলিমাকে বোন ডেকেছে ব্যাপারটা অজানা নেই আমার। ওরা এদিক ওদিক কি খুঁজছে? ও আচ্ছা তানিকে খুঁজছে নিশ্চয়- কিন্তু তানি তো ছবি তুলছে। আমিই এগিয়ে গিয়ে ওদেরকে বসাই চেয়ারে। এগিয়ে গেলাম। রাজকে সম্বোধন করে বলতে যাব এমন সময় কোত্থেকে যেন তানি টা উড়ে চলে আসল সাম্নে।কি আর করা- রাজ আর নিলীমাকে তানি ওয়েলকাম করল- আমাকে করতে দিলনা। আমি পেছনে দাঁড়িয়ে আছি তানির। ওরা হাটছে- আমি ও ওদের পেছন পেছন আস্তে আস্তে হাটছি। কিন্তু- রাজ কি আমাকে দেখছেনা? এত সুন্দর করে সেজেছি আমি। ও কি বুঝতে পারছেনা-এই সাঁজ শুধু মাত্র ওর জন্যে?

ওরা গিয়ে বসল সামনের একটা সারিতে। এই ক’বছরে রাজ অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চেহারায় অনেক সুন্দর একটা ভাব এসেছে- কিন্তু ও কেমন যেন মনমরা হয়ে বসে আছে। আমি তো এদিকে আপাকে ছেড়ে যেতে পারছিনা। কি করা যায়- বুঝতে পারছিনা। ওর সাথে কথা বলা দরকার। ও তো আমার দিকে তাকাচ্ছেইনা। কি করি?

ওই যে আরো দুজন বান্ধবী আসল তানির। এবার রাজ কে হাস্তে দেখছি মন খুলে- হাসলেই সেই টোল পড়া গাল দেখে কেমন যেন করে ঊঠল বুকের ভেতর। আহ- ওকে যদি সারা জীবন ধরে ভালবাসতে পারতাম?
আহ- আবার এদিকে আপা ডাকছে। আপার স্পেশাল রবীন্দ্র সংগীত চলছে সাঊন্ড বক্সে। আপা রবীন্দ্র ভক্ত। আহা এই গান টা যেন আমার জন্যই লিখেছিলেন রবিঠাকুর-

সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে ।
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’—
সখী, ভালোবাসা কারে কয় ! সে কি কেবলই যাতনাময় ।
সে কি কেবলই চোখের জল ? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস ?



আসলেই ভালবাসা কি? কে জানে? সে কি কেবলই চোখের জল? ভাবতেই কেমন যেন চোখে পানি চলে আসল- এই অনুষ্টানে মেকাপ মুছে যাবে বলে তাড়াতাড়ি করে মুছে নিলাম টিস্যু দিয়ে।
অনুষ্টানের শুরু হবে এখনই- বর পক্ষ এসেগেছে- সবাই একে একে আপাকে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছে। একে একে সবার দেয়া শেষ হলে আমাদের পক্ষ দিতে শুরু করবে- তানিকে বললাম রাজদের কে ডেকে নিয়ে আস্তে- সবাই আসছে- কিন্তু রাজ যে বসে আছে- ওকি হলুদ দেবেনা? না দিক –অন্তত একটা তো ছবি তুলবে আপার সাথে- আমি অন্তত একটা তো ছবি তুলতে পারব ওকে সাথে নিয়ে- কিন্তু ও আসছেনা কেন?
ওমা দেখি তানি ওকে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসল স্টেজ এ। তানি টা ইদানিন বড্ড বেড়েছে। ও রাজ এর হাত ধরার সাহস পেল কোথায়? ও কি জানেনা যে আমি রাজ কে ভালবাসি? ওকে আমি কত ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছি- ঐ বেটি কোনভাবেই কিছু বুঝেনা- ন্যাকা- সব কিছু বুঝিয়ে দিতে হয় ওকে।

না থাক- আমাদের বিয়ে হলে তো তানি ওর শ্যালিকা হবে- এ দিকে চিন্তা করলে অবশ্য তানি ওর হাত ধরতেই পারে। রাজ হলুদ দিলনা- কিন্তু সবার সাথে দাঁড়িয়ে ছবি তুলল- আমি সেই সুযোগে রাজের বামে দাঁড়িয়ে ছবিটা তুলে নিলাম। আজকে ভালবাসি বলতে না পারলে হয়ত এটাই আমাদের একসাথে তোলা একমাত্র ছবি হবে। ফেসবুকে ওকে অবশ্য আমি অ্যাড করেছি। পাগল ছেলে একটা- সারাদিন বসে বসে কবিতা লেখে-আর সুর দেয়- চমৎকার চমৎকার সব কবিতা- আমি তো ওর কবিতা সারাদিন বসে বসে পড়ি। কি চমৎকার সব কবিতা। আমাকে নিয়ে কি একটা ও লিখেছে? কে জানে? কিন্তু সারাদিন ই তো হারানোর কবিতা লেখে ও – ভালবাসার কবিতা কি একটা ও লিখেছে? ...... মনে
পড়ছে না- ও মনে পড়েছে-

আমি দূর থেকে তোমাকেই দেখেছিলাম সেই সেদিনের ভুলে
তুমি ফুল বাগানে ফুল হয়ে তাই ফুল ছড়িয়ে ছিলে-

আহ কি অদ্ভুত সব কবিতা লেখে ও – আর ও গান ও মন্দ গায় না। ওর সাথে আমার একটা গতি হলেই আমি ওকে একটা গানের সিডি বের করতে বলবো। নিদেন পক্ষে ও তো একটা কবিতা র বই বের করতে পারে। না বেচারা কিছুই করবে না। অবশ্য করবেই বা কিভাবে? ও অনেক কষ্টে লেখা পড়া করেছে। কি জানি এখন নিশ্চয় ভাল অবস্থানে আছে। থাক- আগে কাজ করি- ওকে নিয়ে পড়ে ভাবব- এদিকে আপা কি জন্য ডাকছে দেখে আসি।

হাতের কাজটা শেষ করে এসেই যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে ফিরে আসলাম- কিন্তু রাজ কে দেখতে পাচ্ছিনা- ও কোথায় গেল? ও কি চলে গেল? বসার যায়গায় নেই- বাইরে মাত্র ঘুরে এসেছি- সেখানেও নেই- তবে কি চলে গেল? কে জানে- কিন্তু সে তো চলে যাবার পাত্র নয়- তবে কি/// ওই তো ঐ যে রাজ। বসে আছে খাবার টেবিলে- সবার সাথে- তানি তদারকি করছে খাবার টেবিল। আব্বু এসে ঘুরে গেছে রাজ এর টেবিলের চারপাশ- “দেখে নাও আব্বু- এই যে দেখে গেলে- ও হল রাজ- অনেক ভাল একটা ছেলে- ওকে আমি অনেক অনেক ভালবাসি। জানো?” না- মনে মনে বললে আব্বু শোনেনা আমার কথা- তাই সামান্য কুশল জেনেই চলে গেল সে রাজ এর টেবিল ছেড়ে- ঊফ-আব্বুটা যে কি না? কিচ্ছু বুঝেনা। আপার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে- এখন তো আমার পালা- এটা কি আব্বুর মাথায় নেই? আম্মু না হয় অনেক শান্ত শিষ্ট- আব্বু কে তো বোঝা ঊচিত।

ঐ যে রাজদের খাওয়া শেষ হল। ওকে তানি টেনে নিয়ে আসছে মঞ্চে- মঞ্চে সবাই নাচছে গানের তালে তালে- রাজের সাথে আজকে নাচ ও হয়ে যাবে- কিন্তু কেমন যেন লজ্জা পাচ্ছে ও। আমরা মেয়েরা সবাই গোল হয়ে নাচছি- ও এক কোনায় দাঁড়িয়ে আমাদের দেখছে। এমন সময় তানি ওকে টেনে নিয়ে আসল আমাদের সাথে। সবাই হাত ধরেছে একজন আরেকজনের। আমার পাশে তানি- আর রাজ তানির ঠিক পাশেই। তানি টা যে কি না- রাজের হাত ধরে আছে- রাজ না হয় একটু লজ্জা পাচ্ছিল- তাই বলে ওকে এভাবে হাতে ধরে নাচতে হবে? রাগে আমার গা জ্বলছে।
একটু পড়েই আরেকটা গান শুরু হল- এবার সবাই হাত ছাড়াছাড়ি করে দুইজন দুইজন করে নাচছে। আমার সামনে ছোটখালা। কিন্তু আমি কোনভাবেই রাজের দিকে আগাতে পারছিনা। ওর সাথে এখন নীলিমা নাচছে। ঊফ- সামনে থেকে ছোট খালা সরছে না। কি যে করি। আমি ঘুরতে ঘুরতে নাচের তালে তালে রাজের প্রায় কাছে ই চলে এসেছি। এই যে ও আমার প্রায় সামনে- কিন্তু একি ও কোথায় যাচ্ছে? আমার সাথে নাচবে না?

ও -ওর একটা কল এসেছে মোবাইলে। ও রিসিভ করতে স্টেজ থেকে নেমে নিচে গেল। আমি ও সুযোগ বুঝে দু মিনিট পর পানি খাবার ভান করে নিচে গেলাম রাজের পাশে। ওই যে রাজ কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলছে। ও কি জানে ওকে হাসলে অনেক সুন্দর লাগে? কেজানে।
আমি ওর পেছনে গিয়ে চেয়ারে বসতেই একটা হোঁচট খেলাম যেন। ও কার সাথে কথা বলছে? কাকে সোনাই বলে ডাকছে? ওর তো কোন বোন নেই। না না- এটা কোন বোনের সাথে কোন ভাই কথা না- তাহলে কে? আন্টি? না মায়ের সাথে কোন ছেলে এভাবে কথা বলতে পারেনা। তাহলে কি রাজের কোন প্রেমিকা আছে? কি সব যা তা ভাবছি? রাজের কোন প্রেমকা নেই বলেই তো তানির কাছে শুনেছি। ওই যে তানি নেমে আসছে স্টেজ থেকে। হেটে গিয়ে একটা পানির বোতল নিয়ে রাজের পাশে বসল তানি- বলল-
“ কার সাথে কথা বলছেন ভাইয়া? ভাবি নাকি?” শুনেই আমার মাথায় বাজ পড়ল যেন- রাজের প্রমিকা আছে বুঝি? কখন ওদের আফেয়ার হল? তানি তো আমাকে কখনো ই বলেনি- ছিঃ কি বজ্জাত মেয়েটা- আমাকে একবারের জন্য বলেওনি? দিব্যি তানি রাজের সাথে ওর প্রেমিকা নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু আমাকে একবার ও জানাবে না?

আমার চোখমুখ কেমন যেন করছে। মাথায় চারপাশটা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসছে। আমি এক ঢোক পানি খেলাম। কিন্তু না কমছে না। অবশ্য যা হবার তাই হয়েছে। আমার মনের কথা তো রাজ কে আমি কখনোই বলিনি। কিন্তু আমি যেভাবে ওকে ভালবেসেছি সেভাবে কি ওই মেয়েটা রাজকে ভালবাসতে পারবে?

জানি পারবেনা- তাই আমাকে একটা বিহিত করতেই হবে। রাজ কে যখন পাবোনা- তখন এ জীবন রেখে কি লাভ? আপার বিয়েটা হয়ে গেলেই আমি মরে যাব- ঘুমের ঔষধ খেয়ে নেব বেশ কয়েকটা। রাজের জীবন থেকে পুরোপুরি সরে যাব আমি কখনোই ওর পথে আমি থাকবোনা। আজ বাদে কাল বিয়ে। পরদিন জামাই চলে যেতেই আমি বিষ খাব। কি হবে এ জীবন রেখে? রাজ একটা মেয়েকে ভালবেসে জীবন পার করে দেবে আর সেটা দেখে আমাকে বেঁচে থাকতে হবে?

ওরা সবাই আবার নাচতে শুরু করল।আমাকে ও টানছে- আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু আমি কি যাব? রাজ কি কোন ভাবে আমাকে আমার সেই প্রত্যাশিত চুমুটা খাবে? খেয়ে বলবে- “আমি তোমাকে ভালবাসি”-সবার সামনে কি রাজ আমাকে চুমু খেতে পারবে? জানিনা। হয়ত করবেনা আমাকে প্রথম ও শেষ চুমুটা। হয়ত করবে- হয়ত রাতের স্বপ্নে- প্রতি রাতের মতই- আর তাই অনিশ্চিত হয়েই আমি টলতে টলতে আবার মঞ্চে ঊঠলাম। আজ একটা হবেই। হয় সে আমাকে ভালবাসবে- না হয় আমি ই সরে যাব ওর জীবন থেকে- নীরবে। একটা এসপার ওসপার দেখেই ছাড়ব আমি......

(সমাপ্ত)

ছোট গল্প ███ দম ███ ███উৎসর্গ সেই ৪৭ জন শিশুদের যারা নির্মম ভাবে বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে ███

দম ১৫-০৭-২০১১

“কিরে আইসক্রিম এখনো খাসনাই তুই?” লালচে লেবেঞ্চুস টা মুখে নিয়ে আরেকবার চুকচুক শব্দ করে চুষে মিষ্টি রসটুকু মুখে টেনে নিয়ে সোহানকে বলল লিটন।

সকাল থেকে সোহানের মন খারাপ। মা বাবার জন্য কেন যেন খুব খারাপ লাগছে। অনেক দিন আগে ওর দাদি মারা যাবার পর এরকম খারাপ লেগেছিল। কেমন যেন বুকের মাঝে প্রচন্ড চাপ অনুভব করছে সে। কিন্তু কেন হচ্ছে সেটা নিজেই বুঝতে পারছেনা সোহান। আর কোনদিন এমন বোধ হয়নি সোহানের। ক্লাসে প্রতি বছর প্রথম স্থানটা সোহানের থাকে। তাই ওর মা বাবা সংসারের অভাব ওকে বুঝতে দেন না। যখন যা দরকার হয় হাতের কাছেই যেন পায় সে। বাবা সামান্য একটা বেতনের কেরানী র চাকরী করেন। কিন্তু প্রতিদিন হাতে করে ছেলের জন্য ফলমূল নিয়ে আসেন।

কিন্তু আজ সকালে খেলা দেখতে যাবে বলে মাকে বলতেই মা খেকিয়ে ঊঠেন। একমাত্র ছেলেকে কোনদিন কাছছাড়া করেন না। একমাত্র ছেলে বলে আদরের চাইতে শাসন একটু বেশী করেন তিনি। ছেলে কেঁদে ফেলতেই তাই কেন যেন মন না চাইতে ও যেতে দিলেন। অনেক দিন ধরে সোহান একটা ফুলহাতা রঙ্গীন সার্ট খুঁজছিল স্কুলে পড়ার জন্য। প্রতি মাসেই এটা ওটা কিনতে গিয়ে সোহানের সার্ট কিনে দেয়া হয়না।

গতমাসে সোহান কে কথা দিয়েছিলেন প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় প্রথম হলে কিনে দেবেন একটা সার্ট। কিন্তু কিনে দেয়া হয়নি। তাই আজ ফুটবল খেলা দেখতে যাবে বলতেই যেতে দিলেন তিনি।

সোহানের হাতের আইসক্রিম টা প্রায় শেষ হাতের মাঝেই।এমন সময় কে যেন চিৎকার করে ঊঠল গোল গোল বলে। চারপাশের ছেলে গুলো তার সাথে গলা মিলিয়ে চিৎকার শুরু করে দিল। রোহান আর মাকসুদ জামা খুলে বাতাসে ঊড়াতে ঊড়াতে মাঠের মাঝে দৌড় দিল। সোহান আর লিটন আস্তে আস্তে মাঠের মাঝে হেটে গেল। লিটন হাতের লেবেঞ্চুস টা চুষতে চুষতে হাটতে লাগল সোহানের সাথে।সেটা প্রায় শেষ করে বলল-

“ইস কি গরম পড়ছে দেখসস? তোর মত একটা আইসক্রিম খাওয়া দরকার ছিল। হুদাই আমি লেবেঞ্চুস টা খাইলাম- দেখ কেমন বুক পিঠ ভিজা গেছে গরমে”।

গরগর করে বলে চলেছে লিটন- সোহানের সেদিকে হুশ নাই- কেমন যেন মন্ত্র মুগ্ধের মত হেটে হেটে ছেলেদের পিছু নিয়েছে। লিটনের ও মন খারাপ হয়ে গেল এটা দেখে।

বৃষ্টির দিন। আকাশে কালো মেঘ নেই- তুলো তুলো মেঘে ভর্তি। অবশ্য সবাই খুশি হয়েছিল বৃষ্টি না হওয়াতে- খেলাটা ঠিক মত শেষ হয়ে গেল বৃষ্টি ছাড়াই। যদিও বা শেষ মুহূর্তে একটা অফসাইডে বাঁশি বাজিয়ে রেফারি বিপদে পড়ে গিয়েছিল প্রায়-কিন্তু সেটাকে অনেকেই আমলে নিলনা সোহানদের স্কুলের কেঊ।

খেলা প্রায় শেষের পথে। পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্টান প্রায় শেষ। সোহান সেই আগের মতই মনমরা। লিটন বেচারা সোহানের হাত ধরে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে দূর থেকে পুরস্কার বিতরণী টা দেখল। কাছে যেতে পারলনা। সোহান কে কেঊ যেন মাটির সাথে পেরেক দিয়ে আটকে দিয়েছে।
সবাই নাচতে নাচতে মাঠ ঘুরে ঊঠতে লাগল ট্রাকে। কোন রকমে ট্রাকের এক কোনায় সোহানকে তুলে দিয়ে নিজেও ঊঠে পড়ল ট্রাকে। আস্তে আস্তে ট্রাকে ছেলেরা উঠতে শুরু করল। ছেলেদের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। প্রথমে ঊঠার কথা ছিল ৪০ জনের। শেষে দেখা গেল প্রায় ৯৪ জন উঠে গেছে।

অনেকক্ষণ হল ট্রাক কেঊ চালাতে আসছে না। এদিকে ট্রাকে বসেই অনেকে বিজয় মিছিল করছে। গরমে ভিজে ঊঠেছে সবার শরীর। সোহান আর লিটন ট্রাকের কোনায় উঁচু ঘেরার পাশে কোন রকমে ছায়ার মাঝে বসে আছে।

অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ছেলেরা চিৎকার চেচামেচি শুরু করল- ট্রাক ছাড়ার জন্য। কেউ একজন এসে ট্রাক ছাড়ল প্রায় এক ঘণ্টা পর।ট্রাক ছাড়তেই কেউ একজন গান ধরল-
গাড়ি চলেনা চলেনা চলেনা রে
গাড়ি চলেনা-


সবাই সুরে সুরে গেয়ে ঊঠল। লিটন ও গাইতে শুরু করল। শুধু সোহানের কোন দিকেই খেয়াল নেই। ওর কেন যেন খুব কষ্ট লাগছে। কেঊ হয়ত খেয়াল করেনি- ওর চোখ বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল ওর মায়ের মুখ টা কল্পনা করে – কেন কে জানে।

ট্রাক আস্তে আস্তে গাড়ির গতি বাড়ছে। ছেলেদের গানের সুর ও পরিবর্তন হয়ে চলেছে একের পর এক। ওদের মাঝে সবচেয়ে সুরেলা কন্ঠ সুমনের।ও একের পর এক গান গেয়ে মাতিয়ে রেখেছে সবাইকে। এখন গান ধরল-
গেরামের নওজোয়ান- হিন্দু মুসলমান
মিলিয়া বাঊলা গান আর ঘাটু গান গাইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম


সবাই যখন গেয়ে চলেছে- হটাত সোহান দাঁড়িয়ে গেল বসা থেকে। আগেই কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিল বসতে না পেরে। এখন ওর সাথে সাথে লিটন ও দাঁড়িয়ে গেল। সবাই মিলে হাত তালি দিচ্ছে গানের তালে তালে। কিন্তু সোহান এক নজরে তাকিয়ে আছে ড্রাইভারের দিকে। আর তখন ই ড্রাইভারের মোবাইলে একটা কল আসল।

মোবাইল টা বাম হাতে ধরে কথা বলতে বলতে এক হাতে স্টিয়ারিং চালাতে শুরু করল ড্রাইভার। আর তাতেই ট্রাক টা কেমন যেন হলে দুলে ঊঠল আশে পাশের গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে। একটা ছোট টেম্পো কে সাইড দিতে গিয়ে কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেলল সে।

একটু পর আবার সব ঠিক। কয়েকজন দাঁড়িয়ে ড্রাইভারকে কথা না বলে গারি চালাতে বল্লেও ড্রাইভার কারো কোথায় কান দিল না। যারা দাঁড়িয়েছিল তারা আস্তে আস্তে বসে গেল। কিন্তু সোহান বসল না। সে এখন ও তাকিয়ে আছে ড্রাইভারের দিকে। কেন যেন মনে হচ্ছে ওর আজ কিছু একটা হবে। খুব খারাপ একটা কিছু- কিন্তু কি হবে সেটা বুঝতে পারছেনা যেন।

এমন সময় ট্রাক টা একটা সরু নদীর ঊপরের একটা ছোট ব্রিজের ঊপর ঊঠল। এখনো ফোনে কথা বলছে চালক। এবং চোখের পলকে এদিক ওদিক টলতে টলতে হটাত ট্রাক কাত হয়ে গেল। একপাশ থেকে বাম পাশে যারা বসে ছিল তারা এক ঝটকায় এসে পড়ল ডান পাশে। এবং তাতেই ঊল্টে গেল ট্রাক- সোজা পড়তে শুরু করল নদীর মাঝে। দাঁড়িয়ে ছিল সোহান- হটাত তার মনে হল যে যেন অযুত বছর ধরে ঊল্টো হয়ে পড়ে চলেছে। সবাই যেন ঝুলছে তার মত নিচে পড়ে যাবার অপেক্ষায়। কিন্তু সময় শেষ হচ্ছেনা। চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করল সোহান।

হটাত চোখ থেকে কালো পরদা সরে গেল যেন সোহানের। চোখ মেলে ই দেখল নিচে কাদা- ওর প্রায় অর্ধেক কাদার মাঝে ঢুকে গেছে। হাত দিয়ে চাপ দিয়ে ঊঠবে সে ঊপায় ও নেই। যেন এক মৃত্যু কুপ। চাপ পাশে অন্ধকার- পুরো ট্রাক ঊল্টো খোপের মত করে পড়েছে- সবাই সেই খোপে বন্দী। শুধু একটা দিক খোলা। সোহান আর লিটন বসেছিল সামনের দিকে- কিন্তু এখন ওরা প্রায় পেছনে। সামনে র দিকের ছেলে গুলো বের হতে না পারলে ওরা কেউ বের হতে পারবেনা। কিন্তু এর মাঝে ট্রাক ডুবতে শুরু করেছে। আস্তে আস্তে দম বন্ধ হয়ে আসছে সোহানের। পাশে কোন রকমে ফিরে দেখল অনেক আগেই কাদার মাঝে ডুবে লিটন মারা গেছে। কোন নড়া চড়া নেই।

হাত দিয়ে প্রিয় বন্ধুকে বাচাবে সেই উপায় নেই।আস্তে আস্তে নিজে ডুবতে শুরু করল সোহান। পুকুরে সাঁতার কাটার ওস্তাদ সে- কিন্তু কখনো কাদার মাঝে এভাবে বেকায়দার পড়েনি। প্রথমে পা ডুবল- তারপর আস্তে আস্তে কোমর ডুবতে শুরু করেছে। ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে ফেলল সোহান- কিন্তু কিছু করার নাই। আশে পাশে সবার একই অবস্থা।

এখন সোহানের শুধু নাকটা ডুবে যাবার বাকি। কয়েক সেকেন্ড পর সেটাও ডুবে গেল- আস্তে আস্তে দম বন্ধ হয়ে আসছে সোহানের। মায়ের মুখটা খুব মনে পড়ছে ওর। এখন কিছুই করার নেই। কাদার মাঝে নড়াচড়া করার শক্তি ও প্রায় শেষ।অবশেষে প্রচন্ড ঘুম পেল তার- আস্তে আস্তে নিস্তেজ হবার আগে হয়ত আরেকবার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল ওর মা বাবার মুখ দুটো...

(সমাপ্ত)

▓▓▓▓▓▓একদিন এক নিঃস্বার্থ মিছিলে ▓▓▓▓▓▓

এরকম ঘটনা ঘটার কথাই ছিল
কোন এক মিছিলে লাঠি চলবে- টিয়ার গ্যাস চলবে
চলবে কাদুনে বোমা- সবাই কাঁদবে এবং কাঁদাবে
একদল আরেক দলের বিরুদ্ধে-
একজন শিঊলিকে টেনে হিচড়ে কাপড় খুলে ফেলেছে কেউ
বের হয়ে পড়েছে তার বক্ষদেশ-
যুদ্ধ- নাকি হাতাহাতি-
কেউ জানেনা-
কেউ একজন হেটে যায়- তাকেও খেতে হয় মোটা তেল মাখা
লাঠির বাড়ি
কিনবা টিয়ার গ্যাসের ঝাঁজ - কিনবা বড় শক্ত রাবার বুলেট।

বুকের কাছে থেতলে যায় আব্দুর রবের -হাটুর ঊপর কেউ মেরেছিল

থেমে গেছে রক্তগুলো- কালচে পুটলি কিনবা সোদা রক্তাভ
কেউ দেখেনা- কেউ পড়ি মড়ি করে ছুটে
কেউ চিতপাট হয়ে ছুটে
কেউ হাহুতাস করে ছুটে
কেউ চিৎকার করে ছুটে
তারপর রাস্তায় পড়ে থাকা রক্তের স্বাদ নিতে ছুটে আসে একদল কুকুর
তারা চেটেপুটে খায় রক্ত- তারা কুকুরের মত কিনবা কুকুরির মত
চেটে পুটে খায় রক্ত

একজন প্ল্যাকার্ড ছাপিয়েছিল- হাতে এখন ও বাঁশের ছাপ রয়ে গেছে

প্ল্যাকার্ড নেই-
কবেই তা ছিড়ে আগুনে দিয়েছে দাঙ্গা পুলিশ
কিনবা একদল রোবট পুলিশ
কেউ কেউ পাথর ছুড়েছিল পরম ভালবাসায়
ওরা বোঝেনি- ওরা তাতেই ক্ষেপে গিয়ে ছুড়েছিল রাবার বুলেট।

ফাঁকা রাস্তা- শুনশান নিরবতা-

রাত হলে ডাকতে ভুলে যেত ঝিঝি পোকারাও
একটা রক্তের স্তুপের পাশে একটা ইদুর
দাঁত বের করে হাসে
ওদের কান্ড দেখে হাসে- আর চেটে পুটে প্রায় জমে যাওয়া রক্ত খায়
ওটা আন্দোলন কারী দের রক্ত-
ওটা মিছিল কারীদের রক্ত
শাসকের রক্ত রাজপথে থাকেনা-
থাকে কোন এক নামী দামী ক্লিনিকে
ওদের দাম বড্ড বেশি-
ওরা যখন ক্ষমতার মাঝে থাকে -
তখন ওদের কোথায় মার খায় আন্দোলন কারীরা
আবার ক্ষমতা ছেড়ে গেলেই নিজেরা খায়-
তাই হয়ত ওরা বড় বড় হাসপাতালে ক্ষমতার রক্ত জমাট রাখে
ওরা ভয় পায়- ওরা ভীত কিনবা দূর দূর বক্ষে কাঁপতে থাকা শিশু
গদির লোভে ভুলে যায়- মাত্র ৫ বছরের স্বাদ নিয়ে
বেঁচে থাকতে হবে আরো পাচটা বছর
কে জানে- হয়ত আর ও পাঁচ বছর
তাই ওরা ভয় পায় মিছিলে
ওরা ভয় পায় শ্লোগানে-

একদল হটাত মিছিল করে উঠে-

দেশের সম্পদ বিদেশে দেয়া চলবে না চলবে না

কে শোনে কার কথা
শুধু কথা শুনে কনস্টেবল- তার ওয়াকিটকি বেজে ওঠে
তার ওয়াকিটকি কথা বলে ওঠে
তার মাথার ভেতর দৃশ্যপরিচালনা কারী কথা বলে উঠে
"ওদের মারো- ওদের মারো ওদের মারতে মারতে গাড়িতে তোল "

তারপর একদল রোবট পুলিশ মারতে থাকে

একদল দাঙ্গা পুলিশ মারতে থাকে
একদল মহিলা পুলিশ মারতে থাকে
আর মার খেতে খেতে ছত্রভংগ হয় একদল মিছিলের সন্ন্যাসী
কাদুনে বোমায় কেঁদে ওঠে একদল কিশোর কিশোরী

আজ তারা দেশের জন্য এসেছিল

আজ তারা দেশের স্বার্থে এসেছিল
কারো ক্ষমতার স্বার্থে আসেনি
কারো গদিতে বসতে দেবার জন্য আসেনি ।।

Saturday, July 9, 2011

██████████████████████████████ ███▓▓▓আমার মত কেঊ ভালবাসবে না▓▓▓███ ██████████████████████████

আমি বুকের খাঁজ থেকে চাপ চাপ রক্ত ছেকে বের করেছি জমাট ভালবাসা-
তোমার বুকের পাঁজরে একেছি আমার নাম- দিয়েছি ভালবাসায় পূর্ণ করে

তুমি কি বুঝেছিলে সে অমাবস্যায়- যখন পূর্ণিমার চাঁদ গিয়েছিল
মেঘের আড়ালে ঢেকে- আমার বুকের ভেতর থেকে বের হয়েছিল একরাশ প্রেম
কিনবা একটি ছন্দ হীন কবিতা- ছুঁতে কি পেরেছিল তোমায়?

আমি যখন তোমার হাত ছুঁয়েছি- কোমল স্বরে বলেছি মহাকাব্য কিনবা
ভালবাসায় অমর পংক্তিমালা- বুঝেছিলে কি কতটা ভালবাসি তোমাকে?
জানিনা- হয়ত ঠোঁটের উপর ঠোঁট রাখলেই ভালবাসা হয়না এখন-
হয়না মৈথুনের অমোঘ চাওয়াতেও-কিনবা অবিরত ভালবাসাতেও ।
ভালবেসে কেঊ হয়ত এখন আর ভেজেনা বরষার প্রথম বর্ষণে
কেঊ কাউকে এনে দেয়না রাশি রাশি নীল পদ্ম-
চিৎকার করে কেঊ বলে ওঠেনা-
ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি-
কিন্তু আমার এই তুচ্ছ প্রেম ও তুচ্ছ ছিল কি তোমার কাছে?
তুচ্ছ কোন কীট কিনবা কোন প্রানহীন বস্তুর মত? জানিনা
কিনবা জানতে চেয়ে আমি অপরাধ করি- কিনবা করেফেলি অজান্তে।

তবুও পূর্ণিমা এলে আমি তোমাকে নিয়ে জোছনা দেখি-
অমাবস্যায় দেখি চিলতে রোদের আলো-কিনবা খুব একা তারাগুলো
হাসলেই আমাকে জাপটে ধরে মহুয়া পাখির দল
পেছন ফিরে কাঁদলে আমাকে ঘীরে ধরে অমানীশ শঙ্কা- কিনবা ভালবাসা
জানি তুমি বুঝোনা- কিনবা বুঝতে চাইছোনা- কিনবা অন্য কোন কারনে
আমাকে তুমি কখনোই বুঝতে পারোনি-বুঝোনি অবুঝ কবিতা গুলো।
তবু আমি হতাশ হবোনা-হতাশ হবোনা ভালবাসা চেয়ে
জেনো আমার মত তোমাকে কেঊ ভালবাসা দেবেনা
জেনো আমার মত কেঊ দেবেনা এত প্রেম
তুমি যতদুরেই যাও- মরিচিকাই তোমার সাথি হবে।।

Thursday, July 7, 2011

▓▓▓▒░ বৃষ্টিকথন ৯ ░▒▓▓▓..একটি লিরিক হতে চলেছে

রিমঝিম রিমঝিম সুরে সুরে বৃষ্টি ঝড়ে পড়ছে
তুই কি জানিস সময়টাতে তোকে মনে পড়ছে
বৃষ্টি নাকি ঝরনাধারা আমার মনে নাচছে
জীবন নাকি মরন আমায় পেছন থেকে কে ডাকছে
জীবনেরই বাকি টুকু ছিড়তে এ মন চাইছে
পুরনো আর নতুন মিলে মাথায় যে জট পাকছে

আমি নাকি ছন্নছাড়া- কবিতারা ঊড়ছে

তোর চুলের মাঝে আমার কত স্বপ্ন যে আজ বুনছে
আমার নখে তোর হাতের ছোঁয়া আজ ও ভাসছে
রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি দেখে তোকে মনে পড়ছে।।

লিরিক- জানি একদিন

জানি একদিন খুব সকাল
যদি মনে পড়ে যায় আমাকে
রোজ বিকেল
চায়ের কাপে
তুমি গরম চিনি ঢেলে
খুঁজবে এদিক ওদিক
আমি সেই সময়
দেখব তোমার খোলা চুলের কবিতা
দেখব তোমার হাসির রেখার ছবিটা
তুমি শুধু খুঁজে যাবে ছায়ার মাঝে আমাকে

এলোমেলো কবিতা- সুরের মাঝে ছবিটা

খুঁজবে শুধু খুঁজবে তোমায়

জানি একদিন

খুব ভোরে
জগিং সেড়ে এসে
যখন দেখবে আমি ঘুম
তখন মেজাজ যাবে খিচড়ে
চিৎকার ঘুম ঘুম
ভালবাসা কুমকুম
আমি সেই ভাঁজে
দেখব তোমার মুখের মাঝে রাগটা
দেখব তোমার চুলগুলো সোজা সাপ্টা
তুমি হাসির মাঝে খুঁজবে আমাকে

জানি একদিন

কোন এক বিকেল
চায়ের কাপে মরা পিপড়ে গুলো
কাটবে সাতার
তুমি ডুব সাতার
আমি তোমার সাথে খেলবো
কানামাছির ভো ভো
তুমি ঘুর ঘুর ছুট ছুট
ভিজে হাওয়া ডালমুট
দেখব শাড়ির আঁচলে তোমাকে
দেখব অভিমানে চুড়মূড়- সারা ঘর হুড়মুড়
তুমি ভালবাসবে শুধু - আমাকে।।

এলোমেলো কবিতা- সুরের মাঝে ছবিটা

খুঁজবে শুধু খুঁজবে তোমায় ।।

Sunday, July 3, 2011

আমাদের দমিয়ে রাখতে তোমারা পারবেনা

অতঃপর একদল ছাত্র মিছিলে বের হয়
সকালে দাঁত মেজে কিনবা না মেজে
একদল মানুষ আরেক দলের বিরুদ্ধে মিছিলে বের হয়
এক দল প্ল্যাকার্ড লেখে
এক দল শ্লোগান লেখে
এক দল খানিক পড়েই মার খেতে হবে বলে মিছিলে বের হয়

পটভূমিকার নায়কেরা সেখানে ছিলোনা
সেখানে ছিল এক প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ- হয়ত ওরা মানুষ ছিল
কিন্তু ওদের গাড়ি ছিল
সেখানে ছিল টিয়ার গ্যাস
সেখানে ছিল রাবার বুলেট
সেখানে ছিল তেড়িবেড়ি গর্জন - খামোশ
সবাই চুপচাপ ছিল- কিন্তু
এই গর্জন শুনেই সবাই কিলবিল করে ঝাপিয়ে পড়ল
সবাই একে একে
সবাই সুরে সুরে
একই তানে- একই গানে - সেই রাজপথে
সেখানে টিয়ার গ্যাস এসেছে
সেখানে এসেছে রাবার বুলেট
কিন্তু কেঊ থামেনি।

আর তাই কেঊ একজন নিজের জীবন বাজী রেখে চলে গেল পুলিশের মাঝে
কেউ একজন সম্মান হারাবার ভয় না করে হাতাহাতিতে লিপ্ত
কেউ একজন শ্লোগান দিতে দিতে পুলিশের লাঠির আঘাতে ধরাশায়ী

কিন্তু কেউ দমে যাবেনা-
কেউ থেমে যাবে না
কেউ বলবে না পালাও
সবাই নিজের জীবন বাজি রেখে নেমে এসেছে রাস্তায়
সবাই নিজের সম্ভ্রম বাজি রেখে নেমে এসেছে রাস্তায়
সবাই সর্বস্ব হারানোর ভয় না পেয়ে নেমে এসেছে রাস্তায়

তাই একটা লাঠি থামাতে পারেনা সেই মিছিল
একটা কাদুনে বোমা কাঁদাতে পারেনা তাদের
বিক্ষোভে ওদের মাথায় আগুন থামাতে পারেনা কোন রাবার বুলেট
তাই ওপরের কারো নির্দেশে
একদল পুলিশের ধাওয়া খেতে হয় ওদের
ওরা পালায়-
কিন্তু পিছনে ফেলে রেখে যায় এক জ্বলন্ত আগুনে মশাল

তাই আজ মিছিল হবে-
আজ আগুন জ্বলবে
আজ দাঊদাঊ করে জ্বলবে বঙ্গোপসাগরের গ্যাস
আমি জানি সেই আগুনে পুড়ে মড়ার আগে
ছিড়ে ফেল সেই দলিল
যে দলিলে তোমরা দেশটাকে ভিখিরি বানিয়েছিলে
যে দলিলে তোমরা আমাদের ভিখিরি বানিয়েছিলে

মনে রেখো আমরা ভিখারি নই
আমরা বুনিয়াদি নই
আমরা বাঙ্গাল- আমরা বাঙ্গালি
আমরা খিদে পেটে চিৎকার করতে জানি
আমরা যুদ্ধ এলে রক্ত দিতে জানি
আমরা আঘাত এলে আঘাত দিতে জানি

আমাদের দমিয়ে রাখতে তোমারা পারবেনা।।

৩১ কাঠাল বাগান
- কোন এক অজানা ঘরে
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকে কোন এক নাম নাজানা মায়ের সন্তান-
মা বাবা অনেক কষ্ট করে লেখা পড়া করতে পাঠিয়েছিল ঢাকা
কিন্তু আজ তার সারা শরীর থেঁতলানো
কোন এক নাম নাজানা ছাত্রের গালে হাতে পাঁচ পাঁচ দশ আঙ্গুলের ছাপ
কেউ একজন তাদের মাঝেই আবার প্ল্যাকার্ড বানানোর কাজে মন দেয়
মনে মনে বলে ওঠে
প্রাণ দেব- কিন্তু দেশ দেবনা
প্রাণ দেব কিন্তু গ্যাস দেবনা

আর তখন দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে একদল দাঙ্গা পুলিশ-
হাতে লাঠি-যেন এটাই তাদের জন্ম থেকে অস্ত্র
মারতে থাকে সেই থাতলে যাওয়া শরীরে
মারতে থাকে সেই ছেলেটার মাথায়
মারতে থাকে সেই সব প্ল্যাকার্ড বানানো ছেলেটার
হয়ত মার থেমে যাবে
ওদের স্থান হবে জেলখানার কোন এক অন্ধ কুটুরিতে
কিন্তু এরকম ছেলে আছে শত শত
যারা শরীরে হাড় মাংস এক করে দিতে প্রস্তুত
যারা নিজের শরীরের তিন লিটার রক্ত দিতে প্রস্তুত
জেনো যতই দমন পীড়ন করো
আমাদের দমিয়ে রাখতে তোমারা পারবেনা ।।





কবিতাটা আরো লম্বা হতে পারে- তাই রিপোষ্টের আশা রাখি